প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – এখন তিনি সঠিকভাবে কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য, তা কেউ বলতে পারবেন না। বান্ধবীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং স্ত্রীর সঙ্গে গন্ডগোলের জেরে প্রায় অনেক দিন আগে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। তারপর বহু জলঘোলা পরিস্থিতি তৈরি হয়। বহু দড়ি টানাটানির সাক্ষী হয় বঙ্গ রাজনীতি। এদিকে বিজেপিতে গিয়েও ঠিকমত কাজ করে উঠতে পারিনি শোভন চট্টোপাধ্যায় বান্ধবী বৈশাখী বন্দোপাধ্যায় কে নিয়ে সেখানেও একশ্রেণীর আপত্তি তৈরি হয়েছিল। যার ফলে কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে দেখা যায় তাকে।

বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর বিজেপির বিরুদ্ধে তার মন্তব্য প্রকাশ্যে চলে আসে। যার ফলে তাকে সেভাবে বিজেপি নেতা বলতে নারাজ একাংশ। অন্যদিকে তিনি এখনও পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসেও নাম লেখাননি। তাই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত শোভন চট্টোপাধ্যায় এখন রাজনীতিতে কার্যত নিরপেক্ষ। কিন্তু সম্প্রতি তৃণমূলের ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং মদন মিত্রের পাশাপাশি নারদা কান্ডের জন্য গ্রেপ্তার করা হয় সেই শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও।

সেদিক থেকে তৃণমূলের সকলে মদন মিত্র, ফিরহাদ হাকিম এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মুক্তির দাবিতে লড়াই করলেও, শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে অনেকেরই মাথাব্যথা নেই। তবে অনেকে আবার বলছেন, তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের দলের তিন নেতা মন্ত্রীর পাশাপাশি তাদের দলের প্রাক্তন সহকর্মী শোভন চট্টোপাধ্যায়কে মুক্তি দেওয়ার জন্য রীতিমত লড়াই করছেন। যার ফলে একাংশ ধরে নিয়েছেন, যদি সমস্ত কিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়, তাহলে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের তৃণমূলের ফেরা কিন্তু সময়ের অপেক্ষা।

তবে মঙ্গলবার প্রেসিডেন্সি জেলে দিনভর মদন মিত্র, সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে অনেকে দেখা করলেও, কার্যত শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পাশের ঘর মাড়াতে দেখা গেল না কাউকে। বলা বাহুল্য, প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন সুব্রত মুখোপাধ্যায় মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়। যার জেরে এসএসকেএম হাসপাতালে উডবার্ন ওয়ার্ডের ভিআইপি করিডোরে রাখা হয় এই তিন ব্যক্তিকে। তবে দিনভর সেখানে মদন মিত্র এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে নানা মানুষের কথোপকথন চললেও, কার্যত একাই পড়ে রইলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়।

জানা যায়, এদিন মদন মিত্রের সঙ্গে তার বেশ কিছু অনুগামী এবং পরিবারের সদস্যরা দেখা করতে আসেন। যেখানে অক্সিজেন নিতে নিতে সকলের সঙ্গে কথা বলেন তৃণমূল কংগ্রেসের এই বিধায়ক। একইভাবে পাশের ঘরে থাকা পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বেশিরভাগ সময়ের সঙ্গী ছিল তার পরিবার এবং টিভির সিনেমা। সোমবার গ্রেফতার হওয়ার পর আর সেভাবে খাওয়া-দাওয়া করেননি তিনি।

তাই বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ শরীরের নানা প্রতিবন্ধকতা থাকার কারণে সহধর্মিনীর আনা বাড়ির রান্না করা খাবার খেয়ে মঙ্গলবার দিন কাটিয়েছেন। আর হতাশা কাটাতে টিভিতে পুরনো সিনেমা দেখতে দেখা গিয়েছে সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। তবে এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে এই দুই হেভিওয়েটের সাথে দেখা করবার জন্য দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে পরিবার-পরিজন থাকলেও, কার্যত একা তৃণমূলের প্রাক্তন নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়।

অনেকে বলছেন, শোভন চট্টোপাধ্যায় তৃণমূলের দীর্ঘদিনের নেতা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুর্দিনের সঙ্গী। কিন্তু তিনি বিজেপিতে যাওয়ার পর খুব একটা সুখকর পরিস্থিতি না হলেও, তার সঙ্গে দেখা করে বিতর্ক আর বাড়িয়ে দিতে চাইছেন না তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। সেই কারণে মদন মিত্র থেকে শুরু করে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৃণমূলের অজস্র নেতাকর্মী দেখা করতে আসলেও পাশের ঘরে থাকা দলের প্রাক্তন নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে একবারও দেখা করতে দেখা গেল না কাউকে।

একাংশের দাবি, প্রথম থেকে ঠিকঠাক না চললে এমনটাই হয়। রাজনীতিতে এখন তিনি একা। বাস্তব জীবনেও তিনি যে একা, তা এদিনের ঘটনা থেকেই পরিষ্কার হয়ে গেল। একসময় শুধুমাত্র বান্ধবীর জন্য সমস্ত কিছুকে ত্যাগ করে নিজের মত করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু এখন তিনি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন, জীবনে একা থাকার মত কঠিন বাস্তব।

তিনি যদি তৃণমূল কংগ্রেসে থাকতেন, তাহলে তার ঘরে হয়ত বা তিল ধারনের জায়গা থাকত না। কিন্তু না তৃণমূল না বিজেপি, কোনো দল বা পরিবারের কোনো সদস্য সেভাবে দেখা করতে আসছেন না শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। যার ফলে এখন কার্যত 106 নম্বর কেবিনে থাকা শোভন চট্টোপাধ্যায় নীরবে নিভৃতেই রয়েছেন। যা তার কাছে খুব একটা স্বস্তির নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।