এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > ৬ থেকে ১২ হাজার! HRA নিয়ে অর্থমন্ত্রীর ‘জাগলারি’ ঘোষণায় চরম বিপাকে সরকারি কর্মীরা!

৬ থেকে ১২ হাজার! HRA নিয়ে অর্থমন্ত্রীর ‘জাগলারি’ ঘোষণায় চরম বিপাকে সরকারি কর্মীরা!

প্রিয় বন্ধু মিডিয়া এক্সক্লুসিভ – অভীক বসু (নামটি কাল্পনিক) বছর ৮ হল সরকারি চাকরি পেয়েছেন। প্রথম পোস্টিংটাই ছিল রাইটার্স বিল্ডিঙে। নিম্ন-মধ্যবর্তী পরিবারের সন্তান, বাবা-মা অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করিয়েছেন। তাই সরকারি চাকরি জুটতেই হাসি ফুটেছিল গোটা পরিবারের মুখে। কিন্তু পুরুলিয়ার সুদূর গ্রাম থেকে রোজরোজ কলকাতায় এসে চাকরি করা সম্ভব ছিল না। তাই বাবা-মাকে নিয়ে একটু দূরে গড়িয়ার দিকেই মাথা গোঁজার একচিলতে একটু বাসা জোগাড় করে নেয় অভীক।

ঘরটা খুব একটা ভালো নয় – একটু স্যাঁতসেঁতে মত, আলো-হাওয়াও খুব একটা ভালো চলে না। কিন্তু বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতায় একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই পাওয়া গেছে – এই ঢের! তার উপরে, বাড়িভাড়া বাবদ সরকার দেয় মাসে ১,৩২৬ টাকা – আর বাড়ি ভাড়া ১,৫০০ টাকা। এই ভাড়ায় শহর কলকাতায় এর থেকে বেশি আর কি পাওয়া যাবে? এই বলে মনকে স্বান্তনা দিয়ে কাটিয়ে দেয় অভীক। কিন্তু, সেই সুখ বেশিদিন সইল না! অফিস রাইটার্স থেকে গঙ্গা পেরিয়ে নবান্নে গেল – ফলে যাতায়াতের কষ্ট আরেকটু বাড়ল।

তবুও, বাসা-বদলের ভরসা পেল না অভীক! এই টাকায় ঘর খুঁজে পেতে কালঘাম ছুটে গেছে – তাই একপ্রকার চোখ-কান বুজে কাটিয়ে দেয়। তবে, গত ৮ বছরে অভীকের জীবনে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে – বাবা-মা বিয়ে দিয়েছেন, ঘরে একটি ফুটফুটে কন্যা-সন্তানও এসেছে। বাবা-মা ও নতুন-বৌকে নিয়ে কোনওরকমে ওই স্যাঁতসেঁতে ঘরে কাটিয়ে দেওয়া গেলেও – ছোট মেয়েটা খুবই ভুগছে জ্বর-সর্দি-কাশিতে। ডাক্তার বলে দিয়েছেন – একটু আলো-বাতাস যুক্ত বাড়িতে না থাকলে – সহজে সারবে না।

কিন্তু, ভরসা পেত না অভীক – একে ডিএর দেখা নেই, পে-কমিশনও চলছে তো চলছেই! কবে ঘোষণা হবে, কবে হাতে টাকা পাবে – তা বোধহয় ঈশ্বরই জানেন। এর মধ্যেই, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন নতুন পে-কমিশন। বেশ খুশি হয়ে উঠল অভীক। কেননা নতুন পে-কমিশন মানেই, নতুন বেসিক আর তারমানেই বাড়ি ভাড়া ভাতা কিছুটা বাড়বে। এরপর অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করলেন বর্তমান বেসিকের ২.৮ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর দিচ্ছে সরকার। মনে মনে হিসেবে শুরু করল অভীক।

এমনিতে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৫৭ – তার উপরে ৩ টি ইনক্রিমেন্ট ধরে ২.৮ হচ্ছে। অর্থাৎ, বেসিক বাড়বে ২.৮ গুন, তার ১২% যদি বাড়ি ভাড়া ভাতা পাওয়া যায়, তাহলে তা দাঁড়াবে হাজার ৩-এর কাছাকাছি। এক পরিচিত আত্মীয় আগেই জানিয়ে রেখেছিল, হাওড়ায় একটা ভালো বাড়ি আছে। আলো-হাওয়াও খেলে ভালো – ভাড়া মাস গেলে আড়াই হাজার টাকা। আশায় বুক বেঁধে সেই আত্মীয়কে নিয়ে অভীক গেল সেই বাড়ি দেখতে – দেখে বেশ পছন্দও হল। আর দেরি করতে চায় না – আজই বুক করে যাবে এই বাড়ি, পরের মাসেই পুরো পরিবার নিয়ে চলে আসবে এখানে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

কিন্তু, এরপরেই বড়সড় ধাক্কা অভীকের! বাড়ির মালিকের দাবি মাসে ৪ হাজার টাকা ভাড়া লাগবে! সেকি – কথা ছিল তো আড়াই হাজারের! আত্মীয়ের দিকে তাকায় অভীক! চমকে দিয়ে বাড়ির মালিকের জবাব, আগে ৬ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ভাতা পাচ্ছিলেন, এখন পাবেন ১২ হাজার করে। গতকালই, তো অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করলেন। আমাকে ৪ হাজার টাকা ভাড়া দিলেও তো ৮ হাজার টাকা থাকছে পকেটে! মাইনে বাড়লে সব নিজের পকেটে রাখলেই হবে? আমাদের কথাও তো একটু ভাবতে হবে!

এই অভীক বসুর নাম কাল্পনিক হলেও, এই অভিজ্ঞতা ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে বহু সরকারি কর্মচারীর। আর এর পিছনে তাঁরা ‘দায়ী’ করছেন সেদিন অর্থমন্ত্রীর করা কথার ‘জাগলারিকেই’। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক সরকারি কর্মচারীরই বক্তব্য, সেদিন অর্থমন্ত্রী যেভাবে ঘোষণা করলেন, তাতে সাধারণ মানুষের মনে হতেই পারে – সরকার আমাদের আগে বাড়ি ভাড়া ভাতা দিত ৬ হাজার টাকা। আর এখন সেটা একলাফে বেড়ে দাঁড়াল ১২ হাজার টাকা। আর তারসাথে আগে যা মাইনে পেতাম এখন থেকে তার প্রায় তিনগুন (২.৮ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ঘোষণার জন্য) বেশি মাইনে হাতে পাব!

তাঁদের আরও বক্তব্য, ফলে, শুধু বাড়ির মালিকই নন, অনেকেই ভাবতে শুরু করেছেন একটা বিশাল টাকা হঠাৎ করে হাতে পাচ্ছি। তবুও, শুধু শুধু সরকারকে বদনাম করতে বা বিব্রত করতে ডিএ দাও, কেন্দ্রীয় হারে দাও করছি! অর্থমন্ত্রী যেভাবে কথার ‘জাগলারি’ করলেন – তারফলে, এখন চূড়ান্ত বিপাকে আমরা। কার্যত করুন আর্তনাদ বেরিয়ে আসে তাঁদের গলা থেকে? তাহলে, এই ৬ থেকে ১২ হাজার বাড়ি ভাড়া ভাতার কথা কি ‘মিথ্যে’? আমাদের প্রশ্নের উত্তরে, যা জানা গেল – এটি ‘মিথ্যে’ নয় আবার সঠিকও নয়! তাহলে ঠিক কি?

সরকারি কর্মচারীদের মতে, সাধারণত কর্মীরা ৯০০ টাকা থেকে শুরু করে আড়াই-তিন হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ভাতা পান। ৬,০০০ টাকা বা তার বেশি বাড়ি ভাড়া ভাতা পান খুব সিনিয়র অফিসাররা – যাঁরা পিবি-৪ বা পিবি-৫ পান। সোজা কথায়, যাঁদের বেসিক ৪০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেছে তাঁরাই পান। সেই ক্যাপটাই সরকার বাড়িয়ে ৬ থেকে ১২ হাজার টাকা করল। এছাড়াও আরেকটি নিয়ম আছে যেখানে এই ক্যাপটা কাজ করে। স্বামী-স্ত্রী যদি দুজনেই সরকারি কর্মচারী হন, এবং দুজনের মিলিত বাড়ি ভাড়া ভাতা ৬,০০০ টাকার বেশি হয়, তাহলে তাঁরা মিলিত ভাবে ওটা ৬,০০০ টাকা পেতেন।

রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের কথায়, কিন্তু এই ক্যাপটা রাজ্য সাকারকে বাড়াতেই হত। কেননা বাড়ি ভাড়া ভাতা ঠিক হয় বেসিকের উপরে। পুরোনো স্কেলে আমরা বেসিক+ডিএ পাচ্ছিলাম। এখানে দুটোকে মার্জ করে ১৪.২% ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হচ্ছে, ফলে মূল বেসিকটা বেড়ে গেলেও ওই ১২৫% ডিএ তার মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। আর, তাই বাড়ি ভাড়া ভাতার ক্যাপ বাড়ছে। কিন্তু, এরফলে, যাঁরা ওই ৬,০০০-এর বেশি বাড়ি ভাড়া ভাতা পাচ্ছিলেন, তাঁদের সংখ্যার খুব একটা হেরফের হল না।

তাঁদের মতে, এখনও সেই পিবি-৪ স্কেল পাওয়া সিনিয়ররা ও পিবি-৫ স্কেল প্রাপ্তরাই সেই সুবিধা পাবেন। আর পাবেন স্বামী-স্ত্রী একসাথে সরকারি কাজ করেন, এমন মানুষেরাই। কিন্তু, সেই দম্পতিদেরও দুজনকেই পিবি-৩ স্কেল পাওয়া সিনিয়র কর্মচারী হতে হবে। যাঁরা পিবি-১ বা পিবি-২ স্কেল পান, তাঁরা কোনোদিন ৬,০০০ টাকা বাড়ি ভাড়া ভাতা পাবেন না। কিন্তু, সবমিলিয়ে অর্থমন্ত্রীর কথার ‘জাগলারিতে’ এমন অবস্থা যে, বাড়ির মালিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সরকারি কর্মচারীদের সবাই ভাবছেন আমাদের মাইনে প্রায় তিন গুন বেড়ে গেল বা বাড়ি ভাড়া ভাতা ৬ থেকে বেড়ে ১২ হাজার টাকা হয়ে গেল! সরকারের অবিলম্বে উচিত বিবৃতি দিয়ে সাধারণ মানুষের এই ভুল দূর করা।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!