গুরুদেব সহায় – ( লাভ স্টোরি ) – কলমে-অপরাজিতা -পর্ব -৯ অন্যান্য অপরাজিতা গল্পে-আড্ডায় February 15, 2020 ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো রাজর্ষি। এটা কি শুনলো ও ? শ্রীপর্ণার বাবা জেনে গেছে ? কি করে? তাছাড়া ওদের তো পছন্দ ছিলো রাজর্ষিকে। তাহলে ,কি হলো ?বিয়ের দিন তো এখনো ঠিক হয়নি। ইচ্ছা করলেই ভেঙে দেওয়া যায়। তবে ? আচ্ছা সেই জন্যই শ্রীপর্ণার ফোন পাচ্ছে না রাজর্ষি। এবার কি করবে ? সারারাত অনেক ভেবেছে , না হাল বের করতে পারে নি। ওদিকে শ্রীপর্ণাও অনেক ভেবেছে। রাজর্ষির নাম্বার তার তেমন মনে নেই। আবছা আবছা মনে পড়ছে। চেষ্টা করবে? নতুন করে তাতে নাম্বার বসিয়ে ? কিন্তু ফোন নেই যে। ফেইসবুক ও যোগাযোগ করবে কি করে? বোনের ফোনটাও নিয়ে নিয়েছে বাবা। মায়ের ফোন সাদামাটা। তাতে হবে না। পিসি ও খারাপ হয়ে আছে সরানো হয়নি। কি করবে। বাইরে বেরোতেও দেবে না বললো বাবা। আচ্ছা রাজর্ষির ব্যাংকের নাম্বার আছে তো। কাল মায়ের ফোনটা যা হোক করে নিয়ে ওখানে ফোন করতে হবে।রাজর্সির নাম্বার নেবে শ্রীপর্ণা। কিন্তু কাল তো বাবা মায়ের ফের গুরুদেবের আশ্রমে যাওয়ার কথা। যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তার সাথে শ্রীপর্ণার জীবন কেমন কাটবে সে সব গোনা গাঁথা করতে দেবে, কি ন্যাকা ন্যাকা।আর গুরুদেবটাও তেমন বেশ তো বেড়াচ্ছিল বাইরে বাইরে হঠাৎ করে এখনিই ফিরে আসার কি হলো , নাহলে তো বাবা , মা আরো কদিন পর বিয়ে ঠিক করতো গুরুদেবকে জানিয়ে। গুরুদেব যা বলবে তাই হবে অবশ্য একটা আশা যদি গুরুদেব বলে মিলছে না এখানে বিয়ে হলে খারাপ হবে। বাবা মা দুজনেই তো খুব মানে গুরুদেবকে , যদি বিয়েটা ভেস্তে যায়। ভালো লাগছে না কিছু। রাজর্ষির জন্যও চিন্তা হচ্ছে খুব। ওর মা কেন এমন? কিসে খারাপ শ্রীপর্ণা। কি চান মহিলা ? রাজর্ষি বলেছে বাড়ি থেকে না মানলে লুকিয়ে বিয়ে করবে। মা মানলেও , বাবা মানবে না। এই বাড়ি থেকে চিরকালের মতো সম্পর্ক ছাড়তে হবে। কি করবে শ্রীপর্ণা। নানা উৎকণ্ঠায় রাতটা কেটেছে। ————————————————————————————————————————————————– সকালে মা ডাকলো, খাবার দিতে এলো বললো ওরা বেরোবে একটু পরে গুরুদেবের আশ্রমে যাবে। মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো শ্রীপর্ণা। শ্রীপর্ণা – মা – আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না। তুমি এই বিয়েটা ভেঙে দাও। আমি মনে যাবো মা মা – আমি কি করবো বল, তোর বাবা কি আমার কথা শুনবে ? শ্রীপর্ণা – আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না। তুমি যা হোক কিছু করো। বাবা বাইরে থেকে ডাক দিলো। আস্তে আস্তে শ্রীপর্ণা বাইরে গেলো। – শোনো আমরা গুরুদেবের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি ,বাইরে থেকে দরজায় তালা দিয়ে যাবো। মনে করো না যে বেরোতে পারবে। আর শোনো ওই ছেলেকে যত তাড়াতড়ি ভুলে যাবে ততই তোমার মঙ্গল। গুরুদেব যদি বলেনও এই বিয়ে হলে খারাপ হবে এখানে বিয়ে ভেঙে দেব কিন্তু আমি কোনো মতেই ওই ছেলের সাথে বিয়ে দেব না। অন্য ছেলে দেখা হবে। ততদিন তুমি বাড়িতেই থাকবে। বিয়ের পর যা চাকরি করার ,পড়ার তাই করবে। বাবা , মা বাড়ি থাকবে না, বোন থাকবে। কিন্তু ফোন কোথায় পাবে ? বাবা ফোনভেতরে রেখে ঘরে তালা দিয়ে দিয়েছে। ছাতে গেলো শ্রীপর্ণা। রুমি জামাকাপড় মেলছে। ওর ফোনটা চাইবে ? বন্ধু হয়,কিন্তু অনেক প্রশ্ন করবে, কি উত্তর দেবে ও। কি করবে এবার। নিচে দেখলো পৃথাদি আসছে। ওদের বাড়িতেই আসছে সম্ভবত। ছুটলো নিচে যদি তালা দেখে চলে যায়। পৃথাদি ওর দিদির মতো, দিদির থেকেও বেশি। ছুটে গিয়ে দরজা খুললো। ওদের পাড়াতেই থাকে, একেবারে গলির মুখে। মাঝে মধ্যে আসে ওদের বাড়িতে। পৃথা – একিরে তালা দেখে যে আমি চলে যাচ্ছিলাম। খোল। শ্রীপর্ণা সব বললো। সাথেই তোমার ফোনটা একবার দেবে? রাজর্ষিকে ফোন করবো। পৃথা – এই নে। বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো পৃথা,ফোন নিয়ে ভেতরে চলে গেলো শ্রীপর্ণা। বোন এসে কথা বলছে। বোন এসব বলবে না বাবা মাকে। ব্যাংকে ফোন করলো শ্রীপর্ণা। রাজর্ষিকে চাইলো। এখনো আসেনি সে। রাজর্ষির নাম্বারটা নিলো। কিন্তু কথা হলো না রাজর্ষির সাথে। ফোনটা বিষণ্ণ মুখে ফেরত দিলো। কাঁদছে শ্রীপর্ণা। পৃথা – কি রে কথা হলো। মাথা নেড়ে না বললো শ্রীপর্ণা। আচ্ছা আমাকে নাম্বারটা দে , আমি কথা বলছি। পৃথাদিকে রাজর্ষির নাম্বারটা দিলো শ্রীপর্ণা। চলে গেলো শ্রীপর্ণা। কিছুক্ষন পর ফের ফিরে এলো একটা ফোন নিয়ে শ্রীপর্ণাকে দিয়ে বললো লুকিয়ে রাখ। আমার আগের ফোনটা। এতে কথা বল। শ্রীপর্ণার সাথে কথা হলো এবার রাজর্ষির। সব বলেছে ও কেন বাবা মানছে না। রাজর্ষির মা ফোন করে যা তা বলছে ওর বাবাকে। বলেছে ওরা নাকি রাজর্ষিদের সব সম্পত্তি হাতানোর চেষ্টা করছে। আরো যা যা বলেছে রাজর্ষির মা সব বলেছে। মাথায় আগুন জ্বলছে রাজর্ষির। শোনো। আমি ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের সাথে কথা বলছি। যত তাড়াতাড়ি হয় আমরা বিয়ে করছি। আর কিছু করার নেই। তোমার এই নাম্বারটাতেই ফোন করবো তো এবার থেকে ? শ্রীপর্ণা – হুম। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - বাড়ি গেলো রাজর্ষি। আজ প্রিয়াঙ্কাদি, অনুপমদাও এসেছে ,পিসি তো আছেই। প্রিয়াঙ্কা – ভাই দেখ এই মেয়েটাকে ,কি সুন্দর দেখতে। আমার খুব পছন্দ। কাল আমি তুই আর অনুপমা যাচ্ছি দেখতে। অনুপম – আমি যাবো না , আমাকে এর মধ্যে জড়িয়ে না ,বার বার বলছি। রাজর্ষি – শ্রীপর্ণাদের বাড়িতে ফোন করে কেন এসব বলেছিলে মা ? মা এবার চমকে গেলো। মঞ্জু মাঠে নামলো। কি বলেছে? ওর বাবা যা খুশি বললো ,তোর মা কি চুপ করে শুনবে নাকি ? রাজর্ষি – ওর বাবা বলেছে নাকি মা শুরু করেছে ? মঞ্জু – ওরে বাবা রে কি মিথ্যা কথা বলে লাগানি ভাঙানি করে গো। তোর কানে এর মধ্যে এইসব কথাও ঢুকে গেছে। মা কিন্তু চুপ। রাজর্ষি – মা আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি। মা – বেশ করেছি বলেছি। কেন বলবো না। অসব্য লোকজন সব। মেয়েকে লেলিয়ে দিচ্ছে। রাজর্ষি – ঠিক আছে তুমি শ্রীপর্ণাকে মানবে না তো? মা – না। রাজর্ষি – ঠিক আছে। আমি শ্রীপর্ণাকে বিয়ে করে আলাদা বাড়ি ভাড়া করে থাকবো বলে চলে গেলো ঘরে। মঞ্জু – বৌদি তুমিও ,বলতে গেলে কেন? আমি তো সামলাচ্ছিলাম। প্রিয়াঙ্কা – অনুপম তুমি দেখো একবার, আর শোনো ঘি ঢেলে না , বোঝাও যে ওই মেয়ে ভালো নয়। যাও তোমাকে মানে তোমার কথা শুনবে। অনুপম দরজা নক করলো। খুললো রাজর্ষি। ভেতরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে অনুপম বললো – এই তো, এই রূপটাই তো এতদিন দেখতে চাইছিলাম , তা নয় মা যা বলবে তাতেই হ্যাঁ, তাতেই না। তুমি শ্রীপর্ণাকে বিয়ে করো আমি ফুল সাপোর্ট দেব। তবে হ্যাঁ সবার সামনে দেখবো আমি মানছি না কেননা ওরা গোলমাল পাকাবেই , যদি জানে আমি তোমেরসঙ্গে আছি তাহলে কোনো মতেই আমাকে বলবে না কি করছে। বুঝলে। রাজর্ষি – থ্যাংক ইউ অনুপমদা। মা কেন এমন করছে বলো ? অনুপম – তুমি হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছ বলে , তাছাড়া দেখছো না কেমন সারাদিন পিন হচ্ছে। বাইরে এলো অনুপম। বললো বললাম আপাতত কিছু শুনতে চাইছে না। একটু সময় দিন দেখছি। অনিমা – টাইম কি দেব? ও তো বলছে বিয়ে করবে ? অনুপম – মুখে বলছে রেগে। বিয়ে করা কি চারটিখানি কথা নাকি ?একটু সময় দিন। আমি দেখছি বলছি তো। শ্রীপর্ণার বাবা , মা ফিরে এসেছেন। তারা কিছু জানেন না। বাবা এসে বলেছে গুরুদেব বলেছেন কদিন সময় চাই গুনে দেখার জন্য। তাই এই রবিবার দিন ধরতে যাওয়া ক্যানসেল। আগে গুরুদেব বলুন সব ঠিক আছে তার পর পরের সপ্তাহে দিন ধরতে যাবেন। রাত্রে ঘর বন্ধ করে অনেকে কথা বলেছে শ্রীপর্ণা। গুরুদেবের কথা। যা হয়েছে সারাদিন। অনেক কথা। ওদিকে রাজর্ষিও তার সব কথা বলছে। বলেছে অনুপমদা খেলছে এবার। আর কোনো চিন্তা নেই রাজর্ষির। শ্রীপর্ণাকে বিয়ে করাটা কেউ আটকাতে পারবে না। শুধু শ্রীপর্ণাকে সাহস জোগাতে হবে। বাড়ি ছাড়তে হবে রাজর্ষিকে ভরসা করে। শ্রীপর্ণা কেঁদেছে। বলেছে অন্য কিছু সম্ভব নয়? যদি বাবা ,আর রাজর্ষির মাকে রাজি করানো যায়। যদি অনুপমদা পারে কিছু করতে। রাজর্ষি না করে দিয়েছে। তবু বার বার শ্রীপর্ণার অনুরোধে অনুপমদার সাথে কথা বলবে বলেছে। আপনার মতামত জানান -