এখন পড়ছেন
হোম > রাজনীতি > কংগ্রেস > একুশের বিধানসভা – শুধু বাম-কং নয়, নির্বাচনের ফলাফল নির্ভর করবে আরও দুই রাজনৈতিক দলের উপর

একুশের বিধানসভা – শুধু বাম-কং নয়, নির্বাচনের ফলাফল নির্ভর করবে আরও দুই রাজনৈতিক দলের উপর


প্রিয় বন্ধু মিডিয়া এক্সক্লুসিভ – ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে ধিমে তালে বাজনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। আর সম্প্রতি তা করোনা, আমপান আর বিজেপির রাজ্য কমিটির ঘোষণার মধ্যে দিয়ে উচ্চগ্রামে বাজতে শুরু করে দিয়েছে। বিশেষ করে নতুন রাজ্য কমিটি ঘোষণা হতেই, যেভাবে বিজেপি নেতারা গোটা রাজ্যে ছুটে বেড়াচ্ছেন – তাতে আর ঘরে বসে থাকা যাবে না বলে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ত্বও। আর তাতেই স্পষ্ট, বিভিন্ন আঙ্গিকে বাংলায় যে কিছু রাজনৈতিক গতিবিধি হতে চলেছে – তা বিধানসভা নির্বাচন কেন্দ্রিকই হবে।

এই পরিস্থিতিতে, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন ২০২১-এর মূল লড়াইটা হবে তৃণমূল কংগ্রেস বনাম ভারতীয় জনতা পার্টির মধ্যেই। এই লড়াইয়ে যতই জোট করুক, অনেক পিছনে থাকবে বামফ্রন্ট-কংগ্রেস। আমরা এর আগে গত নভেম্বর মাসে যে সমীক্ষা করেছিলাম, সেখানে উঠে এসেছিল ২০২১-এ বাংলায় কংগ্রেস ১৪ টি ও বামফ্রন্ট ৭ টি মত আসন পেতে পারে। সম্প্রতি এবিপি আনন্দ-সিএনএক্স একটি সমীক্ষা করেছে। সেখানেও বাম-কং জোটকে ২২-৩০ টি আসন দেওয়া হয়েছে। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, আসন সংখ্যা সেভাবে না হলেও – এবারের নির্বাচনে বিশেষ ভূমিকা নিতে পারে এই জোট।

লোকসভা নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে এই জোটের মিলিত ভোট ১২%-এর কাছাকাছি। আর বাংলায় যে কোন আসন জিততে গেলে – ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে অন্তত ৩৫% এবং দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে অন্তত ৪৩% ভোট পেতেই হবে। অর্থাৎ এই জোটকে একলাফে ভোট বাড়াতে হবে অন্তত ২২-৩০%-এর মত। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যা কার্যত অসম্ভব। কিন্তু এই জোট যদি ১২% থেকে নিজেদের ভোট বাড়িয়ে অন্তত ১৭-১৮%-এ নিয়ে যেতে পারে তাহলে তা বিজেপির ভোট কেটে হাসি চওড়া করবে তৃণমূলের। অন্যদিকে, এই জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান হয়ে, যদি আরও ৩-৪% ভোট বেরিয়ে যায়, তাহলে তা সরাসরি সুবিধা দেবে বিজেপির।

আর বাংলার এই রাজনৈতিক সমীকরণের মাঝে এবার আরও বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে চলেছে আরও দুই রাজনৈতিক শক্তি – শিবসেনা ও আইমিম। বাংলার ইতিহাসে ২০২১-এই সম্ভবত প্রথমবারের জন্য ধর্মের ভিত্তিতে ভোট ভাগ হতে পারে বলে জল্পনা। লোকসভা নির্বাচনেই ইঙ্গিত ছিল বাংলায় সংখ্যালঘু ভোট শাসকদলের অক্সিজেন এবং সেই ক্ষোভে হিন্দুভোট ক্রমশ দানা বাঁধছে বিজেপির দিকে। আর বিধানসভার আগে যখন মনে করা হচ্ছিল এই হিন্দু ভোট আরও বেশি করে তৃণমূল বিরোধী হয়ে বিজেপির বাক্সে পড়বে, ঠিক তখনই বাংলায় উল্কার গতিতে উত্থান হতে শুরু করেছে শিবসেনা।

বাল ঠাকরেকে এখনও হিন্দুদের স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে মসিহা ধরা হয়। তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর আদর্শ এগিয়ে নিয়ে চলেছেন পুত্র উদ্ধব ও পপৌত্র আদিত্য। ইতিমধ্যেই শিবসৈনিকদের স্বপ্ন পূরণ করে উদ্ধব ঠাকরে বসেছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে। আর তারপরেই আঞ্চলিক গন্ডির বাইরে বেরিয়ে জাতীয় স্তরের মর্যাদা খুঁজতে চাইছে শিবসেনা। আর তাই তাঁদের প্রাথমিক লক্ষ্য বাংলা। কেননা, বাংলায় ‘সংখ্যালঘু তোষন’ নিয়ে যে সরকারি দল বিরোধী হাওয়া উঠেছে, তাতে হিন্দুদের ভোট নতুন তরী খুঁজছে। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ভালো ফলাফল করলেও, ইতিমধ্যেই বিজেপিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেছে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

ফলে, অনেকেই একটা বিকল্প পথ খুঁজছেন – আর সেই জায়গাটাই ভরাট করতে চাইছে শিবসেনা। এদিকে, মহারাষ্ট্রে সরকার গড়লেও সেখানে বিজেপির চাপ নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে শিবসেনাকে। তাই বাংলায় সরকার গড়তে মরিয়া বিজেপিকে চাপে রাখা যাবে, যদি এখানকার হিন্দু ভোটে বড়সড় থাবা বসানো যায়। আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে চুপিসারে সংগঠন বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে শিবসেনা। ইতিমধ্যেই স্বচ্ছ ভাবমূর্তির বিজেপি ও তৃণমূলের বহু প্রভাবশালী নেতার কাছেই দলে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ গেছে। আর নতুন একটা বিকল্প পেয়ে তাঁরাও বেশ উৎসাহিত বলেই সূত্রের খবর।

এদিকে বিজেপির কাছে নতুন শঙ্কা শিবসেনা হলে, তৃণমূলের কাছে হয়ে উঠতে পারে আইমিম। বাংলার নির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোট একটা বড়সড় ফ্যাক্টর। প্রায় ২৭% ভোটের পাশাপাশি অন্তত ৮০-৯০ তা আসন এমন আছে, যেখানে সংখ্যালঘু ভোটাররাই শেষ কথা বলেন। আর তাই তো লোকসভা নির্বাচনের পর মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভের সঙ্গেই বলে উঠেছিলেন – হ্যাঁ, আমি সংখ্যালঘু তোষন করি, ১০০ বার করব। যে গরু দুধ দেয়, তার লাথি খাওয়া উচিত। কিন্তু, সংখ্যালঘু সমাজের একটা বড় অংশের অভিযোগ, বাংলার সংখ্যালঘু সমাজ নাকি তাঁদের প্রাপ্য মর্যাদা পান নি।

আর এই ক্ষোভের আঁচ পেয়েই বর্তমানে গোটা দেশের সংখ্যালঘু সমাজের কার্যত মসিহা হয়ে ওঠা আসাদউদ্দিন ওয়েইসি এবার বাংলা নিয়ে বিশেষ করে ভাবনা চিন্তা শুরু করেছেন। বাংলার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলাগুলিতে ইতিমধ্যেই নিজেদের সংগঠন বাড়াতে শুরু করেছে আইমিম। উত্তর দিনাজপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদীয়া ও হাওড়ার একাংশে যেভাবে আইমিমের সংগঠন বাড়ছে, তাতে কার্যত ঘুম উড়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

আর এই দুই রাজনৈতিক শক্তির তীব্র উত্থানের ফলে, বাংলায় জমে যেতে পারে রাজনৈতিক যুদ্ধ। কেননা, শিবসেনা হিন্দুভোটে থাবা বসানো মানেই বিজেপির কপালে ভাঁজ পড়বে। অন্যদিকে, আইমিম ভোট বাড়ালে তা তৃণমূলের জন্য দুশ্চিন্তার। সবথেকে বড় কথা, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন – এই নির্বাচনে যদি ভোটারদের কাছে সুস্পষ্ট দিশা এই দল দেখাতে পারে, তাহলে হয়ত সরকার গড়ার চাবিকাঠিও এই দুই দলের হাতেই থাকতে চলেছে।

কেননা বিভিন্ন সমীক্ষায় বাংলায় যেভাবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত আসছে, তাতে হয়ত সংখ্যাগরিষ্ঠতার কাছাকাছি পৌঁছে থেমে যেতে পারে বিজেপি বা তৃণমূল। তখন এই দুই দলের সমর্থন ছাড়া হয়ত সরকার গঠনই আটকে যেতে পারে। সব,মিলিয়ে বাংলার রাজনীতির ময়দানে আত্মপ্রকাশ করেই কার্যত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট জমজমাট করে দিয়েছে শিবসেনা ও আইমিম। দ্বিমুখী বা ত্রিমুখী লড়াইয়ের জায়গা থেকে বাংলার বিধানসভা নির্বাচন বহুমুখী লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে পৌঁছে যেতে পারে এই দুই নতুন রাজনৈতিক দলের উপস্থিতিতে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!