এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > হিন্দুদের গণপতি গণেশ হয়ে উঠলেন জাপানে বৌদ্ধ দেবতা — কাঙ্গিতেন। কীভাবে? জেনে নেওয়া যাক

হিন্দুদের গণপতি গণেশ হয়ে উঠলেন জাপানে বৌদ্ধ দেবতা — কাঙ্গিতেন। কীভাবে? জেনে নেওয়া যাক


প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্টহিন্দু ধর্ম অনুসারে গণপতি গণেশ প্রথম পূজিত দেবতা। সমগ্র ভারতবর্ষে গণেশের খ্যাতি আকাশছোঁয়া। বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিম-পূর্ব ভারতে গণেশ জনমানসের অন্যতম প্রধান আরাধ্য দেবতা। তাকে মূলতঃ আমরা সিদ্ধিদাতা রূপে পূজা করে থাকি। ব্যাবসা-বানিজ্যে উন্নতি লাভ করতেও আমরা এই গণপতি বাপ্পারই দ্বারস্থ হই। গণেশকে নিয়ে পূরাণ-উপাখ্যানও কী আর কম আছে! মহাকবি ব্যাসদেব তো মহাভারত রচনা করতে গণপতি গণেশকেই আহ্বান করেছিলেন।

তিনি শিবপুত্র বলে শাক্ত মতেই তিনি পূজিত হন। গণেশ চতুর্থী তো রীতিমতো শ্রেষ্ঠ উৎসব মহারাষ্ট্রবাসীর কাছে। কিন্তু আপনি এটা কি জানেন যে আমাদের গজানন গণেশ শুধু আমাদের দেশেই প্রসিদ্ধ তা নয়, ভিন দেশেও তার নামের খ্যাতি আছে। সে

ই হিসেবে দেখতে গেলে তার বেশ ভাল পরিমাণ ইন্টারন্যাশানাল ফ্যানবেস আছে। ইন্দোনেশিয়ার কারেন্সিতে তো গণেশের ছবিও ছাপানো থাকে! তবে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, সুদূর জাপানে আমরা গণেশের খোঁজ পাই। হ্যাঁ, এখন সেই বিষয় নিয়েই দু’চারটি কথা বলবো।

জাপানি বৌদ্ধধর্মে “কাঙ্গিতেন” নামে এক দেবতার উল্লেখ আমরা পাই। জাপানি ভাষায় “কাঙ্গিতেন” শব্দটির অর্থ — শুভ ফল বা আনন্দদানকারী দেবতা ( god of bliss)। জাপানি বুদ্ধিজিমের ‘ সিংগন’ বা ‘ তেন্দাই’ মতাদর্শের মানুষরা তাকে পূজা করেন। এগুলো সবই তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের বিভাগ। সেই ‘কাঙ্গিতেন’-এর একাধিক নামের মধ্যে একটি নাম আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সেটি হলো – “বিনায়কতেন”। এই ‘ তেন’ শব্দটির অর্থ হল ‘দেবতা’।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

এবার কথা হচ্ছে, হঠাৎ আমরা কাঙ্গিতেন নামক জাপানি দেবতা নিয়ে পড়লাম কেন! কারন আছে। এই ‘ কাঙ্গিতেন ‘-এর ছবি দেখলেই সেটা বুঝতে পারবেন৷ ছবিতে দেখতে পাই, কাঙ্গিতেনের মাথাটি শ্বেত হস্তির। অবিকল যেন আমাদের সিদ্ধি বিনায়ক গণেশ! তবে তফাৎ একটাই। আমাদের এখানে গণেশ একাই বিরাজ করেন৷ কিন্তু কাঙ্গিতেন অন্য একজন দেবীর সাথে আলিঙ্গনবদ্ধ থাকেন। সেই দেবীরও মস্তক শ্বেত হস্তির৷ উল্লেখ্য, জাপানি দেবতা কাঙ্গিতেনও আমাদের গণেশের মতো বিঘ্ননাশক এবং অর্থ ও সুখ-শান্তিদানকারী দেবতা। তাকে জাপানে “সোসিন বিনায়ক”-ও বলেও ডাকা হয়।

কাঙ্গিতেনের গাত্র বর্ণ গোলাপি বা লালচে এবং তার সঙ্গী দেবীটির রং সাদা। এই কাঙ্গিতেন কখনো কখনো ” সোতেন” রূপে বিরাজ করেন। তখন তিনি দেবীবর্জিত, একা। শুধু হাতির মাথাই নয়, তার দেহে দুই, চার, ছয়, আট বা বারোটি হাত দেখা যায়। তবে সাধারণত তাকে চারটি হাতেই পুজিত হন। তার একটি হাতে থাকে অঙ্কুশ ও অন্য হাতে থাকে মোদক।

অতএব নাম বদলে গেলেও আমাদের একদেখাতেও চিনে নিতে অসুবিধা হয় না যে সেই কাঙ্গিতেন বা সোতেনই আমাদের গণপতি বাপ্পা। এবার জেনে নি কবে এবং কিভাবে জাপানে পৌঁছলেন আমাদের গণপতি। অষ্টম শতকে কুকাই নামক একজন বৌদ্ধ ধর্মগুরু জাপানে সিংগন মতবাদী বৌদ্ধধর্মের প্রতিষ্ঠা করেন, তখনই কাঙ্গিতেন জাপানে বৌদ্ধদের তান্ত্রিক মতের দেবতা রূপে পুজিত হন।

হিন্দু দেবতা গণেশর মূর্তি বা ছবি বৌদ্ধদের দ্বারাই ভারত থেকে চীন হয়ে জাপানে পৌঁছায়। এই গণেশরূপী নিয়ে বহু জাপানি লোকগাথা বা বৌদ্ধ পুরাণকথা জাপানের জনসমাজে ভাসে। জাপানে ইকোমা পর্বতে হোজানজি নামক স্থানে কাঙ্গিতেন-এর বিখ্যাত মন্দির আছে। সমস্ত জাপান জুড়েই তার পূজা হয়।

তবেই ভাবুন, কোথাকার জল কোথায় গড়ায়! আমাদের পৃথিবীতে ধর্ম নিয়ে মানুষে মানুষে কাটাকাটি, আর দেখুন, কেমন করে একজন হিন্দুদের আরাধ্য দেবতা বৌদ্ধদের সাধনার অঙ্গ হয়ে আছে! আমাদের যা গণপতি গণেশ, জাপানে তাহাই কাঙ্গিতেন।

এটাকে আপনারা কী বলবেন — জাপান কানেকশান?

আপনার মতামত জানান -

ট্যাগড
Top
error: Content is protected !!