অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ১১ অন্যান্য অপরাজিতা গল্পে-আড্ডায় December 28, 2019 আজ কাল প্রিয়া গুঞ্জার সাথে রোজই কথা বলে। হুম হোয়াটসাপেই। গুঞ্জাও কথা বলে মন খুলে। অনেক কথা। কিন্তু প্রিয়াদি কেমন যেন মাঝে মাঝে অবাক অবাক কথা বলে। যেমন প্রিয়া – কি পড়তে ভালোবাসো ? গুঞ্জা – তেমন কিছু নেই, বিয়ের আগে চুড়িদার আর বিয়ের পর শাড়ী প্রিয়া – জিন্স, টপ, স্কার্ট এইসব পড়তে ভালোলাগে না ? গুঞ্জা – ভাল লাগতো, কিন্তু আমাদের বাড়ি থেকে ওসব মানা ছিল। আমার বাবা একেবারে পছন্দ করতো না। কিন্তু আমার জানতো খুব ইচ্ছা করতো। একবার লুকিয়ে আমার মাসির বাড়ি গিয়ে পড়েছিলাম।আমার মাসির মেয়ের জিন্স আর টপ। ওই ঘরের মধ্যেই। আর এখন তো বিয়ে হয়ে গেছে এখন শুধু শাড়ী। তুমি কি পড়তে ভালোবাসো ? প্রিয়া – বারমুডা আর টিশার্ট (সঙ্গে সঙ্গে ডিলিট) নাইটি। শাড়ী, চুড়িদার, জিন্স , শার্ট , টি শার্ট, টপ, স্কার্ট সব। গুঞ্জা – তুমি বারমুডা আর টিশার্ট কেন লিখেছিলে? প্রিয়া – হুম আমার বর ওগুলো পড়তে ভালোবাসে। ভুল করে লিখেছিলাম। প্রিয়া – কি গয়না পড়তে ভালো লাগে ? গুঞ্জা – নুপুর,লিখে পাঠিয়ে ছিল কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই ডিলিট করে দিয়ে লিখেছে কিছু না। প্রিয়া – নুপুর লিখে ডিলিট করলে কেন? গুঞ্জা – এমনি , ওর খুব পছন্দ ছিল নুপুর, কিন্তু যেদিন থেকে জানতে পেরেছে অভি পছন্দ করে না নুপুরের আওয়াজ। সেদিন থেকে ওরও আর ভালো লাগে না পড়তে। গুঞ্জা ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করেছে কি ভালো লাগে প্রিয়াদির পড়তে। অনেক্ষন ধরে টাইপিং টাইপিং দেখিয়ে রিপ্লাই এসেছে সীতাহার। সীতাহার পড়তে এতো ভালো লাগে যে সব সময় পরে থাকে। অবাক কান্ড। সীতাহার খুব ভারী হয় ওই হার পরে সারাক্ষন থাকে? কিন্তু মিথ্যা বলবে কেন? গুঞ্জা ফের জিজ্ঞাসা করেছে – এত মোটা হার সবসময় পড়ো? প্রিয়া – হ্যাঁ, না ওই মাঝে মাঝে, আচ্ছা তোমার ডিপিতে পিকচার নেই কেন? প্রিয়া – ও এমনি, পরে লাগাবো। তোমার এখনকার একটা পিকচার পাঠানো যাবে, যদি কিছু মনে না করো….. গুঞ্জা বলেছে পরে দেবে। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - ওদিকে অফিস গিয়েও আজকাল অভির মন বসে না। সায়নাকে বড্ডো বাকি ন্যাকা লাগে। তবে সায়নার ন্যাকামো বেড়েছে নাকি অভির চোখ খুলেছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না।তাছাড়া সায়নাও আজ কাল অভির বড্ডো বেশি গায়ে পরে। অভি এড়িয়ে চলে , সিনিয়রের সাথে সায়নার ব্রেকআপ হয়ে গেছে। কারণ জানে না অভি , জানার ইচ্ছাও নেই। অভি আগের মতো শুধু কাজ নিয়েই থাকে না। বার বার ফোন চেক করে, গুঞ্জার ফটো দেখে। খুব ইচ্ছা করে এখন গুঞ্জাকে কেমন লাগছে দেখতে। কিন্তু ম্যাডাম তো এখনো ফর্মালিটি করে অভির সঙ্গে। আচ্ছা অভির মতো বিয়ে করেও বৌ এর সাথে এইভাবে কথা বলতে কাউকে হা হুতাশ করতে হয়েছে ? কে জানে ? আচ্ছা গুঞ্জার কি অভির জন্য মন খারাপ করে না ? কথা বলতে ইচ্ছা করে না? এত কিসের লজ্জা ওর অভিকে? আশ্চর্য। স্বাভাবিক ভাবে বিয়ে হলে তো এখন সংসার করতো দুজনে তবে? সন্দীপদাও পিকচারে নেই। তবে গুঞ্জা কেন এত দূরে দূরে থাকতে চায় অভির থেকে ? গুঞ্জার সঙ্গে প্রিয়াদির কথা হয় জেনে অভি হোয়াটসাপেই ম্যাসেজ করেছিল গুঞ্জাকে। সেখানেও সেই হুম, হ্যাঁ না। এদিকে প্রিয়া আর গুঞ্জা রীতিমতো বন্ধু হয়ে গেছে। খুব ডিটেলস এ কথা হয় ওদের। প্রিয়া – বিয়ের আগে প্রেম করেছ ? গুঞ্জা – না, আমাদের বাড়িতে প্রেম মানে বড়সড় পাপ কাজ, আমার সাহস হয়নি, আর কাউকে তেমন ভালোও লাগেনি যে তার জন্য বাড়ির সঙ্গে লড়বো। প্রিয়া – এমন মারকাটারি সুন্দরীর প্রেমে কেউ পড়েনি? অফার করেনি এটা হতে পারে না। গুঞ্জা – অফার করেছিল অনেকে, দূর আমি নিই নি। আচ্ছা তোমাদের বিয়ে কি করে হয়েছিল ? প্রিয়া – ওই আমার বর দেখতে এসেছিলো, পছন্দ হয়েছে বিয়ে। তেমন কিছু না। আচ্ছা অভিকে আগে দেখেছিলে তো? ভালো লেগেছিলো? কিছু মনে হয়নি। গুঞ্জা – কি মনে হবে ? প্রিয়া – না, মানে ভালো লাগেনি? মনে হয়নি এই ছেলেটা মোটামুটি ভালো, বিয়ে হলে খারাপ হবে না এমন কিছু। গুঞ্জা – না, তোমার ভাইয়ের কাছে আমি কিছুই নয় দিদিভাই, ও পড়াশোনায় এত ভালো, এত ভালো জায়গা থেকে পড়েছে, এত ভালো চাকরি করে, এত সুন্দর দেখতে, এত বড় বাড়ির ছেলে, তোমার ভাইয়েরা অনেক বড় মানুষ, আমি খুব সাধারণ বাড়ির সাধারণ মেয়ে দিদিভাই। সেখানে শুধু শুধু এইসব ভাবাটা খুব বাড়াবাড়ি। তবে আমার বন্ধুরা খুব লাফাতো, বলতো ইস্স যদি ওই ছেলেটার সাথে বিয়ে হতো। যার সাথে বিয়ে হবে সে কত লাকি।এই সব। ……… যদিও এখনো বলে তুই খুব লাকি , আমাদের বিয়ে যদি অমন ভেঙে যেত যদি আমাদের সাথে বিয়ে হতো এইসব। প্রিয়া – এখন কি মনে হয় ? গুঞ্জা – আচ্ছা চলো অনেক রাত হলো , আবার পরে কথা বলবো। প্রিয়া – কথা ঘোরাচ্ছ? মানে অভিকে তোমার পছন্দ নয়। গুঞ্জা – এমন কথা কখন বললাম? কিন্তু পছন্দ হয়েই কি লাভ ? প্রিয়া – পছন্দ হয়েই কি লাভ ? মানে? গুঞ্জা – তুমি সব জেনেও কেন আমার সঙ্গে এইরকম করছো দিদিভাই ? প্রিয়া – কি জানি? কি করছি? গুঞ্জা – কিছু না। প্রিয়া -গুঞ্জা, প্লিজ। কি বলতে গিয়েও বলছো না ? কি জানি আমি? প্লিজ বলো। আমার দিব্যি গুঞ্জা – তুমি তোমার ভাইকে বলবে না বলো আমাদের মধ্যে এই কথা হয়েছে ? আমার দিব্যি দিদিভাই , বললে আমি মরে যাবো। প্রিয়া – প্রমিস, বলবো না – এবার বলো। গুঞ্জা – সোহিনীর কথা, আমি জানি। সোহিনী আর তোমার ভাই একে অপরকে ভালোবাসে , আমি এখানে উড়ে এসে জুড়ে বসেছি। কিন্তু কি করবো বলে আমার যাবার জায়গা নেই, মায়ের শরীর ভালো নয়, তাছাড়া বাড়িতে জানলেও ফের এখানেই পাঠাবে। কিন্তু বিশ্বাস করো দিদিভাই – আমি সত্যিই চাইনা ওদের মাঝে আসতে। প্রিয়া – আরে এইসব ফালতু কথা তোমাকে কে বললো? অভি আর সোহিনী জাস্ট ফ্রেন্ড। সোহিনী আমেরিকাতে থাকে। এখানে নয়। গুঞ্জা – আমি সত্যিটা মেনে নিয়েছি দিদিভাই , ভয় পেয়োনা আমি কিছু কাউকে বলবো না। আমি আমার মতো বেশ আছি। প্রিয়া – আরে এইসব ফালতু কথা তোমাকে কে বললো? তুমি কি করে জানলে? গুঞ্জা – আমাদের বিয়ের পরের দিনই জেনেছি, রিম্পাদিদিভাই মেজপিসিমনিকে বলছিলো খুব আস্তে আস্তে আমি পাশেই ছিলাম শুনেছি। যে তোমার ভাই অন্য একজনকে ভালোবাসে,ওরা একসঙ্গেই থাকে। আমাকে বিয়ে করতে চায়নি, শুধু দাদুভাইয়ের শরীর খারাপের জন্য বিয়ে করেছে। প্রিয়া – রিম্পা দি? ও একটা কথাও সত্যি বলে না , ওর কথা কেন বিশ্বাস করেছো? অভি সোহিনী শুধু ফ্রেন্ড। গুঞ্জা – হতে পারে রিম্পাদি মিথ্যা বলেছে। কিন্তু আমি তোমার ভাই আর সোহিনীর কথা শুনেছি, সোহিনী ওর সাথে ঝগড়া করেছে ও আমার সাথে আছে বলে, আমি শুনেছি। তাছাড়া আর একদিন ওখানে গিয়ে কল করেছিল তোমার ভাই সেদিন সোহিনী ওর উপর রাগ করছিলো । ওটা স্বাভাবিক। আমিই তো জোর করে এসেছি। প্রিয়া – শোনো এইসব ফালতু কথা বিশ্বাস করোনা অভি আর সোহিনী জাস্ট ফ্রেন্ড। আচ্ছা শোনো তুমি প্লিজ কাউকে বলোনা যে আমি জানি। আজ রাখি কাল কথা হবে। ঠিকই ধরেছেন এই প্রিয়া আসলে প্রিয়া নয়, ইনি হলেন অভি। যখন তাঁর সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী তাঁর সাথে কোনোমতেই প্রাণ খুলে কথা বলছে না তখন তিনি প্রিয়াদির সাহায্যপ্রার্থী হয়ে প্রিয়া দিকে অনুরোধ করেছিলেন যেন গুঞ্জার সাথে প্রিয়া আর কথা না বলে। কেননা সে প্রিয়ার নাম করে কথা বলবে। ভাইয়ের দুর্দশা দেখে প্রিয়া দি সম্মত হয়েছিল আর অভি তারপর নতুন নাম্বার নিয়ে গুঞ্জাকে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে – হাই, আমি প্রিয়া দি। আমার আগের নাম্বারটা একটু অসুবিধা হয়ে গেছে তাই ওটা আর ইউস করছি না। এতে ম্যাসেজ করো এবার থাকে। এতেই কথা হবে। গুঞ্জর তরফ থেকেও উত্তর এসেছে – ঠিক আছে। কথা শুরু হয়েছে। মাঝে মাঝে উত্পটাং বলে ফেলে আবার ম্যানেজ করে। গুঞ্জা বুদ্ধিমতী সে ধরে ফেলে। কিন্তু বড্ডো সাদাসিধে তাই অভি যা বলে ম্যানেজ করে সেগুলো বিশ্বাস করে। এবার অভি বুঝেছে কেন গুঞ্জা ওর থেকে এত দূরে দূরে থেকে। কেন এড়িয়ে চলে। ও ভাবে অভি সোহিনীকে ভালোবাসে, ও জোর করে অভি সোহিনীর মাঝে ঢুকে পড়েছে। ওই জন্যই টাকা, এটিএম কার্ড ,আর ফোন নেয়নি। কিন্তু রিম্পাদি? কেটে ফেলবে ওকে। অসভ্যতামির একটা সীমা থাকা উচিত। কিন্তু এই মেয়ে যে কিছুতেই বিশ্বাস করে না যে অভি আর সোহিনী শুধুমাত্র বন্ধু। কি জ্বালা। বাড়ি না গেলে আর কোনোভাবেই ভুল ভাঙ্গানো সম্ভব নয়। এদিকে গুঞ্জকে যে কল করবে তও হবে না। প্রিয়া দিকে দিব্যি দিয়েছে। অন্যদিকে যদি জানতে পারে সেই প্রিয়াদি হয়ে গুঞ্জার সাথে কথা বেছে তাহলে তো আর হোয়াটস্যাপ তো দূর কথাও হয়তো বলবে না। এই জন্যই লোকে বিয়ে করে না। বিয়ে করা মানেই প্রব্লেম। আবার বিয়ে হয়ে একদিক থেকে ভালোই হয়েছে। কেননা এখন শুধু চারপাশে অভি গুঞ্জাকে দেখছে। বুঝতে পারছে অভি সে শুধু গুঞ্জাময় হয়ে গেছে। যে কোথাও ছিল না সে একেবারে মন জুড়ে বসে আছে। একটা ভয় নেই যে যদি বিয়ে না হয়, যদি অন্য কারুর সাথে বিয়ে হয় এইসব ভাবনা নেই। আর অভি কোনো মতেই ডিভোর্স দেবে না। সুতরাং গুঞ্জা শুধু অভির। কিন্তু ম্যাডাম যে ভুল বুঝে মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে। উফফ যদি আগে জানতো যে সোহিনী আর ওর কথা শুনতে পেয়েছে গুঞ্জা, তাহলে সেদিনই কথা বলিয়ে দিতো সোহিনীর সাথে তাহলেই এই সব প্রব্লেম হতো না। যদিও রিম্পা দি কানে বিষ ঢেলেছে। ছিঃ এত নিচ ও। কিন্তু সোহিনী কবে চেঁচিয়েছে? আচ্ছা সেদিন যখন সবাই বেড়াতে যাচ্ছিলো তখন অভি কথা বলছিলো বলে সোহিনী রাগ করছিলো। গুঞ্জা জেনে যদি কথা বলতে চায় তাই অভি বলেনি যে ও গুঞ্জার সাথে কথা বলছে। কি জ্বালা। আর পুজো চলে এসেছে। দিন পনেরো পরে পুজো। অভি গুঞ্জাকে ম্যাসেজ করলো – প্রিয়া – আচ্ছা শোনো , আমার পছন্দ একেবারে ভালো নয়, আমি কাল ১০ -১১ টায় এখানকার একটা বড় দোকানে যাবো। তুমি ঐসময় অনলাইন থেকো। তোমাকে শাড়ির কটা পিকচার পাঠাবো ,তুমি তার থেকে ২,৩ তে আমাকে বেছে দেবে। আমি শাড়ী নেবো। গুঞ্জা – এ মা , আমার পছন্দ ভালো নয়. প্রিয়া – যেমনি হোক চলবে , প্লিজ না করো না। গুঞ্জা অনলাইন রইলো। কয়েকটা শাড়ী বেছে দিলো। অভি সেগুলো কিনলো। কথা হতেই থাকলো। গুঞ্জা কিছুই জানলো না যে সে কার সাথে কথা বলছে। কাল ষষ্ঠী, অভি ভোরে ফ্লাইট ধরবে। বাড়িতে পুজো, লোকজন সব চলে এসেছে। কিন্তু অভি কাজে আটকে গিয়েছিলো তাই ষষ্ঠীতেই যাচ্ছে। সকল হলো। বাড়ি ঢুকলো অভি। ……….. আগের পর্ব – অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ১০ পরের পর্ব- অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ১২ আপনার মতামত জানান -