এখন পড়ছেন
হোম > রাজনীতি > তৃণমূল > আরাবুলকে অ্যারেস্ট করে মমতার রাজধর্ম, শওকতের গ্রেপ্তার কবে? মোক্ষম প্রশ্ন বিরোধীদের!

আরাবুলকে অ্যারেস্ট করে মমতার রাজধর্ম, শওকতের গ্রেপ্তার কবে? মোক্ষম প্রশ্ন বিরোধীদের!


 

প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- সন্দেশখালিতে যখন জনতার প্রতিরোধ হচ্ছে, যখন এই সরকার বুঝতে পেরেছে যে, আর মানুষ তাদের ভয় পাচ্ছে না, পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে তৃণমূলের গুন্ডাদের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিরোধের বার্তা ভয়ংকর জায়গায় যাচ্ছে, তাই তখন নিজের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ করতে একটি পদক্ষেপ নিয়েছেন এই রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী। যে আরাবুল ইসলাম এতদিন তার দলের সম্পদ ছিলেন, তার বিরুদ্ধে বিরোধীরা শত অভিযোগ করার পরেও বিন্দুমাত্র স্টেপ নিতে দেখা যায়নি, সেই আরাবুল ইসলামকে হঠাৎ করেই উত্তর কাশিপুর থানার পুলিশ বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করে নিয়েছে। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের দলের নেতাদের যখন দোষটুকু দেখতে পারে না, তখন এত বড় নেতাকে তিনি তার পুলিশকে দিয়ে তুলিয়ে নিলেন, এটাকে খুব একটা ভালো চোখে দেখছে না বিরোধীরা। তাদের দাবি, একটা ভয়ংকর ষড়যন্ত্র করছেন এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি এখন মানুষের কাছে ভালো সাজার জন্য আরাবুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছেন। কিন্তু যদি তিনি আইনের শাসনকে রক্ষা করতে চান, যদি তিনি স্থির করে নেন যে, এতদিন তিনি যা করেছেন ভুল করেছেন, এবার তিনি সঠিক পথে চলবেন। তাহলে শুধু আরাবুল ইসলাম কেন, ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় যেভাবে ভাঙ্গড় উত্তপ্ত হয়েছে এবং সেই ঘটনায় আর এক তৃণমূল নেতা তথা বিধায়ক যেভাবে কাঠগড়ায় দাঁড়াচ্ছেন, তাতে তার বিরুদ্ধেও এবার পদক্ষেপ নেওয়া তো প্রয়োজন এই রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রীর। কিন্তু তিনি সেটা নিতে পারবেন তো? তবে এখানে কার কথা বলা হচ্ছে! আরাবুল ইসলাম গ্রেপ্তার হতেই আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী যে প্রশ্ন এবং যে দাবি এই সরকারের কাছে তুলে ধরলেন, তারপর কিন্তু কিছুটা হলেও ঢোক গিলতে শুরু করেছে নবান্নের কর্তা ব্যক্তিরা। তারা বুঝতে পারছে যে, তাদের চালাকি বিরোধীরা ধরে ফেলেছে। তাই এখন এই প্রশ্নের উত্তর বা পদক্ষেপ নেওয়ার মত ক্ষমতা এই অপদার্থ প্রশাসনের নেই বলেই মনে করছেন একাংশ। কিন্তু কি এমন বলেছেন নওশাদ সিদ্দিকী?

প্রসঙ্গত, এদিন আরাবুল ইসলাম গ্রেপ্তার হতেই রাজ্য রাজনীতিতে একটা হইচই পড়ে যায়। আর সেই বিষয় নিয়েই ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীকে প্রশ্ন করা হয়। আর এর জবাব দিতে গিয়ে তিনি একটি বিস্ফোরক দাবি করেন। নওশাদ সিদ্দিকীর মতে, আরাবুল ইসলাম এখন ঠিক মত কাজ করতে পারছে না। সেই কারণেই হয়ত তাকে গ্রেফতার করে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা চাইছি, আরাবুল ইসলামের মত শওকাত মোল্লাকেও গ্রেফতার করা হোক। তার বিরুদ্ধেও তো অনেক অভিযোগ রয়েছে। তাহলে তাকে কেন ছেড়ে রাখা হবে? অনেকে বলছেন, একেবারে মোক্ষম কথা বলে এই সরকারকে কঠিন বেড়াজালের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন নওশাদ সিদ্দিকী। সত্যিই তো তাই! এই নওশাদ সিদ্দিকী এবং তার দলের কর্মীদের ওপর তো কম অত্যাচার করেনি তৃণমূল কংগ্রেস। ভাঙ্গড় এলাকায় অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে সাম্প্রতিককালে যে মানুষটির নাম সব থেকে বেশি উঠে এসেছে তিনি তো শওকত মোল্লা। তার বিরুদ্ধেই তো সব থেকে বেশি বিরোধীদের ওপর নির্যাতন থেকে শুরু করে হামলায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাহলে এক যাত্রায় কেন পৃথক ফল হবে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার পুলিশকে দিয়ে আরাবুল ইসলামকে তুলে নিয়ে যদি প্রমাণ করতে চান যে, তিনি রাজ ধর্ম পালন করছেন, তাহলে তাতে সাধারণ মানুষের মন গলবে না। তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে, তিনি সত্যিই মানুষকে নিরাপত্তা দিতে চান, আইনের শাসন রক্ষা করতে চান। আর সেই আইনের শাসন মন থেকেই যদি এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রক্ষা করতে চান, সেক্ষেত্রে সবার আগে বিরোধীদের তোলা অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করতে হবে শওকত মোল্লাকে। আর তাহলেই বোঝা যাবে যে, এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দম আছে‌। কিন্তু সেটা যে এই রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান করবেন না, সেই সম্পর্কে দ্বিমত নেই বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।

বিরোধীদের মতে, মুখ্যমন্ত্রী তার পুলিশকে দিয়ে আরাবুল ইসলামকে গ্রেফতার করিয়েছেন। তাকে সকলেই স্বাগত জানাচ্ছে। কারণ এই ব্যক্তির বিরুদ্ধেও কম অভিযোগ ছিল না। কিন্তু গঠনগত প্রশাসনিক প্রধানের ভূমিকা পালন করতে হলে তো রাজ্যজুড়ে আরও অনেক অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের এই পুলিশকে গ্রেফতার করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু সেটা কি এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী করতে পারবেন? যদি তিনি সত্যিই রাজধর্ম পালন করতে চান, তাহলে নওশাদ সিদ্দিকীর বক্তব্য অনুযায়ী অবিলম্বে শওকত মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে তিনি দেখিয়ে দিন যে, তিনি কোনো রং এবং দল মানেন না। তিনি এই রাজ্যের সকলের পুলিশ মন্ত্রী। কিন্তু সেইটা করার মত দম বা হিম্মত এই অপদার্থ মুখ্যমন্ত্রীর নেই বলেই দাবি বিরোধী শিবিরের।

পর্যবেক্ষকদের মতে, নওশাদ সিদ্দিকী কিন্তু আরাবুল ইসলামকে গ্রেফতার করার সাথে সাথেই একটা বড় প্রশ্নবান এই রাজ্যের সরকারের দিকে ছুড়ে দিয়েছেন। দাবি তুলেছেন আর এক অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। ফলে এখন দেখতে হবে যে, এই রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী এই বিষয় নিয়ে কি ভাবছেন! তিনি কি করছেন! তিনি যদি চুপচাপ বসে থাকেন, তাহলে বুঝে নিতে হবে যে, আরাবুল ইসলামকে গ্রেফতার করে মুখ্যমন্ত্রী একটা নাটক করেছেন। নির্বাচনের সময় যাতে সেই আরাবুল ইসলামকে নিয়ে অভিযোগ না ওঠে, তার দলের বিরুদ্ধে কোনো প্রশ্ন না ওঠে, তার জন্য এখন সাময়িক ভাবে গ্রেফতার করে নিয়ে আবার পরবর্তীতে একটা ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা হবে। আর যদি তিনি এই নওশাদ সিদ্দিকীর বক্তব্যকে প্রাধান্য দিয়ে অগণিত মানুষের চোখের জল ফেলতে বাধ্য করা শওকত মোল্লাকে কড়া শাস্তি দেন, তাহলে বুঝতে হবে যে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে শুধরে নিতে চাইছেন। কিন্তু তিনি কতটা সেটা করবেন, দলের সম্পদ ভেবে ভোট চুরি থেকে শুরু করে যারা কোটি কোটি টাকা পৌঁছে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে তিনি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নেওয়ার কতটা সাহস দেখাবেবেন! সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন। স্বভাবতই আরাবুল ইসলামকে গ্রেফতার করে নওশাদ সিদ্দিকীর বাণে নতুন করে জর্জরিত হয়ে গেলেন এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। দিনের শেষে তেমনটাই বলছেন রাজনৈতিক সমালোচকরা।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!