বাংলায় কি বিজেপি এবার উঠেই যাবে? ফল বেরোতেই নতুন রাজনৈতিক স্রোতে বেসামাল গেরুয়া শিবির! বিজেপি মালদা-মুর্শিদাবাদ-বীরভূম রাজনীতি রাজ্য May 9, 2021 প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – 2016 সালে তিনটি আসন পাওয়া ভারতীয় জনতা পার্টি 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপায়িত হয়নি। তবে বিজেপি নেতারা বলছেন, 2016 থেকে তারা অনেকটাই নিজেদের উন্নতি ঘটিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিন থেকে এক ধাক্কায় 77 টি আসন নিয়ে তারা রাজ্যে বিরোধীদলের জায়গা দখল করেছে। তবে বিজেপির পক্ষ থেকে নির্বাচনী প্রচারে যখন ক্ষমতা দখলের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী মন্তব্য পেশ করা হয়েছিল, তখন তার থেকে অনেকটাই পিছিয়ে এসে বিরোধী দলের জায়গা দখল করার কারণে দলের অনেক নেতা কর্মীরা এখন হতাশ হতে শুরু করেছেন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের অনেক জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে হেভিওয়েট নেতারা গেরুয়া শিবিরের শামিল হতে শুরু করেছিলেন। তবে ফলাফল প্রকাশের পর যখন তৃণমূল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রাজ্যের ক্ষমতা এবং বিজেপি নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পেরে বিরোধীদলের জায়গা দখল করেছে, ঠিক তখনই আবার বিপরীত স্রোত দেখা দিতে শুরু করেছে গোটা রাজ্যে। জানা গেছে, বিধানসভা নির্বাচনের ফল বের হতে না হতেই এবার মালদহের পঞ্চায়েত স্তরে বিজেপির নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যোগদান করতে শুরু করলেন তৃণমূল কংগ্রেসে। যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে মালদহ জেলা বিজেপির অন্দরমহলে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, এভাবেই যদি একের পর এক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা তৃণমূলে নাম লেখাতে শুরু করেন, তাহলে ভবিষ্যতে কিভাবে বিরোধীদলের শক্তি নিয়ে লড়াই করবে পদ্মফুল শিবির? তাহলে কি বিরোধীদলের জায়গা দখল করার পরেই দলের নেতাকর্মীরা কার্যত মুষড়ে পড়েছেন! আর তাই দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এখন যোগ দিতে শুরু করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসে? অনেকেরই আশঙ্কা, সবে তো পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের জার্সি বদলাতে শুরু করেছেন। এরপর ধীরে ধীরে অনেক বিধায়ক যোগ দিতে পারেন তৃণমূল কংগ্রেসে। যার ফলে এখন বিজেপির অন্দরে একটাই প্রশ্ন, কিভাবে এই পরিস্থিতিকে সামাল দেওয়া যাবে? জানা গেছে, শুক্রবার রাতে মালদহের বামনগোলা পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপির চার প্রতিনিধি, মালদহের গাজোল পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা সহ দুই প্রতিনিধি এবং বামনগোলা ব্লকের চাঁদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের এক পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূল কংগ্রেসের নাম লিখিয়েছেন। অর্থাৎ ফলাফল প্রকাশের পরই এবার বিজেপির জনপ্রতিনিধিরা যোগ দিতে শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেসে। কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে? কেন তারা বিজেপি ছেড়ে যোগ দিলেন তৃণমূলে? এদিন গাজোল পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তপন সাহা বলেন, “জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষের কাজ করতে পারছিলাম না। সেই কারণে দলবদল করেছি।” অর্থাৎ যত সময় যাচ্ছে, বিজেপির ফাটল যে আরও চওড়া হতে শুরু করেছে, তা বলাই যায়। এদিকে এই ব্যাপারে বিজেপি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যেভাবে তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন, তাতে অনেকটাই উজ্জীবিত ঘাসফুল শিবির। এদিন এই প্রসঙ্গে মালদহ জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী তথা সাংসদ মৌসম বেনজির নূর বলেন, “বামনগোলা, গাজোল পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের নির্বাচিত সদস্যরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাদের আমরা স্বাগত জানিয়েছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নে শামিল হতে অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা পঞ্চায়েত আইন মেনে বোর্ড গঠন করব। আগামী দিনে বিজেপি বলে কিছু থাকবে না, এটা নিশ্চিত।” তবে বিজেপির পক্ষ থেকে অবশ্য তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। এদিন এই প্রসঙ্গে বামনগোলা পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপির সভাপতি উৎপল সরকার বলেন, “তৃণমূল আমাদের চার সদস্যকে প্রলোভন দিয়ে দলে নিলেও বোর্ড আমাদের দখলেই থাকবে। আমরাও ছেড়ে কথা বলব না।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিজেপির পক্ষ থেকে যতই বলা হোক, বোর্ড তাদের দখলে থাকবে, কিন্তু পরিস্থিতি যত সময় যাবে, ততই বদলাতে শুরু করবে। শাসকদলের ক্ষমতায় আসা তৃণমূল কংগ্রেস যে বিজেপিকে এক চুল জায়গা ছেড়ে দেবে না, তা বলাই যায়। তবে যে বিজেপি বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা থেকে শুরু করে দাপুটে বিধায়ক এবং মন্ত্রীদের দলে নিতে শুরু করেছিলেন, এখন পঞ্চায়েত স্তরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যদি তাদের সঙ্গ ছেড়ে প্রতিপক্ষ তৃণমূল শিবিরে নাম লেখান, তাহলে বিজেপি নিচুতলায় কিভাবে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই দেবে, এখন সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাহলে কি দলের নেতা-কর্মীরা ফলাফলে হতাশ? আর সেই কারণেই তারা এখন মুখ ঘুরিয়ে নিতে চলেছেন? মালদহ জেলার একের পর এক পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপির নেতা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর এই প্রশ্নই জোরালো হয়ে দাঁড়িয়েছে জেলা রাজনীতিতে। সব মিলিয়ে দলের এই ভাঙন পর্ব আটকাতে বিজেপি নেতৃত্ব কি কৌশল প্রয়োগ করে, সেদিকেই নজর থাকবে সকলের। আপনার মতামত জানান -