এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > ডিএ মামলার শুনানি – শেষ হল আমজাদ আলির সওয়াল, হাইকোর্ট থেকে লাইভ আপডেট

ডিএ মামলার শুনানি – শেষ হল আমজাদ আলির সওয়াল, হাইকোর্ট থেকে লাইভ আপডেট


বকেয়া ডিএ ও কেন্দ্রীয়হারে বেতন না পাওয়ায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে অবশেষে মামলা করেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ। সেই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের ১৯৫৪ সালের একটি মামলার রায় দেখিয়ে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত স্পষ্ট জানিয়ে দেন ডিএ সরকারি কর্মচারীদের অধিকারের মধ্যে পরে না। আর তার পরিপ্রেক্ষিতে মামলাকারীদের পক্ষের দুই আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য ও সর্দার আমজাদ আলিকে নিজের নিজের বক্তব্য রাখার সুযোগ দেন মাননীয় বিচারপতিরা।

এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

ইতিমধ্যেই মামলাকারীদের তরফে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য তাঁর দুদিনের সওয়ালে তুলে ধরেছেন মূলত চারটি বিষয়। এক, রাজ্য সরকারের আইন বলছে ডিএ সরকারি কর্মাচারদিকে অধিকারের মধ্যে পরে। দুই, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল ১৯৫৪ সালের যে রায়ের কথা বলছেন তারপরে সুপ্রিম কোর্টেই বহু মামলার রায়ে স্পষ্ট ডিএ সরকারি কর্মচারীদের অধিকারের মধ্যে পরে। তিন, সুপ্রিম কোর্টের রায় থেকেই স্পষ্ট বছরে দুবার করে ডিএ দিতে হবে। এবং চার, ডিএর হার প্রাইস ইনডেক্স বা পিআইএর উপর নির্ভর করবে (সেটা কেন্দ্রের ইনডেক্স ফলো করেও হতে পারে বা রাজ্যের নিজস্ব ইনডেক্সও হতে পারে)।

বিকাশবাবুর সওয়াল শেষ হলে মামলাকারীদের তরফে অপর আইনজীবি সর্দার আমজাদ আলি আদালতের কাছে আধঘন্টার সময় চান নিজের বক্তব্য তুলে ধরার জন্য। কিন্তু সময়াভাবে আগেরদিন তা সম্ভব না হাওয়ায় আদালত আজ আমজাদ সাহেবের বক্তব্য শোনে। আমজাদ সাহেব প্রথমেই বলেন, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল ১৯৫৪ সালের যে রায়ের কথা বলছেন তা আদতে ১৯২২ সালের ‘কলোনিয়াল আইনের’ উপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু আজ ভারতবর্ষ স্বাধীন, তার নিজস্ব সংবিধান আছে, তাহলে বর্তমানে কোনো আইন কি পরাধীন ভারতের আইনের পরিপ্রেক্ষিতে হতে পারে?

এরপরে আমজাদ সাহেব বলেন, রাজ্য সরকার যেসব কর্মী দিল্লি বা চেন্নাইয়ে কর্মরত তাঁদের সিপিআই মেনে ডিএ দিলেও, পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে যেসব কর্মী আছেন তাঁদের ক্ষেত্রে তা দিচ্ছে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল আদালতকে জানিয়েছিলেন যে আমরা ডিএ দিই কিন্তু কোনো প্রাইসিং ইনডেক্সের নিয়ম মেনে তা দেওয়া হয় না। আমজাদ আলির প্রশ্ন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকার ‘পাবলিক মানি’ নিয়ে এরকম নিয়ম কি আদৌ না মেনে চলতে পারে? আর সেটা আবার আদালতে এসে স্বীকার করতে পারে?

এরপর আমজাদ সাহেব, ২০০৯ সালের রোপা আইন ও পে কমিশনের কথা তুলে বলেন, রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে যে যে নিয়ম মেনে বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন সবই সেই পে কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, কেননা রাজ্য সরকার নিজেই সেই পে কমিশনের দেওয়া পরামর্শকে সংবিধানের ৩০৯ ধারা অনুযায়ী আইনে পরিবর্তিত করে। তাহলে তা ডিএ দেওয়ার ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না কেন?

মামলাকারীদের পক্ষের আইনজীবী সর্দার আমজাদ আলি এরপর বিচারকদের সামনে মুখ্যমন্ত্রীর একটি সভায় তোলা ‘ঘেউ ঘেউ’ প্রসঙ্গও তোলেন। প্রসঙ্গত, এর আগে যখন শুনানি প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রের এজলাসে চলছিল, তখনও এই প্রসঙ্গ ওঠে – সব শুনে তিনি একে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দেন এবং আগামী দিনে এই ধরনের বাক্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারকে আরো সচেতন হতে বলেন। আজ আমজাদ সাহেব আদালতের কাছে স্পষ্ট করে দেন, মুখ্যমন্ত্রী যতই রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের দাবিকে ‘বার্কিং’ (ঘেউ ঘেউ) বলুন, আদতে কিন্তু আমরা মহামান্য আদালতের কাছে তা ‘বেগিং’ (দাবি করছি) করছি, কোনোমতেই তা ‘বার্কিং’ নয়।

এরপরে আমজাদ সাহেব তাঁর শুনানি শেষ করেন। ফলে এই মামলার সবপক্ষের শুনানি আপাতত শেষ হল। এই প্রসঙ্গে অন্যতম মামলাকারী ও সরকারি কর্মচারী সংগঠন কনফেডারেশনের অন্যতম শীর্ষনেতা সুবীর সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রাজ্য সরকার ও আমাদের তরফে এই মামলার শুনানি শেষ। মামলাটি বর্তমানে ‘সিএভি’ (কেস এওয়েটিং ফর ভার্ডিক্ট বা রায়ের জন্য অপেক্ষা) স্ট্যাটাসে চলে গেল। এই মামলায় কবে রায়দান হবে সেই নিয়ে এখনো কোনো স্পষ্ট কিছু জানা যায় নি। তবে সামগ্রিকভাবে যা শুনানি হয়েছে তাতে আমরা খুশি ও আশাবাদী। আশা করছি আদালত সবদিক বিবেচনা করে রাজ্যে সরকারি কর্মচারীদের পক্ষে সদর্থক রায়ই দেবে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!