অগ্নিগর্ভ বারুইপুর কোর্ট, প্রকাশ্য দিবালোকে পুড়িয়ে দেওয়া হল বহু গুরুত্ত্বপূর্ন নথি বিশেষ খবর রাজ্য February 3, 2018 বারুইপুর কোর্টে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন মকদ্দমার তারিখ সংক্রান্ত গন্ডগোল ও অন্যান্য আইনি কাজের তথ্যপঞ্জী সংরক্ষন আইন মোতাবেক হচ্ছিল না বলে অভিযোগ। এই বিষয়ে বহুবার আদালতকে আইনজীবীদের তরফে জানানো হলেও, অবস্থার বিশেষ কোনো পরিবর্তন ঘটে নি। আর তাই একপ্রকার নিরুপায় হয়েই বারুইপুর আদালতের আইনজীবীরা গত ৪ ঠা জানুয়ারী থেকে কর্মবিরতির ডাক দেন। আইনজীবীদের এই পদক্ষেপে রীতিমত শোরগোল পরে যায়। আইনজীবীদের তরফে আরও অভিযোগ করা হয়, যে বারুইপুর আদালতে বিভিন্ন রেকর্ড ও ডকুমেন্ট অদ্ভুত ভাবে ‘মিসিং’ হতে থাকে। আর এমত অবস্থায় আজ সকাল ৭ টা নাগাদ বারুইপুর আদালত চত্ত্বরে কেউ বা কারা আদালতের প্রচুর নথি পুড়িয়ে দেয়। এই ব্যাপারে আমরা বারুইপুর সিভিল কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি দেবাশীষ চক্রবর্তীর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করলে তিনি আইনজীবীদের কর্মবিরতি ও অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপার মেনে নেন। তিনি স্পষ্ট জানান, এইভাবে দিনের পর দিন মকদ্দমার তারিখ নিয়ে গন্ডগোল ও রেকর্ড ও ডকুমেন্ট মিসিং হওয়ায় বিচার প্রক্রিয়া শুধুমাত্র যে প্রভাবিত হচ্ছিল তাই নয়, তা ব্যাপকভাবে ব্যাহতও হচ্ছিল। এরপরে আজকের এই অগ্নিসংযোগ করে কোর্ট চত্ত্বরেই ডকুমেন্ট পুড়িয়ে দেওয়ার পর তা যে কত সাধারণ মানুষের ক্ষতি করল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কে বা কারা এই অগ্নিসংযোগের পিছনে আছে সেই বিষয়ে দেবাশীষবাবু কিছু বলতে চাননি। তিনি শুধু জানান, যেহেতু মাননীয় আদালতের কাছে থাকা নথি এই ভাবে জ্বালিয়ে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, তাই মাননীয় আদালত সমগ্র ব্যাপারটি তদন্ত করে সত্যিটা সামনে আনুক। তবে এই নথি ধ্বংস যে আদালতের অনুমতিতে হয় নি সেকথা মাননীয় বিচারপতি জানিয়েছেন। যেটুকু ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে তার মধ্যে বহু নতুন মামলার নথিও পাওয়া গেছে। এই নথি ধ্বংসের পরিমান যা কি বিশাল তা বোঝা যায় যখন পার্শ্ববর্তী দেবদারু গাছের পাতা ১০ ফুট উপরেও ঝলসে যেতে দেখা যায়। সূত্র মারফত শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ব্যাপারটি নিয়ে যত শীঘ্র সম্ভব এফআইআর করতে বারুইপুর আদালতের প্রধান বিচারপতিকে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সেই এফআইআর এখনো পর্যন্ত করা হয় নি। শুধুমাত্র উদ্ধার হওয়া নথির ধ্বংসাবশেষ বারুইপুর থানায় রাখা আছে, আগামীকাল এই নিয়ে এফআইআর হতে পারে। স্থানীয় অসমর্থিত সূত্রের খবর, এক ‘বিশেষ’ রাজনৈতিক দলের বেশ কিছু মামলা এই আদালতে আটকে ছিল, যে মামলাতে জোর করে জমি দখলের মত গুরুতর অভিযোগ ছিল। এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে সেই সব মামলার নথিও ‘সম্ভবত’ ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে ওই মামলার আর কোনো গুরুত্ত্ব রইলো না। এই ব্যাপারে আমরা আইনজীবী পৃথ্বীশ গাঙ্গুলীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বারুইপুর আদালতে এইভাবে বিভিন্ন কেসের নথি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় আমি হতচকিত, এরফলে বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষের দুর্দশা বাড়তে বাধ্য। আইন অনুযায়ী, প্রতিটি কেসের রেকর্ড ৭ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত সংরক্ষিত করে রাখতে হয়। এইভাবে সেই রেকর্ড ধ্বংস করা ভারতীয় দণ্ডবিধির ২০১/৪২৭ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মাননীয় আদালত অবশ্যই করে এই ব্যাপারে কঠিনতম পদক্ষেপ নেবে বলেই আমি আশা রাখি। আপনার মতামত জানান -