এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > একদা শত্রু বামফ্রন্টই কি এনআরসি ইস্যুতে ঝড় তুলতে পথ দেখাচ্ছে তৃণমূলকে? বাড়ছে জল্পনা

একদা শত্রু বামফ্রন্টই কি এনআরসি ইস্যুতে ঝড় তুলতে পথ দেখাচ্ছে তৃণমূলকে? বাড়ছে জল্পনা


 

2011 সালের আগে তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যুতে গর্জে উঠতে দেখা যেত রাজ্যের বর্তমান শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে। তৎকালীন বিরোধী দল হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতি ক্ষেত্রে ক্ষমতায় আসতে সেই সময়কার শাসকবর্গ বামেদের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। অবশেষে 2011 সালে ক্ষমতায় বসে তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে যত দিন গিয়েছে, ততই বামেদের অস্তিত্ব সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে।

সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে একটি আসনও নিজেদের দখলে রাখতে পারেনি তারা। যেখানে বামেদের ভোট গেরুয়া শিবিরে চলে যাওয়ায় তৃণমূল বিজেপির কাঁধে নিঃশ্বাস ফেলছে বলে মনে করছেন একাংশ। আর এই পরিস্থিতিতে বিজেপিকে একঘরে করতে এনআরসি ইস্যুতে হাতিয়ার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।

তবে শুধু এনআরসিকে হাতিয়ার করাই নয়, এই ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সজাগ করতে বামেদের সাংগঠনিক পদ্ধতিকেও হাতিয়ার করছে রাজ্যের শাসকদল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জাতীয় নাগরিকপঞ্জির তালিকা প্রকাশের পরই অনেক হিন্দুর নাম সেখান থেকে বাদ চলে যায়। যার পরেই সোচ্চার হয় বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। এদিকে অসমের পর বাংলাতেও এনআরসি চালু করা হবে বলে দাবি জানাতে থাকেন রাজ্য বিজেপির অনেক নেতৃত্ব। যার পাল্টা তিনি থাকতে বাংলায় কোনো এনআরসি হবে না বলেও জানিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সম্প্রতি এই ব্যাপারে মালদা জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ খোলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। দলীয় বৈঠকের মাধ্যমে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে তিনি জানিয়ে দেন, এনআরসি ইস্যুতে বিজেপির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আর এবার নেত্রীর নির্দেশ মোতাবেক পথে নেমে সাংগঠনিক পদ্ধতিকে হাতিয়ার করতে শুরু করল মালদা জেলা তৃণমূল কংগ্রেস।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

জানা যায়, একসময় বামপন্থী দলগুলো গ্রামীণ এলাকায় তাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে চট বৈঠকের উপর ভরসা রাখত? কিন্তু কি এই চট বৈঠক? অনেকে বলেন, কৃষক, শ্রমিক এবং প্রান্তিক মানুষদের বাড়ির মেঝেতে চট বিছিয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করাকেই চট বৈঠক বলে।

বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, এই বৈঠকের মাধ্যমে বামেরা গ্রামের মানুষদের মনে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছিল। আর তাই বিজেপির যখন উত্থান ঘটছে, ঠিক তখনই বামেদের এই সাংগঠনিক রীতি নীতিকে গ্রহণ করে এনআরসি ইস্যুতে বিজেপির বিরুদ্ধে গ্রামে গ্রামে গিয়ে চট বৈঠক করতে উদ্যোগী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে গ্রামীণ এলাকায় চট বৈঠক করলেও মালদা শহর বা শহরতলীতে চা বৈঠকের মাধ্যমে এনআরসির বিষয় সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরবেন তৃণমূল নেতারা বলে খবর।

অর্থাৎ, যেখানে যেমন সেখানে তেমন। গ্রামের মানুষদের দাওয়ায় বসে যেমন তাদের মন জয় করা যাবে, ঠিক তেমনই এনআরসি নিয়েও বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হওয়া যাবে। অন্যদিকে শহর এলাকায় সকালের চায়ের আড্ডায় সাধারণ মানুষের মনে এনআরসির বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রবেশ করাতে চায় ঘাসফুল শিবির।

কিন্তু এতে করে কি সাফল্য আসবে! এদিন এই প্রসঙ্গে মালদহ জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী মৌসম বেনজির নূর বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ এবং দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা ইতিমধ্যেই প্রচারে নেমে পড়েছি। নিয়মিত মিটিং মিছিলের পাশাপাশি চট বৈঠকের উপরে জোর দিচ্ছি। এই ধরনের বৈঠকের মাধ্যমে প্রতিটি পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে এনআরসির ভয়াবহ দিক তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে। শহরাঞ্চলে বিভিন্ন চায়ের দোকানে কিংবা জনসমাগম হয়, এমন সব জায়গায় দলের কর্মীদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে এনআরসি বিরোধী প্রচার চালাতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে।”

তবে তৃণমূলের পক্ষ থেকে বামেদের সাংগঠনিক রীতিনীতিকে হাতিয়ার করে এনআরসির বিরুদ্ধে বিজেপির হাওয়া কাড়ার চেষ্টা করা হলেও তাতে ভাবিত নয় গেরুয়া শিবির। এদিন এই প্রসঙ্গে মালদা জেলা বিজেপির সভাপতি গোবিন্দ মন্ডল বলেন, “এনআরসির উদ্দেশ্য হল দেশকে অনুপ্রবেশকারী মুক্ত করা। এই অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হলে সাধারন মানুষদের কর্মসংস্থান এবং সুযোগ-সুবিধা পাওয়া সহজ হয়ে যাবে। আমরাও সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে বোঝাচ্ছি, সারাদেশে এনআরসি কেন প্রয়োজন! বেশিরভাগ মানুষই এনআরসি চালু করার বিষয়টিকে সমর্থন করছেন।”

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তৃণমূল সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে বামেদের পদ্ধতিকে হাতিয়ার করে এনআরসির বিরুদ্ধে প্রচার চালালেও, মানুষ থেকে বিচ্যুত হওয়া বামেদের সাংগঠনিক রীতিনীতি তৃণমূলের মধ্যে দিয়ে দেখতে পাওয়ায় সাধারণ মানুষ তা আদৌ গ্রহণ করবেন কিনা! তা নিয়ে প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!