এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > জনসংযোগেও কড়া নজরদারি প্রশান্তের, দলের মধ্যে বাড়ছে শঙ্কা – জোর জল্পনা

জনসংযোগেও কড়া নজরদারি প্রশান্তের, দলের মধ্যে বাড়ছে শঙ্কা – জোর জল্পনা

দলের কর্মী সমর্থকরা বারবারই অভিযোগ করে এসেছে, উর্দ্ধতন নেতৃত্ব দলের তৃণমূল স্তরের কর্মীদের অভাব-অভিযোগকে পাত্তা দেননা। সাংগঠনিক জনসংযোগের অভাবের কারণেও দল যে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, এই অভিযোগও আগাগোড়াই করছিল নিচুতলার তৃণমূল কর্মীরা।

কিন্তু 2019 সালে সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে দলের 42 এ 42 স্বপ্ন চুরমার হয়ে যাওয়ার পর 2 আসনে সীমাবদ্ধ থাকা ভারতীয় জনতা পার্টি যখন নিজেদের আসন 16 টি বাড়িয়ে 18 করে নেয়, আর 34 এ থাকা তৃণমূল কংগ্রেস যখন 22 এ আটকে যায়, তখন দলের নিচুতলার কর্মীদের এই অভিযোগ যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে দলের কাছে।

শুধু অভিযোগের প্রাসঙ্গিকতাই নয়, 21 সালে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে দল ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে কিনা, সেই বিষয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ে শীর্ষ নেতৃত্ব। যার কারণে জনসভাগুলোতে শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার শোনাতে থাকে যে তারা অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেস এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতে আছে।

কিন্তু শুধু এটুকু বলেই নিজেদের চিন্তা দূরে সরিয়ে রাখতে পারেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। তাই এবার নির্বাচন বিশেষজ্ঞ 2014 সালের নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী নীতিনির্ধারক প্রশান্ত কিশোরকে বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের নীতি নির্ধারক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

জানা যায়, এই প্রশান্ত কিশোর অভূতপূর্ব নীতি দিয়ে বিহারে এবং সাম্প্রতিক তেলেঙ্গানায় যথাক্রমে মহাগঠবন্ধন এবং ওয়াইএসআরকে জিততে সাহায্য করে। বস্তুত, প্রশান্ত কিশোর তৃণমূল কংগ্রেসের হাল ফেরাতে রীতিমতো কর্মসূচি দিতে শুরু করেছে রাজ্যের শাসক দলকে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

সদ্য কলকাতার নজরুল মঞ্চ থেকে ঘোষণা করা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের “দিদিকে বলো” নামক কর্মসূচি যে প্রশান্ত কিশোরের অর্থাৎ পিকের মস্তিষ্কপ্রসূত, তা সহজেই অনুমান করতে পারছে সকলে। তাই এই কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের গ্রামে গ্রামে এলাকায় এলাকায় ঘুরে জনসংযোগ করা, রাত কাটানো এবং সকলের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মধ্যে দিয়ে পরদিন সকালে দলীয় পতাকা উত্তোলন করে এলাকা পরিত্যাগ করা। আর এটা যে পিকের বাতলে দেওয়া রণনীতি, তা অত্যন্ত স্পষ্ট।

কিন্তু এবার সেই দিদিকে বলো কর্মসূচির উপরে এবং জনসংযোগ যাত্রার ওপর যে কড়া নজর রাখছেন প্রশান্তর টিম সেই খবর আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহল থেকে। বিধায়ক, মন্ত্রীরা এলাকায় গিয়ে রাত কাটাচ্ছেন কিনা, বাসিন্দাদের অভাব-অভিযোগ শুনছেন কি না, মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বৃদ্ধি করছেন কিনা, এই তথ্য জানতে শুধুমাত্র নেতা, বিধায়কদের পাঠানো ছবির উপরে ভরসা রাখছেন না পিকে।

রীতিমতো তাদের কর্মকাণ্ডের উপরে নজর রাখতে দলের সদস্যদের ফোন করে খোঁজখবর নিচ্ছেন পিকের টিম‌। আর এমনই এক ঘটনা উল্লেখ পাওয়া গেল বাঁকুড়া তৃণমূল কর্মীদের একাংশের মধ্যে। দলীয় সূত্রের দাবি, দলের অন্দরে গঙ্গাজলঘাটি দুর্লভপুর এলাকার দুই কর্মী অমলেন্দু মুখোপাধ্যায় ও গুরুপদ গড়াই নামে দুই কর্মীর কাছে স্থানীয় শালতোড়ার বিধায়ক স্বপন বাউড়ির “দিদিকে বলো” কর্মসূচির উপর কড়া নজর রাখছে পিকের টিম।

এদিন এই বিষয়ে অমলেন্দু বাবু জানান, ফোনটা যখন আসে তখন পার্টি অফিস আড্ডা দিচ্ছি। অচেনা নম্বর থেকে একজন জানালেন, ক্রিকেট টিম থেকে বলছেন। গড় গড় করে আমার নাম ধাম বলে দিয়ে শালতোড়া বিধায়কের দিদিকে বলো কর্মসূচির উপর নজর রাখতে বললেন।

বিধায়ককে দীর্ঘদিন চিনি কিন্তু কখনও ভাবিনি, তার কাজের মূল্যায়ন করতে হবে। মঙ্গলবার স্বপন বাউড়ি গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের ভাডাডি গ্রামে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভাব অভিযোগ শোনেন। বিধায়কের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এখন নতুন করে জনসংযোগ ঝালিয়ে নিচ্ছি। কেমন কাজ করেছে, মানুষের কাছে এসে খবর পাচ্ছি। এতে হয়ত ফাঁকফোকরগুলো ভালো ভাবে চিহ্নিত হচ্ছে। ব্যাপারটা মন্দ নয়।

কিন্তু স্বপনবাবুর এই কর্মসূচি নিয়ে অমলেন্দুবাবুর দাবি, বিধায়ক কুড়িগ্রামে কতক্ষণ ছিলেন, তাদের সঙ্গে কি কি বিষয়ে কথা বলেছেন, তার বাড়িতে রাত কাটিয়েছেন, কি খেয়েছিলেন, সেই বিবরণ তাকে জানতে বলা হয়েছে পিকে টিমের তরফে। আবার অন্যদিকে আর এক তৃণমূল কর্মী গুরুপদবাবু দাবি করেন, “কেবল খবরা-খবর নেওয়া নয়। হোয়াটসঅ্যাপে নির্দিষ্ট নম্বরে বিধায়ক কর্মসূচির তথ্য চেয়েছেন প্রশান্ত কিশোরের নিযুক্ত টিম।

কিন্তু অনেকেরই প্রশ্ন, প্রশান্ত কিশোরের নামধারী অন্য কারো কাছে তথ্য পাঠাতে বলা হচ্ছে না তো! হতে পারে এটা বিরোধী দলের চক্রান্ত। দুই তৃণমূল কর্মীর জবাব, সন্দেহ যে হয়নি তা নয়। কিন্তু দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি। এদিন এই প্রসঙ্গে বাঁকুড়া জেলার প্রাক্তন জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা অন্ডালের বিধায়ক অরূপ খাঁ বলেন, “কর্মসূচিতে তিনি পিকের টিমের মত অনুযায়ী কাজ করছেন। আবার তিনি ঠিকঠাক কাজ করছেন কিনা সেই রিপোর্ট যে অন্যখান থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে, সেই কথাও বলেন অরূপ খাঁ।

অন্যদিকে তৃণমূলের বিষ্ণুপুর জেলা সভাপতি শ্যামল সাঁতরা অবশ্য জানান, এতে আদতে দলের মঙ্গলই হবে। তিনি বলেন, “সন্দেহ নেই, এতে দিদিকে বলো কর্মসূচি আরও জোর পাবে।” সবকিছু মিলিয়ে তৃণমূলের এই নতুন রণনীতিকার এবং নির্বাচনী বৈতরণীতে তৃণমূলের নিযুক্ত নতুন কান্ডারী কি করে সব বাধা পার করে তৃণমূলের তরীকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং প্রশান্ত কিশোরের এই নতুন নতুন রণনীতি প্রান্তিকস্তরের তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাজ করতে কতটা বেশি আগ্রহী করতে পারে এবং জনগণের মধ্যে এই সমস্ত কর্মসূচি তৃণমূলের অনুকূলে কত সুন্দর আবহাওয়া তৈরি করতে পারে! তা নিয়ে প্রশ্ন সকলেরই মনে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!