এখন পড়ছেন
হোম > রাজনীতি > তৃণমূল > রাজ্যপালই পথের কাঁটা? এবার তাকেও সরাতে চায় নবান্ন! সাঙ্ঘাতিক সাহস ব্রাত্যর!

রাজ্যপালই পথের কাঁটা? এবার তাকেও সরাতে চায় নবান্ন! সাঙ্ঘাতিক সাহস ব্রাত্যর!


প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-তৃণমূল সরকারের আমলে যারা যারাই রাজ্যপাল হয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত মানেননি, তাদেরকেই যা ইচ্ছে তাই বলে আক্রমণ করতে দেখা গিয়েছে সরকার পক্ষের নেতা মন্ত্রীদের। অতীতে জগদীপ ধনকরের ক্ষেত্রেও একই জিনিস হয়েছে। আর বর্তমানে সিভি আনন্দ বোসের ক্ষেত্রে সেই সব সীমা কার্যত অতিক্রম করে গিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। উপাচার্য নিয়ে সংঘাতের যে আবহ তৈরি হয়েছে রাজ্যে, তাতে মনে করা হচ্ছে যে, এই রাজ্যপাল পদটাই তুলে দিতে চাইছেন তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীরা। তাদের সুবিধে হয়, যদি এই সাংবিধানিক পদটাই না থাকে, তাহলে তারা নিজেদের একুশে আইন যেভাবে হোক, সেভাবে লাগু করতে পারবেন। এতদিন সরকারের এই রাজ্যপাল পদে নিয়ে কি ইচ্ছা রয়েছে, তা নিয়ে গুঞ্জন চলছিল। আর এবার রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্যের পর কার্যত স্পষ্ট হয়ে গেল যে, এই সাংবিধানিক পদটাই সহ্য হচ্ছে না তৃণমূলের। এবার তারা সেই পদ যাতে তুলে দেওয়া হয়, তার পক্ষে সওয়াল করতে শুরু করলেন।

প্রসঙ্গত, এদিন তৃণমূল শিক্ষাসেলের একটি কর্মসূচিতে গিয়ে রাজ্যপাল পদকে সাদা হাতির সঙ্গে তুলনা করেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বলেন, “ব্রিটিশ আমলে মাদ্রাজ, বোম্বে, কলকাতায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য এই পদ তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এটা একটা সাদা হাতির মত পদ। কেন্দ্রীয় সরকার তো ব্রিটিশ আমলের সবকিছু পরিবর্তন করতে চাইছে। তাহলে এক্ষেত্রেও পরিবর্তন করা হোক।” তবে শিক্ষা মন্ত্রীর এই মন্তব্যের পর পাল্টা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

অনেকে বলছেন, একজন মন্ত্রী কি করে এই ধরনের কথা বলতে পারেন? রাজ্যপাল তো সাংবিধানিক পদ! শুধুমাত্র তিনি সরকারের বিরুদ্ধে কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলেই তাতে এত ঔদ্ধত্য হয়ে যাবে সরকারপক্ষের যে, তারা সেই পদ তুলে দেওয়ার জন্য এবার সওয়াল করতে শুরু করবেন! বর্তমানে সিভি আনন্দ বোসের কাজ এই রাজ্য সরকারের নাকি সহ্য হচ্ছে না! কিন্তু অতীতে যে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তখন তাকেও এই রাজ্যেথ শাসকদলের সহ্য হচ্ছিল না। তাকেও যা ইচ্ছে, তাই বলে আক্রমণ করতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল সরকারের নেতা মন্ত্রীদের। তবে এখন আবার নাকি সেই জগদীপ ধনকর তাদের কাছে ভালো হয়েছেন!

তৃণমূল বলছে যে, জগদীপ ধনকর অন্তত আলোচনার টেবিলে বসতেন। তবে বর্তমান রাজ্যপাল সেই আলোচনা না করে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। আর তাতেই গায়ে ছ্যাকা পড়ছে এই শাসকদলের। তাই কোনোভাবেই যখন রাজ্যপালকে আয়ত্তে আনা যাচ্ছে না, তখন শেষ পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রীর গলায় শোনা গেল ভয়ংকর কথা।বিরোধীদের দাবি, রাজ্যপাল একটি সাংবিধানিক পদ। রাজ্যের সরকার নির্বাচিত হতে পারে। কিন্তু রাজ্যপাল তাদের মাথার ওপরে রয়েছেন। রাজ্যের সরকার যাতে অবৈধ কোনো কাজ করতে না পারে, তার জন্যই এই পদের সৃষ্টি। কিন্তু এবার তাকেও বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে তৃণমূল কংগ্রেস।

তবে সব তো তাদের কথামতো চলবে না। তারা অন্যায় করে যাবে, বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে, আর তা মেনে নেবেন রাজ্যপাল, এটা হতে পারে না। রাজ্য সরকারের লজ্জা হওয়া উচিত যে, উপাচার্য নিয়ে সংঘাত তারা মেটাতে পারে না। শেষ পর্যন্ত সেখানে হস্তক্ষেপ করতে হয় শীর্ষ আদালতকে। কিন্তু সেই লজ্জাবোধ না থেকে আরও নির্লজ্জ হয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী এবার রাজ্যপাল পদটাকেই তুলে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করলেন। যা দেখে বিরোধীরা এটাও বলছেন যে, অনেক রাজ্যেই বিজেপি বিরোধী সরকার রয়েছে। সেখানে রাজ্যপালকে নিয়ে এত সমস্যা হচ্ছে না। যত সমস্যা সব পশ্চিমবঙ্গে। কারণ তৃণমূল সংবিধান মানে না।

পর্যবেক্ষকদের মতে, একজন শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে এই ধরনের মন্তব্য আশা করা যায় না। এতদিন রাজ্যপালকে যা ইচ্ছে তাই বলে গিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীও তার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। সাংবিধানিক প্রধানের বিরুদ্ধে একটি নির্বাচিত সরকার শুধুমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে এই ধরনের কথা বলতে পারে কিনা, সেটাও প্রশ্ন। তারা ক্ষমতা পেয়েছে বলে কি মানুষ তাদের সব লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছেন যে, তারা যাকে ইচ্ছা অপমান করবেন! একজন রাজ্যপালের বিন্দুমাত্র সম্মান থাকবে না পশ্চিমবঙ্গে? এই কি গণতন্ত্র?

আর এবার সবকিছুর সীমা ছাড়িয়ে যে ভয়ংকর কথা শিক্ষা মন্ত্রী বললেন, তাতে প্রশ্ন উঠছে তার ভূমিকা নিয়েও। শুধু তৃণমূলের একজন নেতা নন, তিনি তো রাজ্যের একজন মন্ত্রীও বটে। এতদিন তিনি এত কথা বলে গিয়েছেন রাজ্যপালকে। রাজ্যপাল কিন্তু পাল্টা কোনো পদক্ষেপ তার বিরুদ্ধে নেননি। কিন্তু তারপরেও একটি বিষয় নিয়ে শুধুমাত্র বিরোধীতার জন্য সেই রাজ্যপাল পদকেই তুলে দেওয়ার যে সওয়াল করলেন ব্রাত্যবাবু, তাতে সকলে বলছেন যে, এই রাজ্যপালকে ভয় পেতে শুরু করেছেন নবান্ন। তাই কোনোভাবেই যখন টাইট দেওয়া যাচ্ছে না, শেষমেশ সেই পদকেই তুলে দেওয়ার আওয়াজ তুলতে হলো শিক্ষামন্ত্রীকে। দিনের শেষে তেমনটাই দাবি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!