এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > শেষ বেলায় – ছোট গল্প – কলমে জয়তী

শেষ বেলায় – ছোট গল্প – কলমে জয়তী


প্রিয় বন্ধু মিডিয়া  –পুলিন কি সব বুঝে ফেললো? কি করে? মঞ্জুলিকা তো কখনো বুঝতে দেয়নি ! তবে? মনের ভেতরের ঝড় চেপে রেখেছে অনেক করে, তবে কি করে বুঝলো পুলিন? মঞ্জুলিকা নিজের ঘরের চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো, পুরো ঘরে ঐশ্বর্যের প্রাচুর্যের ছাপ, কি নেই সেখানে দামি দামি আসবাব, দামি টাইলস, ফাইভ ষ্টার হোটেল, তবু সব থেকেও কিছু নেই। এই ঘরেও মঞ্জুলিকা সেই আগের মঞ্জুলিকাকে খোঁজে। আগের ঘরটাকে খোঁজে , যে ঘরে ও পুলিনকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন দেখতো। মায়ের বলা কথা নিয়ে লজ্জা পেয়ে এই ঘরে লুকোতো, সেই সাদামাটা ঘরটা। সেখানে কত স্বপ্ন ছিল, আলো ছিল। আজ অনেক কিছু থাকলেও এই ঘরটাতে মাঝে মাঝে দম বন্ধ হয়ে যায় মঞ্জুলিকার।

আগে মঞ্জুলিকার জীবনটা অন্যরকম ছিল। অভাব ছিল কিন্তু সুখ ছিল। বাবা সংসারে কোনো দিন মন দেয়নি, দিদির ১৮ হতেই কোনো মতে বিয়ে দিয়েছিলো সরকারি চাকুরেছেলের সঙ্গে, দিদি পড়াশোনায় ভালো ছিল টাকা নেই, দেখতেও আহামরি সুন্দরী নয় তাই হাতে আসা ছেলেকে হাতছাড়া করতে চায়নি বাবা। মায়ের একপ্রকার অনিচ্ছাতেই দিদির বিয়ে হয়ে যায়। মায়ের সব স্বপ্ন পূরণের দ্বায়িত্ব নিয়েছিল মঞ্জুলিকা। পড়াশোনা, মায়ের হাতে হাতে রান্না শেখা, সেলাই শেখ এই নিয়েই থাকতো সে। হঠাৎ একদিন এসে হাজির হলো পুলিন বলে একজন। সে ডাক্তারি পড়ছে পাশের ফ্ল্যাটের অনিতা কাকিমার দাদার ছেলে। অনিতা কাকিমার কেউ নেই, এদিকে পুলিনের ও বাবা মা মারা গেছে সদ্য, পিসিই একমাত্র ভরসা।

সে হোস্টেলে থাকে। এখানে ছুটিতে এসেছে। অনিতা কাকিমার সাথে মঞ্জুলিকাদের খুব ভাব, মা আর অনিতা কাকিমা হরিহর আত্মা বন্ধু বললেও কম হবে। মঞ্জুলিকাকে খুব ভালোবাসতেন কাকিমা। কাকিমার কোনো ছেলে মেয়ে নেই, এই ভাইপোই তাঁর সব। কাকু ছিলেন ব্রাম্ভন আর কাকিমারা অব্রাম্ভন, যে কারণে তাদের বিয়েটা পরিবারের কেউ মেনে নেননি। কাকু মারা গেছেন অনেকদিন। কাকিমা একটা চাকরি করেন একাই থাকতেন।

মঞ্জুলিকার মা খুব ভালো রান্না করতো, মাঝে মাঝেই মঞ্জুলিকা তরকারি দিয়ে আসতো কাকিমাকে। মায়ের কাছে রান্না শিখে লুচি আর আলুর দম রেঁধে কাকিমার বাড়িতে দিতে গিয়েছিলো মঞ্জুলিকা,বেল বাজলে পুলিন দরজা খুলে দিয়েছিলো। সেই প্রথম দেখা পুলিনের সঙ্গে। হাতে লুচি আর আলুর দম নিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে ছিল মঞ্জুলিকা।

অনেকে সুন্দরী দেখেছে পুলিন, কিন্তু এমন মিষ্টি একটা মেয়েকে দেখে চোখ আটকে গিয়েছিলো ওর। মেয়েটা কেমন ইতস্তত করছে দেখে সরে দাঁড়িয়েছিল দরজা থেকে।

পুলিন আস্তে করে জিজ্ঞাসা করেছিল – কাকে চাই ?

মঞ্জুলিকা তোতলাতে তোতলাতে মাথা নিচু করে বলেছিলো – কা কা কাকিমা নেই?

পুলিন কিছু বলার আগেই কাকিমা ভেতর থেকে – কে এলো রে পিলু ? জিজ্ঞাসা করতে করতেই বেরিয়ে এসে মঞ্জুলিকাকে দেখে – ও মা মঞ্জু তুই? বাইরে কেন রে? হাতে কি? আয় ভেতরে আয়।

মঞ্জুলিকা – মা এটা পাঠিয়ে দিয়েছে বলে কোনো মতে কাকিমার হাতে টিফিন বক্সটা ধরিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছিলো।

কাকিমা – এই দাঁড়া দাঁড়া, পালাচ্ছিস কেন? জানিস পলু এই হচ্ছে মঞ্জু। কাল রাতে যার হাতের রান্না করা সুক্ত খেয়ে তুই কি সুন্দর কি সুন্দর করছিলি। আর মঞ্জু ও হলো পুলিন, পিলু, যার কথা বলি তোকে।

এবার মঞ্জুর মুখটা আরো লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। বস তোরা দুজনে কথা বল আমি আসছি এটা রান্না ঘরে রেখে।

কাকিমা ভেতরে গেলো, মঞ্জুলিকা বসলো না দাঁড়িয়ে রইলো, পুলিন কাছে এসে বললো, খুব ভালো হয়েছিল রান্নাটা। আর একবার খাবার ইচ্ছা রইলো। আর দাঁড়ায়নি মঞ্জুলিকা, ছুটে পালিয়েছিলো। পুলিন কারণটা বোঝেনি, অবাক হয়েছিলো।

না এত কথা অবশ্য পুলিন জানে না, সে সবেমাত্র কাল রাত্রে এসেছে। হোস্টেলের রান্না খেয়ে খেয়ে মুখ পচে গিয়েছে, পিসির হাতের সব রান্না অমৃত লেগেছে, তবে ওই সুক্তটা আরো বেশি ভালো লেগেছে। কতদিন পরে খেয়েছে, খুব ভালো হয়েছে বলতেই পিসি বলেছে – মঞ্জু রেধেছে।

পুলিন – কে মঞ্জু ?

অনিতা – আছে, আমার একটা মিষ্টি মেয়ে, কাল পরিচয় করবো তোকে! আচ্ছা, একটা কথা, তোর কাউকে পছন্দ করা নেই তো?

পুলিন – এটা নিয়ে কবার হলো? রোজ ফোনে জানতে চাও, আমি উত্তর দিয়েছি অনেকবার, কেউ নেই।

অনিতা – স্বস্তির হাসি হেসে বলেন – বেশ, কাল তাহলে একটা কথা বলবো।

সব কথা বলেছে কাকিমা, বলেছে মঞ্জুর সাথে ওর বিয়ে ঠিক করেছে তারা। বলেছে – আর তো মোটে কটা দিন তারপরে বিয়ে দিয়ে দেব, তুই ডাক্তারি করবি আর মঞ্জু পড়বে না হয়। কিছু সাড়া দেয়নি পুলিন।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

ওই কদিন মঞ্জু দু একবার এসেছে অনিতাদের বাড়িতে , মঞ্জুর মা ও এসেছে পুলিনকে দেখে তার মন ভরে গেছে। মঞ্জু নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে, খুব লজ্জা হয়েছে ওর, সামনে থেকে পালিয়ে বেঁচেছে। পুলিন ও নিজের মনে স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করেছে।

এর পর দু একবার এসেছে পুলিন মঞ্জুকে দেখার ছল করে, মঞ্জু সামনাসামনি হলেও কথা বলেনি , পুলিন দু একবার কথা বলতে শুরু করেছে তবে মঞ্জু হ্যা না বলেই হাওয়া। পুলিনের কথা ফুরোতে চায়নি, কিন্তু মঞ্জু যে হ্যা না এর বাইরেই বের হয় না। সবার সামনে কি কথা বলবে। পিসিও তেমন দুজনকে এখনই একা ছাড়তে চায় না। আশ্চর্য বিয়ে ঠিক করছো অথচ একা একটু ছাড়তে কি হয় – মনে মনে রাগ হলেও মুখ ফুটে কিছু বলে না সে।

অনিতাও সাহস পায় না – দুজনেরই উঠতি বয়স, কি থেকে কি হয়, এখনো মঞ্জুর বাবা কিছু বলেনি, শুধু একটাই কথা আগে পাশ করুক তারপর কথা বার্তা হবে।

এদিকে, মঞ্জুলিকা HS পরীক্ষা দিয়েছে, মা বাবার কানের কাছে খালি পুলিনের কথা বলে। বাবা বলে – আঃ চুপ করো, সামনেই ভোট আসছে , পার্টির অনেক কাজ। এবারেও আমাদের ক্ষমতায় আসতে হবে, আশীষদা বলেছেন এবারে ভালো করে খাটলে পঞ্চাননদাকে বলে আমাকে একটা পুসভার টিকিট করিয়ে দেবে। একবার আমি জিতে কাউন্সিলর হলে ভাবতে পারছো?

মঞ্জুলিকার মা সাদা মাটা মানুষ – তার এসবে মন নেই। তিনি বলেন – কি হবে ওসব হয়ে , বেশ তো চলছে , দরকার নেই ওসবের, মঞ্জুটাকে পুলিনের হাতে দিতে পারলেই আর কিছু চাই না। তুমি একবার পুলিনের সাথে কথা বলো।

বাবা ধমক দিয়ে বলে – সাধে কি বলে মূর্খ মেয়েমানুষ, চুপ করে থাকো, কি হবে কাউন্সিলর হয়ে? স্বামীর ধমক খেয়ে চুপ করে যান তিনি।

পঞ্চানন চ্যাটার্জী রাজ্যের শাসকদলের দু নাম্বার নেতা ছিলেন। কিন্তু শাসকদলের বর্তমান মুখমন্ত্রী কালীচরণবাবু বয়স হয়ে যাওয়ায় পঞ্চাননবাবু মুখমন্ত্রী মুখ হচ্ছেন এবারের ভোটে। আশীষ হলো তার খাস লোক, তিনি বিধায়কও বটে, আর আশীষ এর খাস লোক মঞ্জুলিকার বাবা। এই আশীষদা বড় মেয়ের জন্য সম্মন্ধ এনেছিলেন, বয়স একটু বেশি ছিল ছেলের তবে ভালো ঘর, চেন্নাইয়ে বড় কোম্পানিতে চাকরি করে।

আর এবার আবার আশীষ বিধানসভায় লড়ছে। সামনেই পঞ্চানন চ্যাটার্জীর বাড়িতে কালী পুজো। সেই পুজোতে সবাই নিমন্ত্রণ পায় না। এবারে আশীষদা মুঞ্জুলিকার বাবা প্রদীপকে যেতে বলেছে পরিচয় করিয়ে দেবে বলে। পরিবার নিয়েই যেতে বলেছেন তিনি। মঞ্জুলিকার মা যেতে চাননি, কিন্তু স্বামীর উপরে জোর করতে পারেননি। মেয়েকে নিয়ে গিয়েছেন।

আর সেখানেই সবচেয়ে বড় ভুলটা করেছেন তিনি। মঞ্জুলিকার রূপ যেন ফেটে পড়েছে সেদিন। কালীপুজো মেয়েকে একটা শাড়ী পরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তিনি কি সর্বনাশ হতে চলেছে মঞ্জুলিকার।

পুজোতে অনেক লোক এসেছে, এক কোণে মেয়েকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মঞ্জুলিকার মা। কত লোক, অনেকবার দেখেছে মঞ্জুলিকা tv তে এই পঞ্চাননকে, আজ সামনে সামনি দেখছে।পঞ্চানন বলেছে আজ কথা হবে না, সে ব্যাস্ত। পুজো মিটলে খাওয়াদাওয়া করে যেন বাড়ি যায়। মঞ্জুলিকার বাবা আশীষদার সাথে কথা বলে বেজার মুখ করে ওদের পাশে এসে দাঁড়ালো। কিছুক্ষন পর ডাক এসেছে, পঞ্চানন ডেকে পাঠিয়েছে। পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে দেখা করতে গেছে মঞ্জুলিকার বাবা।

আশীষ পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। পঞ্চানন এগিয়ে এসে – এটি কে?

মঞ্জুলিকার বাবা – আমার ছোট মেয়ে।

পঞ্চানন – বাহ্, এদিকে এস।

মঞ্জুলিকার বাবা – প্রণাম করো

পঞ্চানন – থাক, বলে মঞ্জুলিকাকে দুই হাতে শক্ত করে ধরেছে। ভালো লাগেনি মঞ্জুলিকার। কাছে টেনে নিয়ে ওকে এক হাত দিয়ে চেপে ধরেছে পঞ্চানন। ছাড়াতে চেয়েছে মঞ্জুলিকা পারে নি। অস্বস্তি হয়েছে খুব।
পঞ্চানন হেসে হেসে কথা বলেছে।

মঞ্জুলিকার মা সবটা বুঝতে পেরেছেন, কিন্তু কি বলবেন? তিনি বুদ্ধি করে বলেছেন – দাদা আমরা ঠাকুর দেখিনি একটু মাকে প্রণাম করে আসি। আয় মঞ্জু।

এত লোকের সামনে আর কিছু বলতে পারেন নি তিনি। ছেড়ে দিয়েছিলেন মঞ্জুকে। এতক্ষনে ঠিকঠাক নিঃশ্বাস নিতে পেরেছিলো মঞ্জু। এতক্ষন দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো ওর। বাড়ি এসে মঞ্জুলিকার মা সবটা বলেছেন স্বামীকে , স্বামী কান দেননি। ধমকে চুপ করিয়ে দিয়েছে। তার স্বপ্ন পূরণের মাঝে এসব উটকো ঝামেলা।

মঞ্জুলিকার মায়ের ভয়ে বুক কেঁপেছে। তিনি ঠিক করেছেন যাই হোক পুলিনের সাথে বিয়েটা কিছুদিনের মধ্যেই দিয়ে দেবেন। এদিকে বার বার ডাক পড়ছে। হতাহত মঞ্জুলিকার মা শুনেছে – মঞ্জুলিকার বাবাকে এবার বিধানসভার টিকিট দিচ্ছে পঞ্চাননবাবু। কারণ কি? মায়ের মনে কু ডাকতে শুরু করেছে।

মাঝে মাঝেই পুলিনের প্রসঙ্গ তুলছেন বাবার কাছে, বাবা এড়িয়ে যাচ্ছেন। একটাই কথা – আঃ এখন জ্বালিওনা, আমাকে জিততেই হবে। অনেক কাজ, সারাদিন নেওয়া খাওয়ার সময় নেই, মেয়ে কি পালাচ্ছে, পড়ুক এখন। ভোট জিতলেই মন্ত্রী হবো পঞ্চাননদা বলেছে। তারপর আমাকে লোকে সেলাম ঢুকবে, তুমি হবে মন্ত্রীর স্ত্রী। সে মন্ত্রী, ক্ষমতা পাবার লোভেই অন্ধ হয়ে গেছে। মা বোঝে সবটাই, কখনো ভয় করে মেয়েটার আবার কখনো মনে হয় না বেশিই ভাবছেন।

এদিকে কয়েকবার এসেছে পুলিন। দূরত্ত্ব কমেছে পুলিন আর মঞ্জুলিকার। কথা বলে এখন মঞ্জুলিকা মাথা নামিয়েই। পুলিন এটা খাবো ওটা খাবো ফরমাস করে, মঞ্জুলিকা রান্না শেখার অজুহাতে সেই সব বানিয়ে কাকিমাকে দিয়ে আসে, একটা পাঞ্জাবিতে কাজ করে দিয়েছে পুলিনকে, লুকিয়ে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে রাত্রে লুকিয়ে লুকিয়ে নকশা তুলেছিল কেউ জানে না। পুলিন কথা দিয়েছে সে ওই পাঞ্জাবিটা অনেক যত্ন করে রেখে দেবে। তবে এখনো কাকিমা একা ছাড়ে না দুটোকে, ওই কাকিমার অনুপস্থিতিতে একটু আধটু যা কথা হয়। ভালোলাগার অনুভূতিগুলো মনের কোন থেকে মুখ দিয়ে বের হতে গিয়েও কাকিমাকে দেখে ভেতরেই থেকে যায়, শুধু চোখে চোখে কথা হয়। দুজনের দুজনের কথা ভাবতে ভাবতেই কেটে যায় সময়।

মোবাইল নাম্বার দিয়েছে দুজন দুজনকে। রাত্রে একটু আধটু কথা হয়। সামনে পরীক্ষা তাই মা খুব একটা মোবাইল ঘটতে দেয়না মঞ্জুকে। ফাঁক পেলে সেই ম্যাসেজ করে। দুজনের মধ্যে চলে কথাবার্তা। তবুও এমন কিছু নয়। মঞ্জুলিকা যেন বড্ডো লাজুক, সারাক্ষন ভয়ে থাকে। মঞ্জুলিকা পড়াশোনায় ভালো তারও ইচ্ছা সে ডাক্তার হবে পুলিনের মতো, একসাথে দুজনে মানুষের সেবা করবে। পুলিন উৎসাহ দেয়।

সেবার যখন পুলিন এলো। ম্যাসেজ করেছিল মঞ্জু পুলিনকে ছাতে যেতে বলেছে, দুপুরে সবাই ঘুমালে পা টিপে টিপে ছাতে গিয়ে দেখেছিলো পুলিন দাঁড়িয়ে আছে। ভয় হয়েছিল কেউ যদি দেখে ফেলে, পাঞ্জাবির প্যাকেটটা হাতে দিয়েই পালিয়ে আসতে চেয়েছিলো। পুলিন হাতটা ধরে নিয়ে যেতে দেয়নি। সেই প্রথম হাতে হাত ঠেকা, দু তরফেরই বুকের ভেতরটা ঢক ঢক করে উঠেছিল। পুলিন হাত ধরে ওকে কাছে টেনে নিয়েছিল – ভয় পেয়েছিলো ও। ওর বাবা এইসব পছন্দ করেনা। দিদির একটা ছেলের সাথে ভালোলাগা শুরু হয়েছিল আর তাই এত ছোটতে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলো বাবা, মায়ের হাজার বারন স্বত্তেও।

মঞ্জুলিকা – ছাড়ো, কেউ দেখে ফেলবে!

পুলিন – কে দেখবে? এত গরমে ছাতে কে আসবে?

মঞ্জুলিকা – তুমি তো এসেছো ?

পুলিন – সে তো কেউ একজন ডেকেছে বলে। তবু যার জন্য আসা সেই পালাই পালাই করছে।

মঞ্জুলিকা – বাবা দেখে ফেললে খুব খারাপ হবে।

পুলিন আরো কাছে টেনে নিয়েছে মঞ্জুলিকাকে বলেছে কি খারাপ হবে?খুব তাড়াতড়ি বিয়ে দিয়ে দেবে, আর যদি না দেয় তাহলে তোমাকে নিয়ে কেটে পড়বো। তোমার বাবা আমাদের টিকিও খুঁজে পাবে না।

মঞ্জুলিকা – বাবা! বলে থেমে গেছে যেন বাবাকে দেখতে পেয়েছে। চমকে উঠে পুলিন ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছে মঞ্জুলিকাকে।

মঞ্জুলিকা – হুম, বীরপুরুষ, এতেই ভয়ে ছেড়ে দিলো আর সে নাকি আমাকে নিয়ে পালাবে। বলে ছুটে পালিয়েছে চেষ্টা করেও ধরতে পারেনি পুলিন।

মিথ্যা রাগ দেখিয়েছে পুলিন, ম্যাসেজ করে ক্ষমা চেয়েছে মঞ্জুলিকা, কাজ হয়নি, পুলিন কোনো রিপ্লাই দেয় নি। মঞ্জুলিকা কেঁদে রেঁধে ভাত বেড়েছে, শেষে পুলিন মেনেছে একটাই শর্তে। মঞ্জুলিকার জন্য একটা আংটি এনেছে সে মঞ্জুলিকাকে পরে থাকতে হবে সেটা, কে দেখবে, কি বলবে মঞ্জুলিকা তা সে জানে না। রাজি হয়েছে মঞ্জুলিকা, আংটি নিয়েছে সেই ছাতে গিয়ে পড়েছে। পুলিন পরিয়ে দিয়েছে ওকে। বাড়িতে বলেছে ইমিটেশন এর, ও কিনেছে। না কেউ কিছু সন্দেহ করেনি। মা হয়তো আন্দাজ করেছে, কিন্তু কিছু বলেনি। পরে থাকে মঞ্জুলিকা আংটিটা আজকেও পরে আছে।

আর সেটার দোহাই দিয়েই পুলিন আজ ওকে অনেক কথা বলেছে। অনেক প্রশ্ন করেছে যার জবাব ওর কাছে নেই, পুলিন আংটিটা ফেরত চেয়েছে, দিতে পারেনি মঞ্জুলিকা-বলেছে হাত থেকে খুলছে না পরে খুলে দেবে। কলকাতার বড় গয়নার দোকানে কথা বলে ওই একই ডিজাইনের আন্টি বানাতে দিয়েছে, পুলিনের হাতে সেটা দিয়ে বলবে ফেরত দিলো। জানে না পুলিন বিশ্বাস করবে কিনা, কিন্তু কি করে ? কি করে ও যাবে পুলিনের সাথে ?কি করে ঘর বাধবে? ও যে আর আগের মঞ্জুলিকা নেই।

সেবার ভোট মিটে যাবার পরেই বদলে গিয়েছিলো জীবনটা। ভোট হয়ে গেছে, বাবা জিতলেও তেমন বেশি আসন পায় নি দল, যে কারণে অন্য এক দলের সাথে জোট করে সরকার গড়তে হয়েছিল । সেই কারণে মন্ত্রিত্ব নিয়ে ডামাডোল চলছে। এদিকে রেজাল্ট বের হয়ে গেছে, বাবার ইচ্ছা না থাকায় জয়েন্টে বসতে পারেনি মঞ্জুলিকা। তার বদলে বড় কলেজে ভর্তি হয়েছে।

কয়েকদিন কেটে গেছে। পুলিনের কাকার মেয়ের বিয়ে তারা থাকে দিল্লিতে। সেখানে বিয়েতে যোগ দিতে গেছে পুলিন আর অনিতা। এমন সময় বাবা বেনারসি শাড়ী আর একগুচ্ছ গয়না নিয়ে এসে বলেছে মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছেন। পঞ্চাননদা বিয়ে করতে চায় তাঁর মেয়েকে। তাই আজকে সন্ধ্যেবেলাতেই বিয়ে হবে পঞ্চাননদার বাড়িতে।বাবা জানিয়েছে মেয়ে কলেজ থেকে এলেই মেয়েকে যেন সাজিয়ে দেন মা। তারপর সবাই মিলে রওনা দেবেন। মায়ের মাথায় মাজ পড়েছে।

মা কেঁদে বলে – একি বলছো ? তোমার মাথা ঠিক আছে। পঞ্চানন তোমার থেকেও যে বড় , আর মেয়ে মোটে ১৮ বছর। না এই বিয়ে হবে না। এই বিয়ে তিনি হতে দেবেন না। অনিতাকে কথা দেওয়া আছে পুলিনের সাথেই মেয়ের বিয়ে দেবেন তিনি।

বাবা জানিয়েছে – রাজ্যের মুখমন্ত্রীর সাথে বিয়ে দিলে সমাজে তার স্থান কোথায় যাবে সেটা যেন ভেবে দেখ, রাজধর্ম পালন এত সহজ নয়, অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়।

মা বাবার পায়ে ধরেছে, না কাজ হয়নি। বাবা এই বিয়ে দেবেই। বাবা বলেছে -পঞ্চানন এর বয়স না হয় বেশি আর কি অসুবিধা, বৌ মরে গেছে কোন কালে। এক মেয়ে তার বিয়ে হয়ে গেছে সে বিদেশে থাকে, বাপের তেমন খোঁজ নেয়না, বয়সের ভারে অসুস্থ একটু তার বেশি কি ? এত সম্পত্তি সব ভোগ করবে তার মেয়ে, টাকার পাহাড়ে বসে থাকবে। এমন ভাগ্য কজনের হয়।

বার বার বলেছে – ওগো মেয়েটার এমন সর্বনাশ কোরোনা, তুমি যে ওর বাবা। পুলিনকে ও ভালোবাসে, ওর যে পুলিনের সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। মেয়েটা মরে যাবে। আমি পায়ে ধরছি তোমার।

বাবা – আঃ ছাড়ো, ভালোবাসা ! ওসব ভালোবাসতে কিছু হয়না , তুমিও আমার থেকে অনেক ছোট, আর তাছাড়া পুলিনের সাথে কে বিয়ে ঠিক করেছে?আমি মত দিয়েছি? কত টাকা কমায় সে? পঞ্চাননদার টাকা পয়সার হিসেবে যেন। কত লক্ষ কোটি টাকার মালিক সে। আমি তার স্বশুর হবো, দলে পঞ্চাননদার পরে আমার স্থান হবে। মন্ত্রিত্ব, ক্ষমতা, টাকা পয়সা উফফ ভাব, ভাবতে পারছো।

মা – তুমি পাষণ্ড, ক্ষমতার জন্য এত নিচে নামবে? নিজের মেয়েকে ওই রাখোসটার হাতে তুলে দেবে। আমি হতে দেব না এই বিয়ে।

মাকে এক চড় মেরে ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে. কাকে বলবেন কি করবেন? ওই ঘরে যে কোনো ফোন নেই। কলেজে গিয়ে মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছেন পঞ্চানন এর বাড়িতে।

মা জানালা দিয়ে দেখে কোনোমতে রাস্তার বাইরে ওদের চেনা পরিচিত একজনকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছে আশীষকে। আশীষ খবর পেয়ে এসেওছে। দরজার বাইরে পাহারা দিচ্ছে লোকজন, তারা ঢুকতে দিতে নারাজ , আশীষের ধমকে সরতে বাধ্য হয়েছে। আশীষ ভেতরে গিয়ে মঞ্জুলিকার মায়ের থেকে সব শুনে ছুটেছে এই বিয়ে আটকাতে, সাথে মা।

বলা হয়নি আশীষ খুব ভালো মানুষ। রাজনীতির সাথে অনেকদিন যুক্ত থাকলেও তাঁর গায়ে কোনো দিক থেকে কেউ কোনো কাদা ছেটাতে পারেনি , সে যত বড় বিরোধী হোক না কেন? মঞ্জুলিকার বাবাকে ভাই বলেন, আর মঞ্জুলিকার মাকেও বোনের মতোই সম্মান করেন। মঞ্জুলিকাদের দুই বোনকে মেয়ের মতোই ভালোবাসেন। তাই তিনিও ছুটলেন মঞ্জুলিকাকে বাঁচাতে। কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। গিয়ে দেখেছেন বিয়ে হয়ে গেছে। মঞ্জুলিকা পাথরের মতো বসে আছে, কে আসছে কে যাচ্ছে, কোথায় কিছু খেয়াল নেই যেন?  মা মঞ্জুলিকার মাথায় সিঁদুর দেখে আর পারেননি বসে পড়েছেন মাথায় হাত দিয়ে। আশীষ ডাকলো মঞ্জুলিকাকে – চলো এই বিয়ের কোনো মানে নেই,ওঠো তোমার মা এসেছেন। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখেছে মঞ্জুলিকা আশীষের দিকে।পঞ্চানন, আশীষ আর মঞ্জুলিকার বাবার তর্কাতর্কিও হয়েছে, কোনো কথা কানে যায়নি মঞ্জুলিকার, সে পাথর হয়ে গেছে, কি হচ্ছে কেন হচ্ছে কিছুতেই কিছু মনে হচ্ছে না। শেষে আশীষকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে পঞ্চানন। আশীষ কিছু করতে পারে নি – পঞ্চাননের মেয়েকে ফোন করেছে, সব বলেছে।

পঞ্চানন এই বয়সে বৌ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। মঞ্জুলিকার কি হয়ে গেছে, কি হতে চলেছে যেন কোনো হুশ নেই। তাকে যখন বাড়ির চাকরবাকর হাত ধরে ঘরে নিয়ে যাচ্ছে মা ছুটে এসে জড়িয়ে ধরেছে, বলেছে এই বিয়ে তিনি মানেন না। তাই মঞ্জুলিকাকে নিয়েই ফিরবেন। তাতেও কোনো হুশ নেই মঞ্জুলিকার, বাবা এসে ঢেলে সরিয়ে দিয়েছে- মা পরে গেছে, ধাক্কা লেগে অজ্ঞান হয়ে গেছে। জোর তর্কাতর্কি শুরু হয়েছে ফের। আশীষ মাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটেছে। এদিকে মঞ্জুলিকার ঠাঁই হয়েছে পঞ্চাননের ঘরে – ফুলসজ্জার ঘাট সাজানো। কতক্ষন এই ঘরে রয়েছে জানে না মঞ্জুলিকা – কিন্তু যত সময় গেছে, যত ফুলের গন্ধ নাকে ঢুকেছে ততই হুশ ফিরেছে মঞ্জুলিকার। বুঝতে অসুবিধা হয়নি, বিয়েটা আসলে শুধু মাত্র নাটক, আসলে তো তার শরীরের দরকার পঞ্চানন এর।
না মঞ্জুলিকার শরীর মন সমস্ত কিছুর উপর অধিকার শুধুমাত্র পুলিনের আর কাউকে ও কোনো অধিকার দেবে না সে। কিন্তু কি করবে ও? কি করে আটকাবে ওই লোকটাকে? মরে যাবে ও। ঘরটার চারিদিকে তাকালো শুধু ফুল আর মিষ্টি একটা গন্ধ যদিও মঞ্জুলিকার ওই গন্ধে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

চারিদিকে ভালো করে তাকিয়ে মঞ্জুলিকা দেখলো ঘরে ফলের একটা কারুকার্য করা ট্রে রয়েছে আর তাতে একটা ছুড়ি। না আর কিছু চাই না। এতেই হবে। পুলিন একবার ওকে শিখিয়েছিলো কোথায় পালস দেখতে হয়, হাতের কোন জায়গা কাটলে মারা যায়। আজ সেখানেই ছুরিটা চালাবে মঞ্জুলিকা। ছুরিটা হাতে নিলো সে, একটু কটাক্ষের হাসি হাসলো। এমন সময় দরজা খুললো কেউ, ছুরিটা হাতের পিছনে লুকালো মঞ্জুলিকা।

কেয়ারটেকার – স্যারের হার্ট এটাক করেছে ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ম্যাম, আপনি কিছু খেয়ে নিন। আমরা পরে জানাবো কেমন আছেন উনি।

মঞ্জুলিকা – কার?

কেয়ারটেকার – পঙ্কজনন স্যার এর ! আজ প্রেসারের ওষুধটা খেতে ভুলে গেছেন, একটু আগে ওনার মেয়ের সাথে ফোনে কথাকাটাকাটির সময় এট্যাক হয়।

স্বস্তি পেয়েছিলো মঞ্জুলিকা। সে চলে যাওয়ার পর ছুরিটা ফেলে দিয়েছিলো।

একটা ঘটনা মঞ্জুলিকাকে কত বড় করে দিয়েছে। বাবা না বলে কলেজ থেকে তুলে এনে বলেছে আজ বিয়ে, মঞ্জুলিকা কেঁদেছে , চায়নি বিয়ে করতে কিন্তু কাজ হয়নি। অনেক ভয় দেখিয়েছে , পুলিনকে মেরে ফেলার ভয়, আর পারেনি কিছু করতে রাজি হয়েছে।

কয়দিন পর পঞ্চানন বাড়ি ফিরেছে, কিন্তু তার শরীরে নিচের অংশ প্যারালাইসিস হয়ে গেছে, বিয়ে করে ফুলসজ্জা করার সাধ তার পূর্ণ হয়নি। বাড়িতে বড় বড় ডাক্তার এসেছে, বিদেশ থেকেও ডাক্তার এসেছে, যে করেই হোক ভালো হয়ে উঠতে হবে, মুখমন্ত্রীর তো আর ঘরে বসে থাকলে হবে না, তাছাড়া ফুলসজ্জাও যে বাকি !

পুলিন সব শুনেছে, জেনেছে। সেও পাথর হয়ে গেছে। পাথরই বটে, কারুর সাথে তেমন মেশেনা, কথা বলে না। শুধু পাগলের মতো লোকের সেবা করে, হসপিটালে পরে থাকে, ভুলতে চায় সব কিছু। এদিকে মন্ত্রিত্ব পেয়েছে মঞ্জুলিকার বাবা। তিনিই এখন দল সামলাচ্ছেন,পঞ্চাননের সব কাজ সেই করছে। আর ভেতরে ভেতরে নিজে গোষ্ঠী তৈরী করছে। আশীষ দল ছেড়ে বিরোধী দলে যোগ দিয়েছে। আর সেই দল কেন্দ্রের ক্ষমতায় আছে, এই জোটের সরকার ফেলতে তারাও মরিয়া।কেননা সে অনেক কিছু জানতে পেরেছে। জানতে পেরেছে কিভাবে তার আড়ালে প্রদীপ আর পঞ্চানন নোংরা রাজনীতি করেছে মঞ্জুলিকাকে নিয়ে। প্রদীপের সাথে ডিল হয়েছিল পঞ্চাননের মঞ্জুলিকাকে যদি পঞ্চাননের হাতে তুলে দেয় তাহলে পঞ্চানন প্রদীপকে টিকিট দেবে। প্রদীপ রাজনীতি ভালো বোঝে, সে দাবি করেছিল – জিতে যদি মন্ত্রিত্ব পায় তবে বিয়ে দেবে। সেই মতোই সব হয়েছে। যেহেতু জোটের সরকার তাই মন্ত্রিত্ব নিয়ে একটু ঝামেলা ছিল তাই মন্ত্রিত্ব পেতে দেরি হয়েছে। এদিকে বার্ধক্য জনিত রোগ আরো যেন চেপে বসছে পঞ্চাননকে, সেই সময়েই মেয়ে এসে হাজির। তার সাথে উত্তপ্ত বাক বিনিময় ফের হার্ট এটাক হয় পঞ্চাননের। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু শেষ রক্ষা হয়না। মারা যায় পঞ্চানন।

মঞ্জুলিকার মা কেমন যেন হয়ে গিয়েছিলেন এই কদিনে। কারুর সাথে কথা বলতেন না। শুধু মেয়ের ফটো বুকে নিয়ে বসে থাকতেন, কিন্তু পঞ্চাননের মৃত্যু সংবাদে তিনি এত কিছু কষ্ট পেলেন না , আনন্দই হলো তাঁর, আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠলেন। মঞ্জুলিকা এখন বাপের বাড়িতেই আছে। তবে আর বাইরে বের হয় না, পুলিন ও কাকিমার বাড়িতেই থাকে, তার যে কত স্মৃতি ওই বাড়িতে মঞ্জুলিকাকে নিয়ে।

অনেকে ভেবেছিলো যে মঞ্জুলিকার বাবা মন্ত্রী হয়ে ওই ফ্লাট ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবেন , কিন্তু না যাননি। কেননা কেউ একজন বলেছেন এই বাড়ি তার জন্য শুভ, এখানে থেকেই তিনি আজ মন্ত্রী-ভবিষ্যতে মুখমন্ত্রীও হতে পারেন। তবে আরো দু- চারটে ফ্লাটকে নিজের করে নিয়ে এটাকেই রাজপ্রাসাদ বানিয়ে নিয়েছেন।

মঞ্জুলিকার মা বাবাকে ফের বলেন যা হবার হয়ে গেছে এবার পুলিনের সঙ্গে কথা বলে ওদের বিয়েটা দিয়ে দিলে হয় না। এবার নিজের নগ্ন নোংরা মূর্তিটা আরো একবার বের করে আনলেন বাবা। তিনি বললেন – আমার মেয়ে বিধবা, রাজ্যের প্রাক্তন মুখমন্ত্রী পঞ্চানন বাবুর বিধবা তার আবার বিয়ে দেবার কথা বলো কি করে? দল ঠিক করেছে ওকে নেক্সট সিএম করা হবে। শুধু বাই ইলেক্শনটা জেতার অপেক্ষা। আর জোটের বাকি দলগুলো এখনো বাগড়া দিচ্ছে তাই নাহলে এখনই হয়ে যেত।

মঞ্জুলিকার মা চিৎকার করে বললেন – এবার ওকে বাঁচতে দাও। আর ওর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলো না। উতপ্ত কথা বিনিময় হলো। কাজের কাজ কিছু হলো না। মেয়েকে দেখে নিঃস্বাস ফেলতে ফেলতে একদিন শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করলেন।
পুলিন খবর পেয়ে ছুটে এসেছিলো, মুখোমুখি হয়েছিল দুজনে , মঞ্জুলিকা আর কিছু চায় না। কিন্তু সেদিন ওকে দেখে ফের একবার কথা বলতে ইচ্ছা হয়েছিল,ওকে জড়িয়ে ধরে উজাড় করে কাঁদতে ইচ্ছা হয়েছিল। কাঁদেনি। আর কান্না পায় না ওর।

এরপরেও চলেছে কদিন। নিজেকে পুলিনের সঙ্গে জড়াতে চায়নি, নিজের চাওয়া পাওয়াগুলোকে বুকের মধ্যে দমিয়ে রেখেছে। কি করে যাবে ও ? বাবার বদনাম, পুলিনের জীবন অনেক কিছুর জন্য নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে -গুটিয়ে নিয়েছে।

এদিকে বাবার মুখে চাকরির হাতের রান্না রোচে না, মঞ্জুলিকা রাধে তবু বাবা বলে – না হয়নি, তোর মা আরো ভালো রাঁধতো। বাবার উপর কোথাও আর টান ছিল না, শুধু নিজের বাবাকে কিকরে ঠেলে ফেলবে আর ফেলে যাবে কোথায়? তবে এই কথা শুনে ভালো লাগতো ওর। মনে হতো মাকে তো ভালোবাসতো।

এদিকে দলের ১ নম্বরে চলে গেছে মঞ্জুলিকার বাবা। পঞ্চানন অসুস্থ হবার পর থেকেই নিজেই সামলাচ্ছিলো দল, এদিকে পঞ্চাননের স্বশুর হওয়ায় সবাই মান্যি গন্যি করতে শুরু করে আর সেই সুযোগ নিতে দেরি হয়নি মঞ্জুলিকার বাবার। কয়েকদিন পরে হটাৎ একদিন মঞ্জুলিকার বাবার শরীর খারাপ হয় তিনি বিছানায় শয্যাশায়ী হন। বড় ডাক্তার আসেন, তার এসিস্টেন্ট হয়ে আসে পুলিন। সেই ডাক্তারের আবার পুলিনের উপর খুব ভরসা। তিনি এত খবর জানেন না। তিনি আদেশ করলেন পুলিন আর দুটো নার্স ২৪ ঘন্টা এই বাড়িতে থাকবে। অনিতা কাকিমা তার ভাইয়ের বাড়ি চলে গেছেন দিল্লি।

মঞ্জুলিকাদের বাড়িতে থাকে নি পুলিন। সারাদিন কাটিয়ে রাত্রে খেয়ে বাড়ি আসতো, মঞ্জুলিকা জানে কি খেতে ভালোবাসে পুলিন সব রান্না করে নিজে হাতে। পুলিনও খায় তৃপ্তি করে। আবার মনে মনে স্বপ্ন দেখে মঞ্জুলিকা-কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই থিতিয়ে যায়।

আজ বাবা অনেকটা সুস্থ – পুলিন বাবাকে নিয়ে কথা বলতে পাশের ঘরে একা মঞ্জুলিকাকে ডেকেছে।

মঞ্জুলিকাকে বলেছে – অনেক হলো – আর নয়, এবার পুলিন মঞ্জুলিকাকে বিয়ে করবে।

রাজি হয়নি মঞ্জুলিকা। সে জানিয়েছে – আমি পঞ্চানন এর বিধবা। আমি আর কেউকে বিয়ে করতে পারবো না।

পুলিন অনেক করে বোঝাবার চেষ্টা করেছে। বলেছে যে, যা হয়ে গেছে তা মনে রেখে কি লাভ , পুলিনের কিছু যায় আসে না তাতে, মঞ্জুলিকাকে সেদিনও যেমন ভালোবাসতো আজ ও তেমনি ভালোবাসে। মঞ্জুলিকার মা পিসি চাইতো বিয়ে হোক তাদের। আজ মঞ্জুলিকার মা নেই, তার শেষ ইচ্ছাটাকে কি সম্মান দেওয়া যায় না। কেন বিয়ে করতে চায় না মঞ্জুলিকা। তার মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করা কেন যায়না। রাজি হয়নি মঞ্জুলিকা। পুলিন হাতের আংটিটা খুলে ফেলতে বলেছে, খোলেনি মঞ্জুলিকা। বলেছে খুলছে না পরে খুলে দেবে। পুলিনকে ফিরিয়ে দিয়েছে। .

কদিন পর নতুন আংটি এসে গেছে, পুলিনকে দিয়ে দেবে কিন্তু দেখাই তো হয়নি মঞ্জুলিকার সাথে পুলিনের, কি করে যাবে ও, ঘরের সামনে যে পাহারা। কাজের লোককে দিয়ে পাঠিয়েছিল – পুলিন ফেরত পাঠিয়েছে, সাথেই বলেছে এটা সেই আন্টি নয়। যদিও মঞ্জুলিকা বলেছিলো বলতে – দিদি দোকানে পালিশ করিয়ে দিয়েছে।

মঞ্জুলিকার দিন কাটে না, একই কাজ বার বার করে ভুলে থাকতে চায়, রান্না বান্না, ঘরের নানা কাজ, কাজের লোক পরিষ্কার করে গেলেও আবার নিজে পরিষ্কার করে। শেষে রাত্রে কখন যে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরে নিজেই জানে না। এদিক বাবা আবার সুস্থ হয়েছে বাইরে যাচ্ছে।

উত্তরবঙ্গ থেকে ঘুরে এসেছে কদিন হলো,আর তারপরেই যেন কেমন অন্যরকম লালাগছে বাবাকে , দু একটা চুল পেকেছে কিন্তু তাতেও কলপ, পার্লার থেকে লোক আসছে। ফেসিয়াল, মেনিকিওর, পেডিকিউর সব হচ্ছে। অবাক হয়ে গেছে মঞ্জুলিকা। বাবার হলোটা কি ? সন্ধের মজলিসে যা শুনেছে , বিশ্বাস করতে পারেন নি সে।

বাবার খাস লোক – দাদা একেবারে বর বর লাগছে। আমাদের একটা আবদার আছে, মেটাতেই হবে। নতুন বৌদির জন্য ফুলসজ্জার খাটটা ভালো করে সাজাতে হবে।

বাবাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেছিল মঞ্জুলিকা। বাবা জানিয়েছিল – উত্তর বঙ্গে দলের এক কর্মী, বয়স মঞ্জুলিকার মতোই হবে। সে বড় অসহায়, বেচারির কেউ নেই। তাকে উদ্ধারের জন্য এই কাজ করতে হচ্ছে নাহলে এই বয়সে আর বিয়ে করতেন না।

মঞ্জুলিকা আপত্তি করেছে।এতদিন বাবাকে অনেক করে বলেছে, কেঁদেছে, পায়ে ধরেছে কিন্তু কাজ হয়নি। বাবা গেছে বিয়ে করতে, কদিন পর ফিরবে, নতুন মা নিয়ে।মঞ্জুলিকা বুঝেছে বাবা স্বার্থপর। নিজের স্বার্থ সিদ্ধি ছাড়া আর কিছু চায় না। মঞ্জুলিকা শুনেছিলো তার বাবা আর একটা মেয়েকে নিয়ে মিডিয়ায় অনেক খবর হয়েছে, সে ভেবেছে সব রটনা, সরকার ফেলার জন্য বিরোধীদের চক্রান্ত। কিন্তু আজ বুঝছে সব সত্যি।

না আর দেরি করবে না মঞ্জুলিকা। বাবার স্বার্থ সিদ্ধির জন্য নিজেকে বলি দেবে না, পুলিনকে আর দূরে ঠেলবে না। ও চলে যাবে পুলিনের কাছে।

পুলিন ওর ফোন নাম্বার দিয়েছিলো আবার নতুন করে, সেই একই নাম্বার, বদলায়নি। কিছুটা কুন্ঠা বোধ হয়েছে মঞ্জুলিকার, কিন্তু না আর কিছু ভাববে না। ফোন করেছে –
রিং হতেই ফোনের ওপর থেকে

পুলিন – সব ঠিক আছে তো মঞ্জু ?

মঞ্জুলিকা কথা বলেনি, মনে হয়েছে – কি করে বুঝলো ও?

পুলিন আবার বলেছে – মঞ্জু? সাড়া দিচ্ছ না কেন? আমি যাবো ? কি হয়েছে? মেসোমশাই ঠিক আছেন তো ? মঞ্জু

মঞ্জুলিকা – বাবা

পুলিন – কি হয়েছে মেসোমশাইয়ের ?মঞ্জু

মঞ্জুলিকা – বাবা আবার বিয়ে করছে, আমি এই সব কিছু থেকে অনেক দূরে যেতে চাই পুলিন, অনেক দূরে, তোমার সাথে।

পুলিন – মঞ্জু

মঞ্জুলিকা – নিয়ে যাবে? যেমন একদিন বলেছিলে বাবা না মানলে আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে! যাবে ? আমি আর পারছি না, পারছি না এই নোংরা খেলা থেকে, সব কিছু থেকে মুক্তি চাই।

পুলিন – আমি আসছি।

মঞ্জুলিকা – এখন? পাহারা আছে যে

পুলিন – বলো তোমার শরীর খারাপ এটাই আমি এসেছি

মঞ্জুলিকা কাজের মাসিকে দিয়ে সিকুইরিটিদের বলে পাঠিয়েছে মঞ্জুলিকার শরীর খারাপ ডাক্তার আসছে দেখতে যেন না আটকায় তারা। বাড়িতে ঢুকেছে পুলিন। বাড়ির কাজের মাসি তাকে মঞ্জুলিকার ঘরে পৌঁছে দিয়েছে।

পুলিন ঘরে ঢুকে দেখেছে মঞ্জুলিকা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।

পুলিন – মঞ্জু

সেই চেনা ডাক আর সামলাতে পারেনি মঞ্জুলিকা। ছুটে এসে পুলিনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে। সামলেছে পুলিন। অনেক কথা হয়েছে। কেন ও বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিল, বলেছে ওর বাবা ভয় দেখিয়েছিলো পঞ্চানন পুলিনকে মেরে ফেলবে নাহলে, বলেছে ও সুইসাইড করতে গিয়েছিলো। বলেছে ওকে মুখ্যমন্ত্রী করে বাবা ক্ষমতা ভোগ করতে চায় সব কথা। অনেক্ষন কথা হয়েছে।

ঠিক করেছে ওরা পালাবে দেশ ছেড়ে লন্ডনে, কিন্তু কি করে?

বাবার যা সোর্স বাবার কানে পৌঁছাবেই কথাটা। আর বাবা কিছুতেই মঞ্জুলিকাকে এখন থেকে বের হতে দেবে না। আর তাছাড়া পাসপোর্ট, ভিসা কিছুই নেই ওর। মুখমন্ত্রী হবার পর হয়তো করতো বাবা। তাহলে কি হবে? এসব করতে গেলেই লোকে জেনে যাবে, বাবা জানবে। পুলিনকে মেরে ফেলবে।

মাথায় এসেছে আশীষের কথা, সেই তো শেষ ভরসা। কথা হয়েছে তার সঙ্গে। আশীষের চেনা জানা লোকের অভাব নেই, পরের দিন চুপি চুপি হয়ে গেছে পাসপোর্ট আর ভিসা, টিকিট ও রেডি। ওরা লন্ডনে চলে যাবে। কিন্তু বাড়ি থেকে মঞ্জুলিকাকে বের করবে কি করে? আশীষ ভরসা দিয়েছে, মারে, তুই আমার মেয়ের মতো, তোকে যখন এই পাঁকের মধ্যে পড়তে হল, আটকাতে চেয়েছিলাম পারিনি, তখন থেকেই যেন নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল। আজ তুই যখন নিজে বেড়োতে চাইছিস তখন তার জন্য যা করতে হয়, আমি করব।

মন্দিরে মাঝে মাঝে যেত মঞ্জুলিকা, সে সাদামাটা জীবন যাপন পছন্দ করে,গায়ে একটা সাদা চাদর মাথা অব্দি ঢাকা দিয়ে ঘোমটা দিয়ে যেত, তার মুখ কেউ দেখতে পেতো না। সিকিউরিটি সঙ্গে নিয়ে মন্দিরে ঠাকুরের সামনেও যেতে চাইতো না, মন্দিরের সিঁড়ির নিচে তারা দাঁড়িয়ে থাকতো আর মঞ্জুলিকা মন্দিরের ভেতরে ঢুকতো। পুলিনের নামে লুকিয়ে পুজো দিতো। এদিন গেলো, ঠাকুরের কাছে গেলো। এদিকে পার্টির ছেলেদের বলে রেখেছিলো আশীষ। তারা যেন দু দল পুজো দিতে এসেছে, এমন ভাব করে ঢুকলো ভেতরে, একটু পরেই নিজেদের মধ্যে মারপিট করতে লেগে গেলো। মন্দিরের দিকে দেখলো ভেতরেই রয়েছে মঞ্জুলিকা। যারা মারপিট করছে তাদের থামাতে যায় সিকিউরিটি, কিন্তু তারা থামে না, বেশি করে ঝামেলা লেগে যায়।এদিকে যখন ব্যাস্ত সিকিউরিটি, মঞ্জুলিকাও পূর্ব পরিকল্পনা মত সেই সময় মন্দির থেকে বেরিয়ে যায়, মাথায় ঘোমটা দিয়ে।আর বাইরে রাখা একটা কালো কাঁচ ঢাকা গাড়িতে টুক করে উঠে পরে। প্রদীপের সমস্ত পাহাড়ার মধ্যে দিয়েও গাড়িটি আস্তে আস্তে বেড়িয়ে যায়। গাড়িতে আছে পুলিন। তারপর আগে থেকেই ঠিক করে রাখা বাইপাসের বিশেষ জায়গায় উপস্থিত হয় তারা আশীষের ব্যবস্থা করা বিশেষ কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরাতাদেরকে নিয়ে হুশ করে বেড়িয়ে যায় এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে।
না সিকিউরিটি বুঝতে পারেনি। কেননা মঞ্জুলিকা বেরিয়ে যেতেই মন্দিরে মঞ্জুলিকার মতো একই শাড়ী পরে মাথায় ঘোমটা দিয়ে অন্য একজন বসে পরে মুখটা ঘুরিয়ে। অনেক্ষন পর সিকিউরুটিদের একজন মঞ্জুলিকাকে ভেবে ডাকতে গেলে বোঝে সে মঞ্জুলিকা নয়। তারপর শুরু হয় খোঁজ। না পাওয়া যায়নি। ততক্ষনে আশীষ ওদেরকে লন্ডনে যাবার ফ্লাইটে বসিয়ে দিয়ে নিজেও প্লেনে বসে পড়েছে দিল্লির উদ্দেশ্যে। মঞ্জুলিকা আর পুলিনকে বলেছেন যে – নতুন সরকার এলেই তিনি তাদের নিয়ে আসবেন ফের এখানে।

সারা রাত খোঁজ চলেছে মঞ্জুলিকার, যদি কোনো মতে পাওয়া যায় তবে বিপদ কাটবে। কিন্তু না পাওয়া যায়নি তাই বাধ্য হয়েই প্রদীপকে জানাতে হয়েছে। পরের দিনই প্রদীপ চিফ সিকিউরিটি অফিসারের ফোন পেলেন – কোথাও নাকি পাওয়া যাচ্ছে না মঞ্জুলিকাকে! ফোনেই একচোট চেঁচিয়ে নিয়ে, হানিমুনের প্ল্যান বাতিল করে তড়িঘড়ি বাড়ি ফিরলেন নববধূকে সঙ্গে নিয়ে। নিজের যেখানে যত সোর্স আছে শ্বশুরবাড়ি থেকে সকলকেই কাজে লাগিয়ে ফেলেছিলেন – কিন্তু, এখনও কেউ কিছু জানাতে পারল না! কি করবেন, ভেবে যখন কুল পাচ্ছেন না, হঠাৎ ফোন এলো আশীষের! তাঁর মুখেই শুনলেন মঞ্জুলিকার অন্তর্ধান রহস্যের পুরোটা। ক্ষেপে উঠে, চিৎকার করে উঠলেন, বারবার অভিশাপ দিতে লাগলেন আশীষ ও মঞ্জুলিকাকে।

ঠান্ডা গলায় আশীষ শুধু উত্তর দিল, অনেক পাপ করেছো প্রদীপ, এবার হিসেবের পালা।—————————————————-

 

কবিগুরুর – ‘নিষ্কৃতি’ থেকে অনুপ্রাণিত —-

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!