এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > রাজ্যে বাম – কংগ্রেস জোট কি আবারও বিশ বাঁও জলে? সিপিএমের পদক্ষেপে বাড়ছে জল্পনা!

রাজ্যে বাম – কংগ্রেস জোট কি আবারও বিশ বাঁও জলে? সিপিএমের পদক্ষেপে বাড়ছে জল্পনা!

গত 2016 সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের সময় জোট বদ্ধ হয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিল কংগ্রেস-বামফ্রন্ট। তবে একদিকে যেমন নীতির প্রশ্নে এই সোনার পাথরবাটি জোটকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছিলেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা, অন্যদিকে তেমনই জনতার রায়ে মুখ থুবরে পড়তে হয় এই কংগ্রেস-বামফ্রন্ট জোটকে। সেবারের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস-বামফ্রন্ট জোট শুধু যে তৃণমূলের কাছে পরাজিত হয়, তাই নয়।

কার্যত আগেরবারের থেকে নিজেদের আসন সংখ্যা অনেক বাড়িয়ে বিকল্পহীন ভাবে রাজ্যের শাসন ক্ষমতা ধরে রাখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস। আর এরপরে নানান রকম রাজনৈতিক সমীক্ষা সামনে আসায় এবং মূলত আসন সমঝোতা না হওয়ার কারণে 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে আলাদা আলাদা ভাবে লড়াই করে বামফ্রন্ট এবং জাতীয় কংগ্রেস। কিন্তু ফলাফলে দেখা যায়, রাজ্যে দুটি আসন পেয়ে টিমটিম করে জ্বলছে জাতীয় কংগ্রেস।

আর অন্যদিকে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে রাজ্য থেকে কার্যত পিসি সরকারের ম্যাজিক ভ্যানিশ হয়ে গেছে বামফ্রন্ট। আর এরপরই বাম এবং কংগ্রেসের রাজনৈতিক অলিন্দে পুনরায় জোটবদ্ধভাবে লড়াইয়ের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। কিন্তু সম্প্রতি এক ঘটনার জেরে সেই জোটের সম্ভাবনা কার্যত আবার প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

জানা যাচ্ছে, গত 17 অক্টোবর সিপিএমের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি। আর এই অনুষ্ঠানের জন্য নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম ব্যবহার করার অনুমতি পেয়েছে সিপিএম শিবির। তাই অনুষ্ঠানকে সফল করতে রীতিমতো সাজো সাজো রব উঠেছে সিপিএমের অন্দরে।

কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এই অনুষ্ঠানে রাজ্যের তৃণমূল সরকার এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ জোটের কথা বার বার বললেও আমন্ত্রণের তালিকা থেকে বাদ রাখা হচ্ছে জাতীয় কংগ্রেসকে। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে বিশেষ সূত্রের মাধ্যমে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সম্প্রতি জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর 150 তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন উৎসবে রাজ্য কংগ্রেসের দপ্তরে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীতে যখন কংগ্রেসের তরফ থেকে রাজ্যের সিপিএম সহ সব বামপন্থী দলগুলোর নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তখন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র থেকে শুরু করে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু পর্যন্ত বরিষ্ঠ নেতৃত্বরা বিধান ভবনের ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে রীতিমতো বৈঠক করেন কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সৌমেন মিত্রর সঙ্গে।

তাই রাজনৈতিক মহলের মনে স্বাভাবিক ধারণা ছিল, যখন গান্ধীজীর জন্ম জয়ন্তী উৎসবে বামপন্থীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে কংগ্রেস, তখন নিশ্চয়ই নিজেদের শতবর্ষ পালন অনুষ্ঠানে কংগ্রেসকে আমন্ত্রণ জানাবে মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বরা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, শুধু কংগ্রেস নয়, নিজেদের শরিকদল সিপিআই সহ আরও অনেক বামপন্থী দলগুলোকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এই শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে।

এই বিষয়ে অবশ্য অনেক বিতর্ক উঠলেও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র তার বক্তব্যের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন। সাংবাদিক সম্মেলনে সূর্যবাবু বলেন, “পরিস্থিতি ঐক্য এই সবকিছুই আমরা অস্বীকার করছি না। তবে এটা একেবারে আমাদের নিজস্ব কর্মসূচি অনুষ্ঠান।” কর্মসূচি সম্পর্কে তিনি জানান, শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্টদের ভূমিকা সহ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সবকিছুই উঠে আসবে বক্তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে। পাশাপাশি সেখানে কিছু সমালোচনাও থাকবে।

তিনি বলেন, “যেমন 1921 সালে পূর্ণ স্বরাজের নামে সার্বিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতার দাবিতে আমরা যে প্রস্তাব তৈরি করেছিলাম, সেটা সেই বছর কংগ্রেস আমেদাবাদ অধিবেশনে গৃহীত হয়নি। স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের অবদানকে অস্বীকার না করলেও এই ধরনের কিছু বিষয় নিয়ে আমাদের সমালোচনা রয়েছে। তাই আমাদের অনুষ্ঠানে এসে কেউ অস্বস্তিবোধ করুক, তা আমরা চাই না। তাই আমরা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি না।”

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

জানা যাচ্ছে, 100 বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসের পাশাপাশি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভাষণ দেবেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। আবার এই বছর পূর্ণ হচ্ছে জালিওনাবাগ হত্যাকাণ্ডের শতবর্ষ। তাই শতবর্ষ উদযাপনের মঞ্চ থেকেই স্মরণ সভা পালন করবে সিপিআইএম নেতৃত্ব। এইজন্য শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানের মঞ্চে বক্তা হিসেবে উপস্থিত করা হবে ইতিহাসবিদ চমনলালকে। বক্তাদের তালিকায় থাকবেন সূর্যকান্ত মিশ্র থেকে শুরু করে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম প্রমুখ।

তবে জানা যাচ্ছে, সিপিএমের শতবর্ষ উদযাপনের সভাস্থল পরিবর্তন হওয়ায় কিছুটা অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল কমিউনিস্ট নেতাদেরকে। তবে সূর্যবাবু জানিয়েছেন, যে কোনো রকমের প্রতিকূল পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠান সফল করতে তারা বদ্ধপরিকর। অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা গ্রহণের সময় প্রথমে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম চাওয়া হয়েছিল সিপিএমের থেকে। কিন্তু একই সময়ে কলকাতা বন্দরের শতবর্ষ উপলক্ষে এই হল কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই বুক করে রেখেছিল। ফলে রাজ্য সরকার থেকে প্রথমে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম ব্যবহার করার অনুমতি পায়নি সিপিআইএম নেতৃত্ব।

সেক্ষেত্রে পরিকল্পনা হয় আলিপুরে অবস্থিত উন্মুক্ত মঞ্চ উত্তীর্ণ ভাড়া করে সভা করা হবে। কিন্তু পরবর্তীতে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেদের অনুষ্ঠানের কর্মসূচি বাতিল করে দেওয়ায় ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সিপিএমের আবেদনকে অনুমতি প্রদান করেন। তাই এবার ইচ্ছামত সভাস্থল পেয়ে অনুষ্ঠানের তোড়জোড় আরও বাড়িয়ে দিয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া মার্কসবাদী।

তবে সভার আলোচ্য বিষয় যাই হোক না কেন, দলের শতবর্ষের অনুষ্ঠানে অন্য রাজনৈতিক দলগুলিকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে ঠিক কি রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করতে চলেছে সিপিআইএম! তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনীতির অন্দরে। তবে শতবর্ষের অনুষ্ঠান থেকে আগামী দিনে নিজেদের রণনীতি নিয়ে কি পন্থায় অবতীর্ণ হয় সিপিআইএম! এখন সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!