এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > লোকসভার আগে তৃণমূলে ভাঙন – কতটা বাস্তবোচিত এই রাজনৈতিক ভাবনা?

লোকসভার আগে তৃণমূলে ভাঙন – কতটা বাস্তবোচিত এই রাজনৈতিক ভাবনা?

এখনো সরকারিভাবে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের দামামা বাজে নি – তবে বিভিন্ন সূত্রে যে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তাতে ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নিজের টানা পঞ্চম বারের বাজেটটি পেশ করলেই – ঘোষণা হয়ে যাবে লোকসভা নির্বাচনের। আর সেক্ষত্রে, পরীক্ষার মরশুম পেরিয়ে মার্চের শেষ থেকে শুরু এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত চলতে পারে নির্বাচন। মে মাসের মধ্যেই শপথ নিয়ে নেবে নতুন মন্ত্রীসভা। বলাই বাহুল্য, এবারের লোকসভা নির্বাচনে মূল আকর্ষণ হতে চলেছে – সম্মিলিত বিরোধী জোটকে পরাভূত করে নরেন্দ্র মোদির প্রত্যাবর্তন নাকি জোট রাজনীতির কাছে নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত ক্যারিশমার হার – কি রায় দেবেন জনতা-জনার্দন সেটাই।

তবে, যতই সরকারিভাবে লোকসভা নির্বাচন নিয়ে কোন ঘোষণা না হোক – সেই দিকে তাকিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তাল ঠোকাঠুকি, রাজনৈতিক সমীকরণ বা ঘুঁটি সাজানোর অঙ্ক কিন্তু শুরু হয়ে গেছে পুরোদমে। তবে, দেশের দুই বৃহত্তম জাতীয় দল বিজেপি ও কংগ্রেস আপাতত ব্যস্ত আসন্ন পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে। আগামী ১১ ই ডিসেম্বর ওই পাঁচ রাজ্যের ফলাফল ঘোষিত হলেই পূর্ণোদ্যমে লোকসভা নির্বাচনের পারদ চড়তে শুরু করে দেবে বলেই ধারণা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। তবে, সেখানে যাই হোক – বাংলায় রাজনৈতিক পারদ কিন্তু ইতিমধ্যেই চড়তে শুরু করে দিয়েছে।

একদিকে যেমন রাজ্যের শাসকদলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডাক দিয়েছেন ৪২ এ ৪২ করার, অন্যদিকে কিন্তু রাজ্য-রাজনীতিতে প্রবল বেগে উঠে আসতে থাকা বিজেপি দাবি রেখেছে অর্ধেকের বেশি লোকসভা আসনে জয়লাভ করার – বাংলায় ‘পরিবর্তনের পরিবর্তন’ করার। কার দাবি যে, শেষপর্যন্ত সত্যি হবে সেকথা বোঝা যাবে মে মাসে ইভিএম খুললে। কিন্তু, একটি কথা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কাছে অত্যন্ত সুস্পষ্ট – তা হল, এবার চতুর্মুখী নয়, বাংলায় লড়াই হবে মূলত দ্বিমুখী। কিছু কিছু আসনে কংগ্রেস বা বামফ্রন্ট প্রবল লড়াই হয়ত দেবে – কিন্তু মূল লড়াইটা হবে সেই তৃণমূল কংগ্রেস বনাম বিজেপিরই।

ফেসবুকের কিছু টেকনিকাল প্রবলেমের জন্য সব খবর আপনাদের কাছে পৌঁছেছে না – তাই আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাংগঠনিক দিক থেকে এবং সঙ্গে থাকা হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রী-সাংসদদের সৌজন্যে এই লড়াইয়ে পরিষ্কারভাবে ‘ফেভারিট’ তৃণমূল কংগ্রেসই। বিজেপি তুমুল লড়াই দেবে বা ভোট শতাংশ অনেকাংশে বাড়িয়ে নেবে কিন্তু তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে হারানোর মত জায়গায় থাকবে না। কিন্তু, এই হিসাব বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে – লোকসভা ভোটের যে আরো ছমাস বাকি আছে – তাতে কিন্তু, অনেক সমীকরণ বদল হবে – ফলে, বদলে যাবে অনেক অঙ্কই। তারমধ্যে অন্যতম অঙ্ক হল – গেরুয়া শিবির শাসকদলে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করবে এবং কিছু হেভিওয়েট বেরিয়ে গেলেই নাকি তৃণমূল কংগ্রেস দলটা হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে।

না, এই দুঃসাহসিক দাবি আমাদের নয় এবং এই ধরনের রাজনৈতিক প্রচারমূলক দাবি করা আমাদের কাজও নয়। এই জল্পনা রাজ্য-বিজেপির অন্দরমহলে, এমনকি মুকুল রায়ের মত গেরুয়া শিবিরের বহু প্রথমসারির নেতাই কিন্তু এমন দাবি প্রকাশ্যেই করেছেন। কিন্তু, বাস্তবের দিকে তাকালে দেখা যাবে বিগত বছরগুলিতে শুধু অন্যান্য বিরোধীদল থেকে একতরফা হেভিওয়েতের স্রোত তৃণমূল কংগ্রেসের দিকেই। তাহলে, মুকুলবাবুদের এই শাসকদল ভাঙানোর দাবি কি শুধুই দলীয় কর্মী বা অনুগামীদের উদ্দীপ্ত করতে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমরা কথা বলেছিলাম রাজ্য-রাজনীতিকে হাতের তালুর মত চেনেন – এমন বহু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে।

তাঁদের সঙ্গে কথা বলে যা নির্যাস উঠে এল, গেরুয়া শিবিরের শাসকদল ভাঙ্গানো এবং তারপর দলটা হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ার যে দাবি, তা যেমন সর্বৈব সত্যও, তেমনই আবার শুধুমাত্র কথার কথাও নয়। খুব স্বাভাবিক, এই রাজ্যে তৃণমূলকে হারাতে গেলে গেরুয়া শিবিরকে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসাতে হবে। অন্যদিকে, শাসকদলের যে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক তা তাদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া এই মুহূর্তে প্রতি অসম্ভব। আর তাই, শাসকদলের কিছু হেভিওয়েট নেতাকে যদি গেরুয়া শিবির নিজেদের দিকে নিয়ে যেতে পারে – তাহলে কিন্তু শাসকদলের সেই ‘কমিটেড’ ভোটব্যাঙ্কে ভাঙ্গন ধরানো সহজ হবে।

তাঁদের মতে – অন্যদিকে, এটাও মাথায় রাখতে হবে, এই যে নির্বাচনটা হতে চলেছে সেটা কিন্তু কেন্দ্রের সরকার বদলানোর, রাজ্যের নয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই, রাজ্যের কোন মন্ত্রী বা বিধায়ক এখন দলবদলের কথা ভাববেনই না। অন্যদিকে, শাসকদলের যেসব সাংসদের টিকিট একপ্রকার নিশ্চিত এবং নিজেদের জয় নিয়েও যাঁরা খুব একটা সন্দিহান নন – তাঁরা হঠাৎ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গ ছাড়বেন না। অর্থাৎ, গেরুয়া শিবিরের কাছে ‘অপশনটা কিন্তু লিমিটেড’ – মানে শাসকদলের যেসব সাংসদরা দলীয় টিকিট পাবেন না বা দলে ইতিমধ্যেই কোনোকারণে কোনঠাসা হয়ে রাজনৈতিক গুরুত্ত্ব হারাচ্ছেন, তাঁরাই কিন্তু গেরুয়া শিবিরের দিকে পা বাড়াতে পারেন।

তবে এর সাথে সাথেই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, কিন্তু এই লোকসভা নির্বাচনে যদি সত্যিই গেরুয়া শিবির ‘মিরাক্যাল’ দেখতে পারে – ২২ টা নয়, অন্তত ১০-১২ টা লোকসভা আসনও দখলে আনতে পারে তখন কিন্তু সত্যিই একটা বড়সড় ভাঙ্গনের প্রবল সম্ভাবনা থাকবে। উদাহরণ হিসাবে তাঁরা ২০০৯ আর ২০১১ সালের লোকসভা-বিধানসভা নির্বাচনের কথা তুলে ধরেন। তাঁদের বক্তব্য, বিজেপি লোকসভা নির্বাচনে ১০-১২ তা আসন জেতা মানেই কিন্তু রাজ্যে ‘পরিবর্তনের পরিবর্তন’ স্লোগানটা জোরদার হবে। আর তখন কিন্তু অনেক শাসকদলের নেতাই পা বাড়াতে পারেন গেরুয়া শিবিরের দিকে।

একইসঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, তবে সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দলীয় নেতাদের সমীকরণ কিন্তু একটা বড় ফ্যাক্টর হবে। রাজনীতিতে যেহেতু সবই সম্ভব (উদাহরণ হিসাবে রেজ্জাক মোল্লা বা উদয়ন গুহদের মত ‘কমিটেড’ কমিউনিস্ট বা মানস ভূঁইয়া, অজয় দের মত ‘খাঁটি’ কংগ্রেসীদের দলবদলের কথা তোলেন) এবং রজনীতিবিদরা কেউ কিন্তু হারার জন্য রাজনীতি করেন না – তাই রাজ্যে লোকসভা ভোটে যদি বিজেপির উত্থান এবং রাজ্যে ক্ষমতা পরিবর্তনের মত পরিস্থিতি তৈরী হয়, তখনই একমাত্র শাসকদলে বড় ভাঙ্গন আশা করা যেতে পারে। নাহলে কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামক মহীরুহের ছায়া থেকে শাসকদলের কোনো হেভিওয়েটকে গেরুয়া ছাতার তলায় আনা সরল সমীকরণে হবে না।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!