এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের রঙ কি গেরুয়া নাকি আবার হবে ঘাসফুলের জয়-জয়কার?

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের রঙ কি গেরুয়া নাকি আবার হবে ঘাসফুলের জয়-জয়কার?

কথায় আছে, “ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়”। কিন্তু বাস্তবের এই কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে হার মানাবে সেই ইতিহাসকেও – তা কিছুদিন আগেও যেন স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারতেন না রাজনীতিবিদরা। আর তাইতো ক্রমাগত শক্তিক্ষয় হলেও “মানুষের আস্থা অটুট রয়েছে” বলে বিভিন্ন সময় দাবি করেন তাঁরা – কিন্তু বাস্তব কি সত্যিই তাকে সমর্থন করে? এই পর্যন্ত পড়ে হয়তো অনেকেরই বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে যে, ঠিক কোন ইস্যু নিয়ে আজ আলোচনা করতে চলেছি আমরা!

আসলে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজনীতির এই ডামাডোল পরিস্থিতিতে আসুন না, কিছুটা অতীত হয়ে বর্তমানে প্রবেশ করে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সকলকে আভাস দেওয়ার চেষ্টা করি। আসলে যে বিষয় বা জায়গাকে কেন্দ্র করে আজ আমরা আলোচনা করতে চলেছি তা বঙ্গ রাজনীতিতে অত্যন্ত বড় একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বলেই পরিচিত হয়ে থাকবে চিরকাল রাজনীতির বুকে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গাম, মেদিনীপুর সহ এককথায় গোটা জঙ্গলমহল আজ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের ছোঁয়ায় ধন্য – এমনটাই দাবি করে এসেছে বারবার তৃণমূল শিবির।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের আগে বিগত বাম সরকারের আমলে যে মানুষগুলির ঘুম ভাঙতো স্বজনহারানো ব্যক্তিদের কান্নায়, এখন সেইখানে বর্তমান তৃণমূল সরকারের আমলে চলছে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ – রাস্তা থেকে দুটাকা কিলো চাল, একের পর এক সদর্থক পদক্ষেপ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, জঙ্গলমহলের হাসি ফিরিয়ে আনতে – এই দাবি তৃণমূলের সর্বস্তরে। যদিও, জঙ্গলমহলের সেই হাসি নিয়ে একাধিক হেভিওয়েট বিরোধী নেতা কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তৃণমূল নেত্রীকে। কিন্তু, গত বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত – জঙ্গলমহলবাসী যে তৃণমূল নেত্রীর উপরেই ভরসা রেখেছেন তা ইভিএম বাক্সগুলি খুললেই প্রমাণিত হয়েছে।

ফেসবুকের কিছু টেকনিকাল প্রবলেমের জন্য সব খবর আপনাদের কাছে পৌঁছেছে না – তাই আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

ক্ষমতায় এসেই জঙ্গলমহলে মাওবাদী উপদ্রব থেকে মুক্ত করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্যের বর্তমান শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। কোনো সাধারণ মানুষ নয়, প্রাণ হারিয়েছেন কিষেণজির মত এককালের দাপুটে মাওবাদী নেতা – এই দাবি যখন বুক ঠুকে করছেন তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্ত্ব, তখন কিন্তু সেই মৃত্যু নিয়েও কম ঝড় তোলেননি বিরোধীরা। এমনকি সরাসরি তৃণমূল নেত্রীর দিকে আঙুল তুলে বিরোধীরা দাবি করেছেন যে – কিষেণজির সমর্থনে জঙ্গলমহলে ঘাসফুলের কর্তৃত্ত্ব কায়েম করে, পরে তাঁকেই হত্যা করেছেন। আর তা নিয়ে পাল্টা দিতে ছাড়েননি তৃণমূল নেতৃত্ত্ব। ফলে, সব মিলিয়ে জঙ্গলমহল সব সময়েই রাজ্য রাজনীতির চর্চিত বিষয় থেকে গেছে।

এমনকি, সরকারের ডাকে সারা দিয়ে মূল স্রোতে ফিরে এসেছেন অনেক মাওবাদীই। আর তারপর শেষ কবে এই জঙ্গলমহলে অশান্তির কালো মেঘ দেখা গিয়েছিল তা মনে করতে পারছেন না স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ত্বের কেউই। তবে, যে জঙ্গলমহল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া কিছু বুঝতো না, সেখানেই বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে দাগ কেটেছে বিজেপি। তাহলে কি ধীরে ধীরে জঙ্গলমহল থেকে নিজেদের অস্তিত্ব হারাচ্ছে ঘাসফুল শিবির? রাজনৈতিক মহলে যখন এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে ঠিক তখনই এই জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে খারাপ ফলাফল নিয়ে দলীয় স্তরে চুলচেরা বিশ্লেষণে বসে গিয়েছেন তৃণমূলের তপসিয়া ভবনের শীর্ষনেতারা।

একাংশের মতে, প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী হয়ে এই অঞ্চলের শাসকদলের নেতারা ধরা কে সরা জ্ঞান করছিলেন, একেক জন নেতার ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হয়েছিল। যে পরিমান বাহ্যিক সম্পত্তির চকমকানি দেখা গিয়েছে তাঁদের – তা কোনোমতেই ভালোভাবে মেনে নিতে পারেননি স্থানীয় মানুষ। নিজেদের মনে করে যে নেতাদের উপর এতদিন আস্থা রেখেছিলেন – তাঁদেরই আচার-আচরণ এবং তথাকথিত ‘দুর্নীতি’ – সাধারণ মানুষের সঙ্গে দলের দূরত্ত্ব তৈরী করে দিয়েছে অনেকটা। আর তাই, তাঁদের প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ পঞ্চায়েতের ভোট বাক্সে পড়েছে। যে জঙ্গলমহলে এতদিন বিরোধীদের প্রায় ‘দূরবীন’ দিয়ে খুঁজতে হয়েছে – সেখানে এই গেরুয়া উত্থান স্বাভাবিকভাবেই বড় ভাবে চোখ টানছে রাজ্য রাজনীতিতে।

কিন্তু জঙ্গলমহলের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় তৃণমূলের বিকল্প কি বিজেপি? বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বিগত বাম সরকারের আমলে তৎকালীন বিরোধী দল তথা রাজ্যের বর্তমান শাসকদল তৃণমূলের নেতা কর্মীরা অভিযোগ করতেন যে, বামদল এবং প্রশাসন মিলে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করছেন। আর তখন তৃণমূলের এই অভিযোগে সীলমোহর দিয়ে সাধারণ মানুষ ভোটবাক্সে সেই বাম সরকারের পতন ঘটিয়েছিলেন। আর কালের অমোঘ নিয়মে এখন রাজ্যের বর্তমান শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে সরব হয়েছে বিজেপি। যা যথারীতি বিগত বাম সরকারের মতোই অস্বীকারের রাস্তায় হেঁটেছে বর্তমান শাসকদল।

কিন্তু, কথাতেই আছে – যা রটে তার কিছুটা বটে। আর তাই তো গেরুয়া শিবিরের সেই অভিযোগকে মান্যতা দিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে পদ্ম শিবিরকে বাড়তি অক্সিজেন দিল জঙ্গলমহল। তবে নিজেদের দখলে থাকা জঙ্গলমহলকে ফের নিজেদের বাগে আনতে এবারে আসরে নামতে চলেছেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, আগামী বেশ কিছুদিনের মধ্যেই বিজেপির ছাপ রাখা এই জঙ্গলমহলের পুরুলিয়া জেলার বলরামপুরে দলীয় জনসভা করবেন তিনি। আর ‘২৯৪ টি আসনেই আমি প্রার্থী’ – সগর্বে তৃণমূল নেত্রী একথা বললে কি হয় তা ২০১৬ সালেই দেখে নিয়েছে বঙ্গবাসী। তাই সব মিলিয়ে গেরুয়া নাকি সবুজ কার দখলে থাকবে বাংলার এই নির্নায়ক এলাকা এখন সেদিকেই তাকিয়ে বঙ্গবাসী।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!