দক্ষিণবঙ্গে একটি আসনও না জিততে পারলেও, কংগ্রেস অন্তত ৪ টি আসনে তৃণমূলকে হারানোর ব্যবস্থা করে দিল? কলকাতা বিশেষ খবর রাজ্য March 26, 2019 প্রিয় বন্ধু মিডিয়া এক্সক্লুসিভ – দেশের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণার আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নিজেদের প্রার্থীতালিকা ঘোষণায় মন দেয় কংগ্রেস। অন্যদিকে, বাংলার ক্ষেত্রে বামফ্রন্টের সঙ্গে জোট সম্ভাবনা উজ্জ্বল থাকায় – একটু যেন সময় নিচ্ছিল রাহুল গান্ধীর দল। কিন্তু, বামেদের সঙ্গে জোট-জল্পনার ইতি ঘটতেই তড়িঘড়ি উত্তরবঙ্গের ১১ আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করে দেয় কংগ্রেস। কিন্তু রাজ্যের বাকি ৩১ আসনে প্রার্থী ঘোষণার ক্ষেত্রে যেন কোন হেলদোলই ছিল না শতাব্দী প্রাচীন এই দলটির ক্ষেত্রে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতামত, বাংলায় শক্তিক্ষয় হতে হতে কংগ্রেসের দাপট বা সংগঠন এখনও কিছুটা হলে অটুট মালদা, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর সহ উত্তরবঙ্গেই। দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সংগঠন পুরোটাই প্রায় বিলুপ্তির পথে – হাতে গোনা কিছু বিধানসভায়, বিশেষ করে সংখ্যালঘু এলাকায় হয়ত কিছুটা সমর্থ এখনও আছে কংগ্রেসের, কিন্তু তা কোনোমতেই লোকসভা নির্বাচনে জেতার মত নয়। আর তাই মুর্শিদাবাদ পর্যন্ত ‘জেতার মত’ আসনগুলোতে কংগ্রেস প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে কোনো সময়ই নেয় নি, কিন্তু বাকি আসনগুলি নিয়ে কোনো তাড়াহুড়ো দেখায় নি। আর অবশেষে গতকাল কংগ্রেস বাংলার জন্য নিজেদের দ্বিতীয় প্রার্থীতালিকায় ২৫ জনের নাম ঘোষণা করল। একইসঙ্গে জানিয়ে দিল যাদবপুর ও বাঁকুড়া কেন্দ্রে কোনো প্রার্থী দিচ্ছে না কংগ্রেস, সেখানে বামফ্রন্টকে সমর্থন করা হবে। যদিও ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুরের কংগ্রেস প্রার্থী সমীর আইচ পেয়েছিলেন মাত্র ২.০৬% বা ২৬,৩০৭ টি ভোট। অপরদিকে বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস প্রার্থী নীলমাধব গুপ্ত পেয়েছিলেন ১.৭৮% বা ২২,০০৮ টি ভোট। সুতরাং, এই দুই কেন্দ্রে কংগ্রেসের ‘সমর্থন’ বাম প্রার্থীদের যে কতটা কাজে আসবে তা গতবারের ফলাফলেই স্পষ্ট। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত, প্রার্থী ‘দিতে হয় তাই দেওয়া’ একদম স্পষ্ট কংগ্রেসের দ্বিতীয় প্রার্থীতালিকায়। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - কেননা, দক্ষিণবঙ্গে কংগ্রেসের সংগঠন থাকুক বা না থাকুক, এখনও কিন্তু বেশ কিছু হেভিওয়েট নাম আছে – আব্দুল মান্নান, সোমেন মিত্র, সর্দার আমজাদ আলি, ওমপ্রকাশ মিশ্র শুভঙ্কর চক্রবর্তী, রোহন মিত্র, সাদাব খান, বিমলকুমার রুজ বা ঋজু ঘোষাল – প্রার্থী তালিকায় নাম নেই কোনো হেভিওয়েট নেতারই। কিন্তু, অর্থাৎ প্রার্থী তালিকা থেকেই স্পষ্ট, দক্ষিণবঙ্গে পুরুলিয়া আসনটি ছাড়া সেইভাবে জেতার জন্য ঝাঁপাচ্ছে না কংগ্রেস। তবে, এরই সাথে কলকাতা উত্তর ও আসানসোল থেকে দুই দাপুটে নেতার প্রার্থী হওয়া নিয়ে জল্পনা ছড়িয়েছে। আর কংগ্রেসের এই দ্বিতীয় প্রার্থী তালিকা সামনে আসতেই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, দক্ষিণবঙ্গে একটি আসনও না জিততে পারলেও কংগ্রেস অন্তত ৪ টি আসনে তৃণমূলকে হারানোর ব্যবস্থা করে দিল। কিন্তু, হঠাৎ করে কেন এমন ধারণা? কেননা গতকালের ঘোষণা হওয়া ৪ টি কেন্দ্র যেখানে সংখ্যালঘু ভোট একটা বড় ফ্যাক্টর হতে পারে এবং বিজেপির জেতার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে, সেইখানে কিন্তু এবারে কংগ্রেস সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়েছে এবং ওই প্রার্থীদের হাত ধরে যে সংখ্যালঘু ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের একচ্ছত্র আধিপত্য সেখানে কিন্তু বড়সড় থাবা বসাতে পারে কংগ্রেস। এই কেন্দ্রগুলি হল – কৃষ্ণনগর (প্রায় ৪০% সংখ্যালঘু ভোট), ব্যারাকপুর (প্রায় ১৮% সংখ্যালঘু ভোট), বসিরহাট (প্রায় ৪৮% সংখ্যালঘু ভোট) ও বীরভূম (প্রায় ৪৪% সংখ্যালঘু ভোট)। এমনিতেই এই কেন্দ্রগুলিতে কংগ্রেসের প্রায় ৩-৫% ‘ডেডিকেটেড ভোটার’ আছে যা বিগত নির্বাচনগুলিতেই প্রমাণিত। তার উপরে বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে আসছে, এই সংখ্যালঘু সমাজের একটি বড় অংশ বর্তমান শাসকদলের উপরে ক্ষুব্ধ। কিন্তু, এঁরা দক্ষিণপন্থী হওয়ায় বামেদের ভোট দিতে ইচ্ছুক নন, অপরদিকে বিজেপিকে ভোট দিতেও এঁদের বড় অনীহা রয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেস নিজেদের ওই ৩-৫% ভোট ধরে রেখে আরও যদি ৩-৫% ভোট নিজেদের দিকে ‘স্যুইং’ করাতে পারে তাহলে কিন্তু বদলে যাবে অনেক সমীকরণ। কেননা, বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে আসছে, এই আসনগুলোতে একটা বড় অংশের শাসকদলের ভোট (যার মধ্যে রয়েছেন নব্য ভোটার, শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী, সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক, ছোট ব্যবসায়ী) এবার গেরুয়া শিবিরে ‘স্যুইং’ করতে পারে। কিন্তু, যেহেতু বেশ বড় সংখ্যার সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে এবং বিগত নির্বাচনগুলোতে প্রমাণিত সেই সংখ্যালঘু ভোট ক্রমশ এককাট্টা হয়েছে শাসকদলের প্রতিই, তাই এই আসনগুলোতে খুব অল্প ‘মার্জিনে’ হলেও হয়ত জয় ধরে রাখতে পারত শাসকদল। কিন্তু, কংগ্রেসের এই প্রার্থী তালিকায় বলে দিচ্ছে, এখন আর সমীকরণ অতটাও সোজা থাকল না শাসকদলের জন্য – যা স্বাভাবিকভাবেই মুখে হাসি ফোটাবে গেরুয়া শিবিরের। আপনার মতামত জানান -