এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > ‘সাংবিধানিক অধিকার’ থেকে ‘দয়ার দানে’ ডিএ-কে বদলে দিতেই কি পে-কমিশন? উঠছে প্রশ্ন!

‘সাংবিধানিক অধিকার’ থেকে ‘দয়ার দানে’ ডিএ-কে বদলে দিতেই কি পে-কমিশন? উঠছে প্রশ্ন!


রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরেই ডিএ ও পে-কমিশন নিয়ে বঞ্চনা হচ্ছে বলে সরব। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে ডিএ নিয়ে ফয়সালা হয়েছে, অন্যদিকে গত ১৩ তারিখ নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক দলীয় সমাবেশে আগামী জানুয়ারী মাস থেকে ষষ্ঠ বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন। ফলে, জোড়া ‘সুখবরে’ উৎসবের মরশুমে হাসি ফোটার কথা ছিল রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের মুখে।

কিন্তু, একটু খোঁজ নিতেই দেখা গেল – আশঙ্কার কালো মেঘ ক্রমশ জাঁকিয়ে বসছে তাঁদের মুখে। এর কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত পে-কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকারের ইন্টারভিউ বা বক্তব্য। সেই সব সংবাদের মূল কথা হল, অভিরূপবাবু জানিয়েছেন এবার থেকে ডিএ আর কেন্দ্রীয় সূচক মেনে দিতে রাজ্য সরকার বাধ্য থাকবে না। রাজ্য যদি মনে করে তবেই কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেবে, নাহলে রাজ্য কিন্তু ডিএ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজস্ব সূচক তৈরী করে নিতে পারে।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ বিগত বাম জামানায়, মোটামুটি কেন্দ্রীয় হারেই ডিএ দেওয়া হয়েছে সরকারি কর্মচারীদের। হয়ত কেন্দ্রের প্রদত্ত দিন থেকে দেওয়া হয় নি, বা কেন্দ্রীয় হারের থেকে সামান্য কিছু ফারাক থেকে গেছে – কিন্তু কোনোদিনই এর জন্য রাজ্যের নিজস্ব কোনো সূচক ছিল না। কিন্তু, অভিযোগ ওঠে বর্তমান তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের ডিএর পার্থক্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। রাজ্য সরকারের তরফে এই নিয়ে কোনো সদর্থক পদক্ষেপ না দেখে, বাধ্য হয়েই সরকারি কর্মচারীদের একাংশ স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুন্যালে মামলা করেন।

কিন্তু স্যাট, পত্রপাঠ সেই মামলায় জানিয়ে দেয় ডিএ রাজ্য সরকারের দয়ার দান! ফলে, একপ্রকার বাধ্য হয়েই রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা এই বিষয়ে হাইকোর্টের স্মরণাপন্ন হলে, এক ঐতিহাসিক রায়ে কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দেয় ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সাংবিধানিক অধিকার। এর পাশাপাশিই, ডিএর হার কি হবে (ডিএ কেন্দ্রীয় হারে দেওয়া হবে কিনা) এবং তা বছরে কতবার করে দেওয়া হবে সেই নিয়ে স্যাটকে সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। স্যাটও নিজের রায়ে জানিয়ে দেয় – যেহেতু রাজ্যের নিজস্ব কোনো সূচক নেই, তাই কেন্দ্রীয় হারেই ডিএ দিতে হবে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

আর কলকাতা হাইকোর্ট হোক বা স্যাট রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের কাছে এই ডিএর অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য বড়সড় ‘অস্ত্র’ ছিল ‘রোপা ২০০৯’, অর্থাৎ বিগত পে-কমিশনের সময় রাজ্য সরকারের প্রকাশ করা গেজেটেড নোটিফিকেশন। আর সেই নোটিফিকেশনের জোরেই রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা হাইকোর্ট হোক বা স্যাট – রাজ্য সরকারকে কার্যত নাকানি-চোবানি খাইয়ে ছাড়ে! দিনের শেষে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের দাবিই সুপ্রতিষ্ঠিত হয়, বড়সড় হার হয় রাজ্য সরকারের। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার পাশাপাশি, ২০০৬ সাল থেকে সমস্ত বকেয়া এরিয়ার মিটিয়ে দেওয়ার কথাও রাজ্য সরকারকে জানানো হয়।

কিন্তু, ষষ্ঠ পে-কমিশনের ভিত্তিতে, অভিরূপবাবু যেকথা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তা যদি সত্যি হয়, তাহলে নতুন ‘রোপা ২০১৯’-তে হাইকোর্টের দেওয়া এই ‘সাংবিধানিক অধিকারটাই’ হারাতে চলেছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা! তাঁদের সাধের ডিএ এখন থেকে সরকারের ‘দয়ার দানে’ পরিণত হতে চলেছে বলে মনে করছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ! তাঁদের মতে, অভিরূপবাবুর মতে রাজ্য নিজস্ব সূচক তৈরী করে সেই অনুযায়ী ডিএ দিতে পারে। কিন্তু, সেই সূচকের মানদন্ড কি হবে?

এই প্রসঙ্গে, সরকারি কর্মচারী পরিষদের রাজ্য আহ্বায়ক দেবাশীষ শীলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যেখানে, কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে রাজ্য সরকারের অনীহা মুখ্যমন্ত্রী বারেবারেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সেখানে নিশ্চয় এই নতুন সূচক কেন্দ্রীয় হারের থেকে বেশি হারে দেওয়া হবে বলে তৈরী করার কথা ভেবে তৈরী হবে না! তাঁর কথায়, গোটা দেশে পশ্চিমবঙ্গই একমাত্র রাজ্য যেখানে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া হয় না। অন্ধ্রপ্রদেশের মত গোটা তিনেক রাজ্য বাদে বাকি সব রাজ্যেই কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া হয়। ওই তিন রাজ্যে কেন্দ্রীয় হারের থেকেও বেশি হারে ডিএ দেওয়া হয়।

দেবাশীষবাবুর বক্তব্য, অর্থাৎ গোটা দেশের ক্ষেত্রে দেখতে গেলে কেন্দ্রীয় হারই সর্বনিম্ন! আর সেই হারই মেনে নিতে অসুবিধার কথা বারেবারেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী! এমনকি, হাইকোর্ট বা স্যাট, ডিএ নিয়ে স্পষ্ট রায় দিয়ে দিলেও, পে-কমিশন ঘোষণার দিন – এই প্রসঙ্গ ‘কোর্টের বিষয়’ বলে এড়িয়ে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাহলে কি তিনি এই নিয়ে পুনরায় কোর্টে যাওয়ার ভাবনা থেকেই এই কথা বলেছিলেন? তাছাড়া, এখন যদি রাজ্য নতুন কমিশন বসিয়ে ডিএর জন্য নতুন হার ঠিক করে বলে – পশ্চিমবঙ্গের খরচ অনেক কম, তাই প্রাইস ইনডেক্স কম রাখা হল – তাহলে তার প্রতিকার পেতে আবার কি আদালতে ছুটতে হবে কর্মচারীদের?

দেবাশীষবাবু আরও জানান, তার থেকেও বড় কথা, একবার আদালতে গেলে সেই মামলাকে কি করে দীর্ঘায়িত করা যায় এবং ‘কোর্টে মামলা চলছে, তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না’ বলে কর্মচারী-বঞ্চনা দীর্ঘায়িত করা যায়, তাতো ডিএ মামলা চলাকালীনই প্রমাণিত হয়ে গেছে। আর এরফলেই, তাঁর প্রশ্ন, যে পে-কমিশন গড়িমসি করতে করতে প্রায় চার বছরের ‘কোটা’ সম্পূর্ণ করিয়ে ফেলা হল – সেই পে-কমিশনেরই রিপোর্ট হঠাৎ করে সামনে চলে এল! তার উদ্দেশ্য কি ডিএর ‘সাংবিধানিক অধিকারকে’ রাজ্য সরকারের ‘দয়ার দানে’ পর্যবসিত করতেই? দেবাশীষবাবু এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে সম্ভবত আগামী ২৩ তারিখ, মন্ত্রীসভার বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী এই সংক্রান্ত ঘোষণা করলে তবেই।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!