এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ৭

অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ৭


খুব ভোরে উঠেছে গুঞ্জা। আর চোখে দেখেছে অভি তখনও ঘুমোচ্ছে। দরজা ভেজিয়ে দিয়ে বাইরে গেছে। তখনও কেউ ওঠে নি। ঘরে ফিরে এসে বারান্দায় বসে ভেবেছে এরপর কি? ওকে কোনোদিনই অভি তার সাথে নিয়ে যাবে না। এই ঘরটা আর এই বারান্দাটা আর অভির সাথে কাটানো এই কটা মুহূর্ত শুধু থাকবে ওর। মনে পড়লো ওর বড় পিসি বলতো – ‘অতি ঘরণী না পায় ঘর, আর অতি সুন্দরী না পায় বর’। ওকেও তো সবাই বলে ও খুব সুন্দরী, ও কি তবে কোনোদিনই অভির কাছের হয়ে উঠতে পারবে না। কেন এমন করলো সন্দীপ। কেন সে আগে জানালো না। তাহলে বিয়ে ভেঙে যেত কিন্তু এইভাবে বিয়ে হতো না। কারুর বোঝা হতে হতো না ওকে। অনেকে উঠেছে শব্দ আসছে। আস্তে আস্তে ফের উঠে বাইরে গেলো গুঞ্জা। না ওঠেনি অভি, তখন ঘুমাচ্ছে। কিছুক্ষন গুঞ্জা ঘুমন্ত অভির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে আস্তে বাইরে গেলো।

স্নান সেরে সে জুঁইয়ের ঘরে রয়েছে। জুঁই অনেক কথা জিজ্ঞাসা করেছে তাকে। দাদাভাই আর তার ফুলসজ্জা নিয়ে। গুঞ্জা কিছু বলতে চায়নি। আগে থেকে চিনতো কিন্তু এখন ওর ভালো বন্ধু হয়ে গেছে। জুঁই নিজের মতো গল্প করছে গুঞ্জার সাথে। এর মধ্যে অভি উঠেছে, স্নান সেরে গুঞ্জাকে নিয়ে ঠাকুরদালানে প্রণাম করতে হয়েছে। তারপর ল্যাপটপের ব্যাগ ঝুলিয়ে সে তিনতলার ঘরে গেছে। সেখানে অফিসের কাজ করবে। বাড়ি প্রায় ফাঁকা। ছোট পিসি,পিসে, রিম্পা , সেজপিসি,মেজপিসি আর গুটি কয়েক জন। বাকি সবাই চলে গেছে। হঠাৎ করে বিয়ে, খুব কাছের তাই যে করেই হোক বৌভাতটা কাটিয়েছে আত্মীয়স্বজনরা। সকাল হতেই তারা রওনা দিয়েছেন বাড়ির দিকে। ছোট পিসি, পিসে, রিম্পাসেজপিসি, মেজপিসি ছাড়া বাকি সবাই বিকেলেই চলে যাবে। কুশল ও চলে গেছে। ও এমনিতেই এখানে দুদিন থেকে ওর বাড়ি যেত। বিয়েটা হয়ে গেলো বলে আরো দুদিন থেকে গেছে।

সেজপিসি, মেজপিসি, রিম্পা অভিকে অতন্ত্য কয়েকটা গুরুত্ত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়েছেন- যেমন

১, বৌকে নিয়ে বেশি মাতামাতি করবি না।
২. মাথায় তুলবি না, শক্ত হবি।যা চাইবে তাই দিবি না।
৩, কত সম্পত্তি আছে আমাদের, কতটাকা মাইনে পাস্ সেসব জানানোর দরকার নেই।
৪.আর সব থেকে বড় কথা যদি শ্বশুরবাড়ির লোক কাঁদে এই নেই সেই নেই করে যেন টাকা দিতে যাস না। চাওয়ার পরিমান বাড়বেই।
৫. ভুলেও কোনো সম্পত্তি বৌয়ের নামে কিনবি না, নিয়ে কেটে পড়বে আর ডিভোর্স দেবে।
অভি আর নিতে পারেনি। বলেছে আমার অফিসের অনেক কাজ আছে। আমাকে যেতে হবে বলে চলে গেছে।

মেজপিসি বলেছে – আসলে ভুক্তভুগি তো তাই বলছি। মেজপিসির দুই ছেলে। কারুর সাথেই সদ্ভাব নেই। তিনি মেয়ে অন্ত প্রাণ। আর তাঁর মেয়ে রিম্পার মতো না হলেও কাছাকাছি। বড় ছেলে ফ্লাট কিনে বৌ নিয়ে আলাদা থাকে। আর ছোট ছেলে সে বোম্বে থাকে যদিও তার সাথেও তেমন সদ্ভাব নেই। ছেলে নিজে বিয়ে করেছে। সেই বিয়েতেও ইচ্ছা ছিল না মেজপিসির। ছোট ছেলের শ্বশুরবাড়ির অবস্থা মেজপিসিদের মতো নয়, তাই তার ধারণা তার ছেলে সব শ্বশুরবাড়িতে দিয়ে দিচ্ছে, বোনের বিয়ে, শ্বশুরের অপারেশন সবেতে টাকা ঢালছে। না মেজপিসির মেয়ে আসেনি। তার ছেলের স্কুলে কিছু একটা টেস্ট আছে।পরে আসবে বলেছে।

সেজপিসির সমস্যা আবার আলাদা – তার ছেলের সাথে তার ছেলের বৌয়ের ভাব নেই। কারণ বৌমা বড্ডো খরচ করে, নিজের মতো থাকে , মুখরা, চাকরি করে রাত করে ফেরে এইসব অনেক কান্ড, নিত্য অশান্তি। ফলে ছেলে বৌ নতুন চাকরি নিয়ে কলকাতায় শিফ্ট করেছে। তাছাড়া আর একটা আপত্তি বৌকে নিয়ে তা হলো বৌয়ের রং কালো। সেই কালো রংটাই সব গুন্ ঢেকে দিয়েছে। ছেলে নিজেই বিয়ে করেছে অতএব কিছু করার নেই। সেজপিসি মরা কান্না জুড়েছিলো। মামারা আর দাদুই জোর করে বিয়ে দিয়েছিলো। তবে সেজপিসির সঙ্গে সমব্যাতি রিম্পা আর ওর বর। রিম্পার বর বলেছিলো – ওই কালো মেয়েটার সাথে কী করে রিপন সংসার করবে- আমার তো ভেবেই গা ঘিন ঘিন করছে। কেননা তাঁর বৌ সুন্দরী। তাঁকেও দেখতে সুন্দর। শুধু মন দুটি অতন্ত্য কুৎসিত। অবশ্য তারা তা মানেন না।

 

সুপ্রিয়া তিনতলার ঘরে অভিকে খাবার দিতে গিয়ে দেখলো কাজের নামে গেলেও অভি ঘুমাচ্ছে। একটু হাসলো – তারপর ডেকে বললো – খেয়ে নে , নিজের ঘরে গিয়ে শুলেই তো পারতিস, এখানে তো গরম।

অভি – না, কাজ আছে। অভি উঠে খেতে বসলো। সুপ্রিয়া চলে গেলো।একটু খেয়ে আবার শুয়ে পড়লো। খুব ঘুম পাচ্ছে। গুঞ্জা আর জুঁই গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে। অবশ্য গোটা বাড়িরই একই অবস্থা। সারাদিন তিনতলার ঘরে কাটিয়ে রাতে শুতে এসেছে অভি। দেখেছে গুঞ্জা খাটের এককোনে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে। কিছু না বলে নিজেও অন্যদিকে শুয়েছে। আজকেও পাহারা দিয়েছে রিম্পার বিষ।

পরের দিন সকালে মেজ পিসি, মেজ পিসি, ছোট পিসি আর পিসে চলে গেছে। রিম্পা আছে।আজ কাঠ ফাঁটা রোদ সকাল থেকে প্রচন্ড গরম পড়েছে তিনতলায় গিয়েছিলো ,কিন্তু থাকতে পারেনি অভি। দোতালায় নিজের ঘরে বসে কাজ করছে। ফোন বাজছে – দেখলো – রেড্ডি ওর ম্যানেজার ফোন করেছে। মাথা খাবে এই লোকটা। কি করে লোককেজ্বালাতে হয়, এই লোকটা খুব ভালো করে জানে। অভি ওয়ার্ক ফ্রম হোম করে বাড়ি এসেছে। ছুটি নেয়নি যে বলবে ছুটিতে আছে , এইসব কান্ড করে কাজ হয়নি। এর উৎপাতের জন্যই অভি জব চেঞ্জ করতে চেয়ে ইন্টারভিউ দিয়েছিলো কিন্তু এখনো কোনো রিপ্লাই পায়নি। গিয়ে আবার ট্রাই করবে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

ফোন তুললো অভি – সে অনেক কথা শুনিয়ে দিলো অভিকে। কাজ হয়নি। রাগ চেপে ওকে ওকে করলো অভি। সে ফোনটা কেটে দিলে – অভি – মোবাইল টা বিছানায় ছুড়ে ফেলে – আমার লাইফটা হেল করে দিলো বলে চেঁচিয়ে উঠলো। গুঞ্জা ঘরে ঢুকছিল চা নিয়ে। তার মনে হলো তাকে দেখেই রাগ করছে অভি। চা রেখে থমথমে মুখে সে ঘর থাকে বেরিয়ে গেলো। বাইরে গিয়ে দেখলো রিম্পা দাঁড়িয়ে আছে। রিম্পা সব শুনেছে সে বললো – কেন ডিসটার্ব করো , যখন ও পছন্দ করছে না , বার বার যাবার দরকার কি?
গুঞ্জা মাথা নিচু করে চলে গেলো। ওর একটা ফাঁকা ঘর দরকার। জুঁই নেই পড়তে গেছে। ওর ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করলো শুধু বিছানাটা বুঝলো গুঞ্জার কি দরকার , সে তার সর্ব শক্তি দিয়ে গুঞ্জার চোখের সব জল শুষে নিতে লাগলো।

গুঞ্জা জুঁই এর ঘরে ঢুকলো দেখে অভির ঘরে ধুলে – অভি শোন্ বলে কিছু বলতে যাচ্ছিলো।

অভি – আমার কাজ আছে তুই যা, বলে চেয়ে চুমুক দিয়ে ল্যাপটপে মন দিলো।

রিম্পা – একটা কথা —

অভি – সোজা বাংলা বুঝিস না। বললাম তো ডিসটার্ব করিস না। যা

মুখ বেকিয়ে চলে গেলো রিম্পা। অভি গুঞ্জার মনের কোনো খবরই জানলো না।

অভির বাবা হুকুম দিলেন – বাড়িতে এত গয়না রাখা ঠিক নয়। অতএব যে কটা লাগবে রেখে বাকি তাকে দিয়ে দিতে তিনি লকারে রেখে আসবেন। অন্যদের সাথে সাথে গুঞ্জাকেও গয়না আনতে বললো অভির মা অনুপমা।

তিনি বললেন – যে কত পছন্দ সেগুলো রেখে বাকি গয়না এনে দিতে।

গুঞ্জা – পরে দিলে হবে না। তোমার ছেলে কাজ করছে আমি যাবো অসুবিধা হবে।

সুপ্রিয়া – কি অসুবিধা হবে? তুই যা তো। দাদাভাই একটু পরেই বেরোবে বলেছে।

গুঞ্জা নিজের দরকার থাকলে কিছুতেই যেত না অভির ঘরে। কিন্তু এখন কি করে না বলবে। কিন্তু তাকে দেখে ফের যদি রাগ করে অভি, ইচ্ছা নেই যাবার। অনিচ্ছা স্বত্তেও ঘরে ঢুকলো গুঞ্জা। অভি ল্যাপটপে কিছু কাজ করছে, কিন্তু হচ্ছে না, মুখের আওয়াজে বোঝা যাচ্ছে যে সে বিরক্ত। কিন্তু গুঞ্জা ভাবলো তার জন্যই কি? কিন্তু কি করবে সে তাকে যে থাকতেই হবে। ড্রয়ার খুলে আলমারির চাবি নিলো। গোটা ঘর জুড়ে ঝমঝম নুপুরের শব্দ। অভি গুঞ্জাকে বললো – ওগুলো একটু খোলা যাবে,আমার আওয়াজে ডিসটার্ব হচ্ছে। যখন কোনো কাজ করতে পারে না অভি তখন তার চারপাশটা শান্ত না হলে আরো মাথা খারাপ হয় ওর। কোন আওয়াজ হলে কাজের থেকে সেদিকেই বেশি মন যায় ওর। কাজে কন্সেন্ট্রেটে করতে পারেনা ও।

না ভালো ভাবেই বলেছে অভি ওকে। কিন্তু গুঞ্জার মনে হলো সে নুপুর পরে বড় কোনো দোষ করে ফেলেছে। তার জন্য অভির ডিসটার্ব হচ্ছে। মুখটা কালো হয়ে গেলো, সঙ্গে সঙ্গে নুপুর খুলে রাখলো। অভি কাজে মন দিলো। গয়না বের করে তাড়াতাড়ি আলমারিতে চাবি দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

গয়না এনে সে অনুপমাকে দিলো। সাথেই তার হাতে থাকা এক জোড়া বালা রেখে বাকি সব চুড়ি খুলে দিলো। অভির যদি চুরির আওয়াজেও অসুবিধা হয়। যদি তার উপর এতটাই বিরক্ত হয় যে আর কোনো দিন এই বাড়িতে না আসে। না সে আর কোনো আওয়াজ করবে না। অনুপমা বললো – সব গয়না কেন আনলি। চুড়ি খুলছিস কেন ? বললাম তো তোকে কিছু রেখে দিতে। অষ্টমঙ্গলাতেও তো যাবি তাছাড়া বাড়িতে পড়বি।

রিম্পা আগুন লাগাবার একটা সুযোগ পেয়ে বললো – বাবা তোমার তো রাগ কম নয়, দিতে চাইছিলে না, মামিমা জোর করে আনতে বলেছে বলে সব রেগে দিয়ে দিচ্ছ।

গুঞ্জা – না না দিদিভাই, আমি গয়না একদম পড়ি না। আমার খুব ভয় লাগে – এত দামি সোনার গয়না কোথাও যদি হারিয়ে যায়। আস্তে আস্তে বললো গুঞ্জা।

সুপ্রিয়া – তোর একটা করে খুঁত ধরা চাইই বল রিম্পা।

রিম্পা – খুঁত কেন ? আনতেও তো চাইছিলো না তাই বললাম।

সুপ্রিয়া – এই নুপুর কোথায়?

গুঞ্জা – খুব ভারী পায়ে লাগছিলো বলে খুলে রাখলাম পরে পড়বো।

রিম্পা – তুমিই দেখো ছোট মামী, যেমনি গয়না লকারে রাখবে বলে অনিচ্ছা স্বত্তেও দিতে বললে তেমনি নুপুর ভারী লাগছে, এত দামি সোনার গয়না হারাবার ভয় করছে।

সুপ্রিয়া – ঠিক বলেছিস, এতদিন তো সব গয়নাগুলো ও গায়ে জড়িয়ে ছিল।

রিম্পা – মানবে না তাই, যেটা সত্যি সেটাই বললাম।

সুপ্রিয়া – চুপ কর তো, দিদিভাই ও কিছু বলবে না। আমাকে দাও এখান থেকে কিছু গয়না আমি রেখে দিচ্ছি ।

তখনকার মতো মিটলেও রিম্পা সুযোগ খুঁজতে লাগলো অভিকে কথাটা লাগাবে। বলেছেও তবে অভি পাত্তা দিয়েছে কিনা বুঝতে পারেনি।

দিন যাচ্ছে, গুঞ্জা যতটা পারে অভির থেকে দূরে থাকে। খুব ভোরে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। সারাদিনে অভির সামনে খুব না দায়ে পড়লে আসে না।রাত্রে শুধু বিছানার এককোণে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে থাকে।  বৃষ্টি হয়েছে, একটু গরম কমেছে সে তিনতলার ঘরেই আশ্রয় নিয়েছে।রাত্রে আসে শুতে। নাহলে এখনই অনেক কথা হবে। বাড়ির লোক সব দেখে কিন্তু বার বার বলেও কাজ হয়না। অভি নেটের প্রব্লেম বলে অজুহাত দেখিয়ে তিনতলায় থাকে আর গুঞ্জা কিছুতে যেতে চায়না। চা ,জলখাবার দিয়ে গুঞ্জকে ইচ্ছা করে উপরে পাঠায় সুপ্রিয়া। কিন্তু কোনো মতে দিয়েই বেরিয়ে আসে গুঞ্জা। এক সেকেন্ডও ঘরে দাঁড়ায় না।

অষ্টমঙ্গলায় অনিচ্ছা স্বত্তেও গেছে অভি, গুঞ্জা আর জুঁই। কোনো মতে একবেলা কাটিয়ে ফিরে এসেছে। ইতিমধ্যে মায়ের সঙ্গে তার বেশ কয়েকদফা ঝামেলা হয়েছে। মায়ের সাথে কথা বলেন আর অভি। মা কান্না কাটি করলে বলে এখুনি বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাবে। গুঞ্জা শুনেছে অভি মাকে বলেছে – মায়ের কু ডাকার জন্যই, ওর আজ এমন অবস্থা হয়েছে। এইসব প্রব্লেম এর মধ্যে ফেঁসে গেছে। প্রব্লেম মানে তো গুঞ্জা। যদি পারতো গুঞ্জা, অভির জীবন থেকে সরে গিয়ে ওকে মুক্ত করে দিতে। কিন্তু গুঞ্জার বাবা মা, এই বাড়ির এতগুলো মানুষেকে কি করে বিপদে ফেলবে ও।

রাতে ফ্লাইট। দুপুরে বেরিয়ে যাবে অভি। গুঞ্জার মন ভারী হয়ে আছে সকাল থেকেই। জানে অভি ওকে পছন্দ করে না , কথা বলে না, সামনে গেলে বিরক্ত হয়, মনে করে এই গুঞ্জার জন্যই তার লাইফটা হেল হয়ে গেছে। কিন্তু তবু তো গুঞ্জা লুকিয়েও অভিকে দেখতে পেত। জানতো ওই উপরের ঘরটাতে অভি আছে। এবার তো আর কিছু থাকবে না। শুধু কয়েকটা স্মৃতি।

যাবার আগে অভি ডাকলো গুঞ্জাকে। ঘরে এলো গুঞ্জা। বিছানায় একটা এটিএম কার্ড, ১০,০০০ টাকা আর একটা নতুন স্মার্ট ফোন রেখে দিয়ে বললো- এগুলো রাখো দরকার হতে পারে। আমি জানিনা তোমার কি ফোন আছে এই নতুন ফোনটা ইউস কোরো। একটা চিরকুট গুঞ্জার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো এতে এটিএমের পিন আর আমার ফোন নম্বর আছে দরকার হলে ফোন করো।

আবার দয়া করছে অভি ওকে, না আর অভির দয়া নেবে না গুঞ্জা।

গুঞ্জা বললো – আপনি এগুলো নিয়ে যান আমার লাগবে না।

অভি – আজ না হলেও কাল লাগতে পারে রেখে দাও।

গুঞ্জা – হয়তো কোনোদিনই লাগবে না,বলে ঘর থেকে চলে গেলো।

এত কিসের অহংকার ওর? কিসের দম্ভ  দেখেচ্ছে ও অভিকে। কিসের জন্য অভিকে এইভাবে অপমান করে ও। গুড আর কোনো দায় অভিরও নেই। সুপ্রিয়াকে টাকা, মোবাইল আর এটিএম কার্ড দিয়ে বললো রেখে দাও। গুঞ্জা যদি চায় দেবে, নাহলে ফেলে দেবে।

বাড়ি থেকে বের হলো অভি। গুঞ্জার দিকে ফিরেও তাকালো না। মাকেও কোনো কথা বললো না, প্রণাম করে শুধু আসছি বলে চলে গেলো অভি ব্যাঙ্গালুরুতে।

এয়ারপোর্টে পৌঁছেও ফোন করেনি মাকে ছোটমাকে বলেছে। বেঙ্গালুরুতে পৌঁছে বাবাকে কল করেছে , মা ফোন ধরে ফের শুরু করেছে কথা বল মেয়েটার সঙ্গে। কি বলবো ওকে ?

দিতে গেলাম তো মুখের উপর বললো লাগবে না। থাকুক ও ওর ঘ্যাম নিয়ে।
ফ্ল্যাটে ঢুকলো অভি। এখনো আসেনি কুশল। অনেক কাজ আছে। কিন্তু গুঞ্জার উপর থেকে রাগটা কমছে না কিছুতেই। এত কিসের মেজাজ ওর, কিসের অহংকার? দেখতে সুন্দরী তাই। ওর মতো সুন্দরী অনেক দেখেছে অভি। পাত্তাও দেয়নি। আর ওকি বলেছে যেন – ওকে বিয়ে করে অভি বর্তে গেছে। ভাগ্য খুলে গেছে। থাক ও ওখানে ওর মতো ঘ্যাম নিয়ে।

অভি চলে গেছে গুঞ্জাকে একেবারে একা করে দিয়ে। মনে হচ্ছে কেউ নেই ওর, শুধু গোটা পৃথিবীতে ও একা। ঘরে গিয়ে কাঁদছে গুঞ্জা। সুপ্রিয়া ঘরে এসে সামলাচ্ছে। বলছে – কাঁদছিস কেন ? আবার আসবে তো ও। একটু সময় দে ওকে। ও খুব ভালো ছেলে। দেখবি তোকে খুব আদর যত্নে রাখবে -মানুষকে ভালোবাসতে জানে। একটু সময় দে।

অনেক কথা মনে হচ্ছে ওর। আচ্ছা ও হয়তো পৌঁছেই সেই মেয়র সাথে দেখে করবে। তাকে বোঝাবে ও ফেঁসে গেছে। তাকে জড়িয়ে ধরে অনেক ……………….. না আর ভাবতে পারলো না গুঞ্জা।

অভির অফিস শুরু। অফিসে খবর ছড়িয়েছে ভায়া ফেসবুক যে অভি বিয়ে করেছে। সায়না কে দেখে অবাক হলো অভি। তার হেলদোল নেই। সে উইশ করছে হেসে। সাথেই একটা গুড নিউস আছে বলেছে। কি ?

সেও নাকি প্রেমে পড়েছে। অফিসের একজন সিনিয়রের। কিন্তু অভি জানে সেই সিনিয়ার বিবাহিত।তাতেও নাকি সায়নার অসুবিধা নেই।সেই সিনিয়র ডিভোর্স দিচ্ছে বৌকে। ওরা এখন লিভ টুগেদার করছে। হটাৎ পার্টিতে তাদের মনে হয়েছে একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারবে না। না ভালোই হয়েছে একদিক থেকে সায়নার সঙ্গে না জড়িয়ে সে অনেক আলাদা অভির থেকে। কিন্তু গুঞ্জা ? সেও তো রিম্পার মতো।

অফিস অফিসের মতো কাটছে। ফ্ল্যাটে কোনো মতে দিন কাটাচ্ছে অভি। পালতে চাইছে অনেক দূর। কোথায় যাবে সে। বাড়ি? না যেতে ইচ্ছা করে না আর। বাড়িতে কোনো মতে ফোন করে বলে ভালো আছে।দু চারটে কথা বলে রেখে দেয় । গুঞ্জার কথা জিজ্ঞাসা করে না। দরকার কি? নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পারে। অভির কোনো সাহায্যের দরকার কি তার।

সপ্তাহ দুই পরে রাত্রে রিম্পার ফোন এলো – অভি দাদুভাইয়ের খুব শরীর খারাপ। কি হয় , কি হয় অবস্থা। ওই মেয়ে গুঞ্জা কি সব লাগিয়েছে দাদুকে তুই ফোন করিস না , কথা বলিস না। ওকে নিয়ে যাচ্ছিস না, বিয়ে দিয়ে জীবন নষ্ট এইসব। সেই সাৰ শুনেই তো দাদুর প্রেসার বেড়ে গিয়ে যা এটা অবস্থা। তোকে জানাতে মানা করেছে। কাউকে বলিস না। কি হয় আমি পরে জানাবো।

গুঞ্জা দাদুকে নালিশ করেছে এইসব বলে? দাদু এইসব শুনলে সহ্য করতে পাবে না জেনেও ? কেমন আছে এখন দাদু ? বাড়াবাড়ি কিছু তাই আমাকে বলতে মানা করেছে? নাকি গুঞ্জার জন্য দাদুর এই অবস্থা তাই মানা করেছে। পরের দিন সকালের ফ্লাইট পাওয়া গেলো। অভি বাড়িতে কিছু না বলে ফের রওনা দিলো বাড়ির উদেশ্যে। যদি দাদুর কিছু হয় ওই মেয়েকে ডিভোর্স দেবে অভি।

আগের পর্ব – অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ৬

 

পরের পর্ব   —–  অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ৮

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!