এখন পড়ছেন
হোম > রাজনীতি > বিজেপি > আরও বিপাকে বঙ্গ বিজেপি? সুকান্তর বক্তব্যে বাড়ছে জটিলতা! শোরগোল কর্মী মহলে!

আরও বিপাকে বঙ্গ বিজেপি? সুকান্তর বক্তব্যে বাড়ছে জটিলতা! শোরগোল কর্মী মহলে!


প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-লোকসভা নির্বাচনের যত সময় এগিয়ে আসছে, ততই বঙ্গ বিজেপির আরও তৃণমূলের বিরুদ্ধে জোরদার লড়াই দেওয়ার কথা। কিন্তু লড়াই না দিয়ে, নিজেরাই যেভাবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে, যেভাবে রাজ্য নেতৃত্বকে অমান্য করছেন কর্মীরা, যেভাবে পার্টি অফিসের সামনে বিক্ষোভ হচ্ছে, বিজেপির মত শৃঙ্খলা পরায়ন দলে তা দেখে মোদী-শাহের কতটা টনক নড়ছে, তা এখান থেকেই বলা সম্ভব নয়। কিন্তু বিজেপির যারা প্রকৃত কর্মী, যারা প্রতিমুহূর্তে নিচু তলায় দাতে দাঁত চেপে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, মার খাচ্ছেন, তারা আন্তরিকভাবে প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছেন। নেতৃত্বের কাজ, যখন বিদ্রোহ হবে, যখন কর্মী মহলে অসন্তোষ থাকবে, তখন তাদের সবাইকে নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসা। কার কোথায় কি অভাব অভিযোগ রয়েছে, তা মন দিয়ে শোনা। কিন্তু সেটা না করে এবার সেই আন্দোলনকে দমন করতে যে কথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি বললেন, তা নিয়ে কর্মী মহলে আবার অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

অনেকে বলছেন, সুকান্ত বাবু তো অধ্যাপক মানুষ। তিনি তো সভ্য, শিক্ষিত মানুষ। তিনি তো বারবার বলেন, আলোচনা করে সবার মতামত নিয়ে দল চলবে। সেখানে কোনো একজন নেতাকে নিয়ে কর্মীদের এই বিক্ষোভ, তখন কর্মীদের মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে যারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধেই কি পদক্ষেপ নেওয়ার পথে হাঁটতে চলেছেন বিজেপির বর্তমান রাজ্য নেতৃত্ব? না, এই কথা আমরা বলছি না। এই কথা বলছেন বিজেপির নীচু তলার কর্মীরাই। তারাই দাবি তুলছেন, কর্মীদের কথা না শুনলে সামনের দিন রাজ্যে খাতা খুলতে পারবে না গেরুয়া শিবির।

প্রসঙ্গত, বারাসাত সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে কর্মীদের মধ্যে। তা নিয়েই কর্মীরা সল্টলেকের পর মুরলীধর লেনের অফিসের সামনে বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বের ছবিতে লাথি পর্যন্ত দিতে থাকেন। তারা দাবি তোলেন, এই রাজ্য নেতৃত্ব দ্বারা কোনোমতেই সংগঠন পরিচালনা করা সম্ভব নয়। আর সেই বিদ্রোহ বিজেপির মত দলে দেখে রীতিমতো হতবাক হয়ে পড়েন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও। অনেকেই প্রশ্ন করেন, কি করছে রাজ্য নেতৃত্ব? কেন তারা কর্মীদের বিদ্রোহকে সামাল দিতে পারছে না! আর এই পরিস্থিতিতে এবার গোটা বিষয়ে মুখ খুললেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। এদিন তিনি বলেন, “যারা এই সমস্ত কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শুধু পদক্ষেপ নয়। কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে যারা এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে বহিষ্কার করা হতে পারে।”

আর এখানেই অনেকের প্রশ্ন, সুকান্তবাবু কড়া হাতে বিদ্রোহকে দমন করতে চাইছেন, তা ঠিক। কিন্তু আলোচনা করে কি সেই বিদ্রোহকে দমন করা যেত না? কর্মীদের যে ব্যাপারে আপত্তি, তাদের সঙ্গে কি সেই বিষয় নিয়ে কথা বলা যেত না? শুধুই এক পক্ষের সিদ্ধান্ত নিয়ে যদি বর্তমান রাজ্য নেতৃত্ব কাউকে কাউকে বহিষ্কারের পথে হাটে, তাহলে তো তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে কোনো পার্থক্যই থাকবে না! তৃণমূলকে তারা লিমিটেড কোম্পানি বলে দাবি করে, সেই বিজেপিকেও তো এখন কর্মীরা সুকান্ত-অমিতাভর কোম্পানি বলে সোচ্চার হবেন। তখন বিজেপি সেই ছাপ নিজেদের গা থেকে মুছে ফেলতে পারবে তো? প্রশ্ন তুলছেন সমালোচকরা।

তবে এই প্রসঙ্গে অনেকে আবার পুরনো কথা বলতে শুরু করেছেন। স্মৃতি তুলে ধরে বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, কিছুদিন আগে প্রলয় পালের মতো নেতা দলের প্রতি অভিমান করেছিলেন। রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার কথাও জানিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে হস্তক্ষেপ করে শুভেন্দু অধিকারী তার মান ভাঙ্গিয়ে প্রলয় পালকে আরও গুরুত্ব দিয়েছেন। যার ফলে প্রলয়বাবুও খুশি। তিনি নতুন উদ্যমে দল করার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। ফলে শুভেন্দু অধিকারীর দ্বারা যদি এটা সম্ভব হয়, তাহলে সুকান্ত মজুমদার তো তার থেকে অনেক বড় নেতা বলে তার ঘনিষ্ঠতা দাবি করেন। তিনি তো রাজ্য সভাপতি, সংগঠনের প্রধান। তাহলে তিনি কেন সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসে পরিস্থিতিকে সামাল দিতে পারছেন না? তাই দিনের শেষে কর্মী মহলের পক্ষ থেকেই একটা আওয়াজ উঠছে যে, বর্তমান রাজ্য নেতৃত্ব তৃণমূলের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে ব্যর্থ। যদি দায়িত্ব দিতে হয়, তাহলে বাংলায় বিজেপির সংগঠনকে পরিচালিত করার মত একজনই রয়েছেন বাপের ব্যাটা, তার নাম, শুভেন্দু অধিকারী।

পর্যবেক্ষকদের মতে, বিজেপি কি করবে, সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। এই ব্যাপারে কারওর কিছু বলার নেই। বাংলায় নাকি তারা ক্ষমতায় আসবে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নাকি বাংলা নিয়ে ভাবছে, এই তাদের বাংলা নিয়ে ভাবার পরিচয়? যেখানে কর্মীতে কর্মীতে গন্ডগোল লাগছে, পার্টি অফিসের সামনে বিক্ষোভ হচ্ছে, রাজ্য নেতৃত্বকে অপমান করছেন কর্মীরা, তারপরেও ব্যর্থ হিসেবে পরিচিত রাজ্য নেতৃত্বকেই ক্ষমতায় রেখেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কোথায় সেই রাজ্য নেতৃত্ব কর্মীদের প্রতি সুর নরম করে তাদের বিদ্রোহকে সামাল দেবেন, তা না করে তাদের প্রতি কড়া মনোভাব পোষণ করছেন। ফলে এই করে আর যাই হোক, বাংলার সংগঠনকে চাঙ্গা করতে পারবে না বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। আর এভাবেই যদি চলতে থাকে, তাহলে লোকসভায় বাংলা বাদ দিয়েই হিসাব করতে হবে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের। দিনের শেষে তেমনটাই বলছেন রাজনৈতিক সমালোচকরা।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!