এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > হিংসাত্মক আন্দোলন বিজেপির হাত শক্ত করছে, এনআরসি নিয়ে দলীয় নেতাদের কড়া নির্দেশিকা তৃণমূলের

হিংসাত্মক আন্দোলন বিজেপির হাত শক্ত করছে, এনআরসি নিয়ে দলীয় নেতাদের কড়া নির্দেশিকা তৃণমূলের

সংশোধিত নাগরিক আইনের বিরুদ্ধে অনেক আগেই প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বরাবরই আন্দোলনের ক্ষেত্রে শান্তি, শৃঙ্খলা এবং অহিংসা বুঝিয়ে রাখতে নির্দেশ দেন তৃণমূল নেত্রী‌। কিন্তু সম্প্রতি সংসদের দুই কক্ষ থেকে পাশ হয়ে যাওয়ার পরে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর সাপেক্ষে যখন সিটিজেনশিপ আমেন্ডমেন্ট বিল সিটিজেনশিপ আমেন্ডমেন্ট অ্যাক্টে পরিণত হয়, তখন দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর পাশাপাশি বাংলাতেও শুরু হতে থাকে একাধিক প্রতিবাদ এবং আন্দোলন।

রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে বারবার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন তৈরি করার কথা বলা হলেও, অনেক জায়গাতেই সেই আন্দোলন শান্তি-শৃঙ্খলাভাবে পরিচালিত হয় না, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রেলওয়ে স্টেশনে আগুন দেওয়া থেকে শুরু করে রেলগাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, বাসে আগুন দেওয়া, পথ অবরোধ, মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষতি করা, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করা, লুটতরাজের মত ঘটনাও দেখা যায়।

বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে করেই রীতিমতো চিন্তা ছড়ায় রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে। বিশেষত মালদা থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর থেকে শুরু করে হুগলি, উত্তর 24 পরগনা ইত্যাদি জেলায় হিংসা আন্দোলনের তীব্রতা চোখে পড়ে। কিছু কিছু জায়গায় অবশ্য লক্ষ্য করা যায়, তৃণমূল কংগ্রেসের মিছিল বের হওয়ার পর সেই মিছিল থেকেই পার্টি অফিসে হামলা এবং অনেক ক্ষেত্রে টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধের মত চিত্র চোখে পড়ছে।

কিন্তু এবারে রীতিমত নির্দেশ জারি করে হিংসা, আন্দোলন থেকে বিরত থাকতে তৃণমূল নেতৃত্বদেরকে নির্দেশ দিতে দেখা গেল। মালদা জেলা তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বকে রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন করে মঙ্গলবার মালদা জেলা তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, হিংসাত্মক আন্দোলন আদতে ভারতীয় জনতা পার্টির হাতকে শক্ত করবে। তাই দলের নির্দেশিত পথের বাইরে গিয়ে এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে কোনো নেতা, নেত্রী যদি হিংসায় মদত দেয়, তাহলে দল তার মাথার উপর থেকে হাত সরিয়ে নেবে।

পুলিশ বা প্রশাসনের তরফে সংশ্লিষ্ট নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে দল তার পাশে দাঁড়াবে না। হিংসাত্মক আন্দোলন থেকে কোনরকমের রাজনৈতিক অ্যাডভান্টেজ যাতে ভারতীয় জনতা পার্টি গ্রহণ করতে না পারে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে চাইছে মালদা জেলা তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। যদিও এই ব্যাপারে ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে রীতিমতো কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে। এই বিষয়ে মালদা জেলা ভারতীয় জনতা পার্টির মুখপাত্র অজয় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “নাগরিকত্ব সংশোধনী এবং এনআরসি নিয়ে তৃণমূল বিভাজনের রাজনীতি করছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমরা মানুষের দরজায় দরজায় গিয়ে প্রচার করব।”

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

মঙ্গলবার রথবাড়ি স্টেশন রোডের নূর ম্যানশন ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করেন মালদহ জেলা তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। সেই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মালদহ জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম নেতা এবং ইংরেজবাজার পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান দুলাল সরকার ওরফে বাবলা সরকার, মোথাবাড়ি বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিন, মালদহ জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী চৈতালি ঘোষ, বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায় সহ অন্যান্য নেতানেত্রীরা।

এদিনের সাংবাদিক সম্মেলন থেকে বিধায়িকা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় নাগরিকপঞ্জি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে অহিংস আন্দোলনে নামার ডাক দিয়েছেন। কিন্তু অনেকে তৃণমূলের নাম করে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করছে। এই ধরনের কর্মকান্ড আমরা সমর্থন করি না। এতে দলের কেউ জড়িত থাকলেও প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। হিংসায় মদদদাতাদের দল বাঁচাবে না।”

এই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে সাবিনা ইয়াসমিন আরও বলেন, “কালিয়াচকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নেই বলে বিজেপি নেতারা দাবি করছেন। এতে কালিয়াচকবাসী বিজেপি নেতাদের ধিক্কার জানিয়েছে। স্থানীয় বিধায়ক হিসেবে আমি দুদিন আগে কালিয়াচকের এনআরসি বিরুদ্ধে মিছিল করেছে। শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিভিন্ন ধর্মের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

আবার তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম নেতা তথা ইংরেজবাজার পৌরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান বাবলা সরকার বলেন, “নেত্রীর নির্দেশ মেনে সকলকে চলতে হবে তৃণমূলের নামে কাউকে হিংসা ছড়াতে দেব না। আমরা আগামী দিনে বিজেপির পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের কালাকানুনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করব। তবে তা মানুষের সঙ্গে নিয়ে সংগঠিত করা হবে। কখনও মানুষকে সমস্যায় ফেলে আন্দোলন করা উচিত নয়।” তবে তৃণমূল কংগ্রেস যাই বলুক না কেন, তাদেরকে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করতে ছেড়ে দেননি ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বের।

তৃণমূল কংগ্রেসকে পাল্টা আক্রমণ করে বিজেপি নেতা অজয় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “মানুষ তৃণমূলের আসল রূপ বুঝে গিয়েছে। আন্দোলনের নামে তিনদিন ধরে একশ্রেণীর মানুষ ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছিল। হিংসাত্মক আন্দোলনের গোড়াতেই রাজ্য সরকার তথা প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে বিপুল পরিমাণ সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস পুলিশের একাধিক পদক্ষেপ নিয়ে সেকথা বুঝিয়ে দিয়েছে।”

এছাড়াও হিংসাত্মক আন্দোলনের বেশিরভাগ ঘটনাতেই তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা নেত্রীরা জড়িত বলেও অভিযোগ করেন অজয়বাবু। আগামী 23 শে ডিসেম্বর এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সমর্থনে কলকাতায় বিশাল আকৃতির মিছিল হবে বলে জানান অজয়বাবু। কলকাতার মিছিলের পরে জেলায় জেলায় মিছিল করা হবে বলে জানিয়েছেন মালদা জেলা বিজেপির মুখপাত্র।

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিভাবে শান্তির বার্তা দিয়ে শান্তিপূর্ণ অহিংস আন্দোলন গড়ে তুলতে বলেছেন, সেভাবে যদি তৃণমূল কংগ্রেস আন্দোলন করে সেক্ষেত্রে মানুষের সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, হিংসাত্মক আন্দোলনের ঘটনা কিন্তু ক্রমশ দুর্বল করবে রাজ্যের শাসক দলকে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!