এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > নারদ মামলার আপাত নিরীহ কেসে একের পর এক ভুল করে CBI এর হাতে বড়সড় অস্ত্র তুলে দিলেন খোদ মমতা?

নারদ মামলার আপাত নিরীহ কেসে একের পর এক ভুল করে CBI এর হাতে বড়সড় অস্ত্র তুলে দিলেন খোদ মমতা?


প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – সোমবার নারদা কাণ্ডে গ্রেফতার করা হয়েছে রাজ্যের দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায় সহ তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র এবং প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর বিজেপি পরাজিত হওয়ার কারণে তারা এভাবে প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ করছে বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে দিনের শেষে সত্যের জয় হবে বলে দাবি করেছিল শাসকদল। এমনকি সেই মত ব্যাঙ্কশাল আদালতের পক্ষ থেকে চার নেতাকে জামিন দেওয়ার পরেই রীতিমত উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে রাতের মধ্যেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে।

যেখানে ব্যাঙ্কশাল আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। যেখানে রাত সাড়ে দশটায় হাইকোর্টের পক্ষ থেকে আদালতে জামিনের আবেদনের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করা হয়। মুহুর্তের মধ্যে বিষাদের পরিস্থিতি শুরু হয়। তবে হাইকোর্টে যখন সিবিআই সেই জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিল, তখন থেকেই নারদা মামলার মোড় ঘুরতে শুরু করে বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বলা বাহুল্য, দিনভর নাটকীয় পরিস্থিতির পর অবশেষে রাতে যবনিকাপতন হয়। সোমবার সকালে সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে তৃণমূলের মন্ত্রী এবং বিধায়ককে গ্রেপ্তার করার পরেই নিজাম প্যালেস এসে উপস্থিত হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রীতিমত হই হট্টগোল শুরু হয়ে যায় সিবিআই দপ্তরের বাইরে। আর সেই বিষয়টিকে তুলে ধরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত প্রভাবশালী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এভাবে সিবিআই দপ্তরে উপস্থিত হয়ে গোটা বিষয়টিকে প্রভাবিত করতে চাইছেন বলে অভিযোগ করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা।

এমনকি এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে কোনোমতেই এই মামলা চলতে পারে না। তাই ভিন রাজ্যে এই মামলা চালানোর ব্যাপারে অনুমতি চাওয়া হয়। স্বাভাবিক ভাবেই এবার যদি সেই ব্যাপারে অনুমতি দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ তৃণমূলের একশ্রেণীর জন্যেই ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কপালে শনি নাচতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থ্যাৎ সহজ-সরল একটি মামলাকে এইভাবে জটিল করার পেছনে এবং সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে অন্য রাজ্যে এই মামলা নিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের অন্যান্য প্রভাবশালী নেতারাই দায়ী বলে দাবি করছেন একাংশ।

বিশেষ সূত্র মারফত খবর, ব্যাঙ্কশাল আদালতের পক্ষ থেকে চার নেতা জামিন পাওয়ার পরেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় সিবিআই। সোমবার রাতে সেই জামিন যাতে মঞ্জুর করা না হয়, তার জন্য হাইকোর্টে আবেদন জানানোর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে কোনোমতেই এই মামলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। অন্য রাজ্যে এই মামলা স্থানান্তরিত করা হোক বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। এমনকি এর পেছনে দুটি কারণ উল্লেখ করে সিবিআই আধিকারিকরা।

যার মধ্যে অন্যতম, হেভিওয়েট নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পরই নিজাম প্যালেসে উপস্থিত হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেখানে গিয়ে তিনি দাবি করেছিলেন, তাকেও গ্রেপ্তার করতে হবে। সিবিআইয়ের একাংশের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সেদিক থেকে তিনি একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাই তিনি এখানে উপস্থিত হয়ে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি সিবিআই দপ্তরে উপস্থিত হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় “এখানে প্রচণ্ড গরম, চাইলে তিনি এসি লাগিয়ে দিতে পারেন” এমন কথাও বলেন।

যার ফলে কলকাতার সিবিআই দপ্তরে গিয়ে সেখানকার আধিকারিকদের মন জয়ের জন্য এবং প্রভাব সৃষ্টি করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যথেষ্ট চেষ্টা করছেন, সেই বিষয়টিও সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়ায় সিবিআইয়ের কর্তা ব্যক্তিদের কাছে। আর দ্বিতীয়ত, সোমবার সকালে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে যখন শুনানি পর্ব শুরু হয়েছিল, তখন তৃণমূলের প্রথম পর্বের নেতা থেকে শুরু করে অনেক হেভিওয়েট মন্ত্রীকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।

স্বাভাবিক ভাবেই বিচারপতি বা বিচারব্যবস্থা এর ফলে প্রভাবিত হয়ে যেতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই এই দুইটি বিষয়কে সামনে রেখে রাজ্যে যে আর কোনোমতেই নারদা মামলা চালানো সম্ভব নয়, এই বিষয়টি তুলে ধরে তা অন্য রাজ্যে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। আর যদি এমনটা হয়, তাহলে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্যই যে তৃণমূল কংগ্রেসের হেভিওয়েট নেতা, যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তারা আরও সমস্যার মুখে পড়বেন, তা একপ্রকার স্পষ্ট রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কাছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে সিবিআই বড় সুযোগ পেয়ে গেল। কেননা একদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘ সময় সিবিআই দপ্তরে উপস্থিতি এবং ব্যাঙ্কশাল কোর্টে বিচারব্যবস্থা চলার সময় তৃণমূল নেতাদের উপস্থিতি এমনিতেই সিবিআইয়ের হাতে বাড়তি হাতিয়ার তুলে দিয়েছে। তার মধ্যে যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় নেতা, মন্ত্রীদের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে সরব হয়ে সিবিআই দপ্তরে প্রবেশ করেন, তখন বাইরে রীতিমত বিক্ষোভ চরম আকার ধারণ করতে শুরু করে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং সিবিআই কর্তাদের আচরণের প্রতিবাদে তৃণমূল রীতিমত লকডাউন ভেঙ্গে রাস্তায় নেমে সিবিআই দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পরিস্থিতি এতটাই আয়ত্বের বাইরে চলে যায় যে, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে লাঠি, ইটবৃষ্টি করা হয় তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলে অভিযোগ। তাই এই পরিস্থিতিতে এখন আদালতের কাছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা খুব সহজেই আবেদন করে এই মামলাকে অন্য রাজ্যে নিয়ে গিয়ে তা পরিচালনা করবার কথা বলতে পারে।

এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে বেশ কিছু তথ্য রয়েছে। যা দিয়ে তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়ে রাজ্যের শাসকদলের এই সমস্ত হেভিওয়েট নেতাদের অন্য রাজ্যে নিয়ে গিয়ে তদন্ত প্রক্রিয়া চালানো হতে পারে। অতীতে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে প্রয়াত তাপস পালের ক্ষেত্রে অন্য রাজ্যে নিয়ে গিয়ে মামলা পরিচালনা করার নজির রয়েছে।

আর চার হেভিওয়েট নেতা গ্রেফতারের পর তৃণমূলের নেতা নেত্রী সহ স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানোর যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে নারদা মামলা অন্য মোড় নিতে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। যা তৃণমূলের পক্ষে বা ধৃত রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বিধায়ক মদন মিত্র এবং প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত চাপের কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলেই দাবি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। সব মিলিয়ে গোটা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!