প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – 2019 এর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের কোণঠাসা অবস্থা দেখে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বারস্থ হয়েছিলেন ভোট কৌঁশলী প্রশান্ত কিশোরের। তারপর থেকেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন প্রশান্ত কিশোর ও তাঁর সংস্থা আইপ্যাড। প্রথম প্রথম সবকিছু ভালোভাবে চললেও যত সময় যাচ্ছে, ততই প্রশান্ত কিশোরের প্রতি নিজেদের বিক্ষুব্ধ মনোভাব তুলে ধরছেন তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতা, বিধায়ক। মনে করা হচ্ছে, এই মুহূর্তে তৃণমূল শিবিরে অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে মূলত প্রশান্ত কিশোরকে ঘিরেই। বরাবরই শুভেন্দু অধিকারী প্রশান্ত কিশোরের নাম না করেই তার প্রতি বিক্ষুব্ধ মনোভাব প্রকাশ করেছেন।

আর এবার পালা ব্যারাকপুরের তৃণমূল বিধায়ক শীলভদ্র দত্তের। আগেও শীলভদ্র দত্ত বাংলার রাজনীতিতে প্রশান্ত কিশোরের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। একইভাবে শীলভদ্র দত্তর সঙ্গে সুরে সুর মিলিয়ে কোচবিহারে তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামীও প্রশান্ত কিশোরের নাম না করেই দলের অন্দরে তাঁর প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মূলত প্রশান্ত কিশোরকে তৃণমূল শিবিরের বহু নেতা বিধায়কই বাইরে থেকে রাজনীতি করে আসা লোক বলে অভিহিত করেন। সেক্ষেত্রে প্রশান্ত কিশোরের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে বেশিরভাগ নেতারাই নারাজ। অন্যদিকে ব্যারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত কোনমতেই প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শ মেনে নিতে রাজি নন।

সে ক্ষেত্রে প্রশান্ত কিশোরের রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতাকেই সামনে আনছেন তিনি। মূলত প্রশান্ত কিশোরের সংস্থাকে তিনি বাজারি কোম্পানি বলেও আক্রমণ করেছেন সম্প্রতি। অন্যদিকে তৃণমূলের বর্ষীয়ান বিধায়ক মিহির গোস্বামী কিছুদিন আগেই কটাক্ষ করেছিলেন নিজের দলের প্রতি। তাঁর মতে, কোন রাজনৈতিক দল যদি কন্ট্রাক্ট সংস্থার পরামর্শে চলে, তাহলে সেই সংগঠনের ক্ষতির সম্ভাবনা 100%। মিহির গোস্বামীর এই বক্তব্য নিয়ে সেই মুহূর্তে ঝড় চলতে থাকে রাজনৈতিক মহলে। যদিও তৃণমূলের পক্ষ থেকে মিহির গোস্বামীর এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোন মতামত দেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে দলের প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করে ইতিমধ্যেই বিজয়া সম্মেলনী সভায় কোচবিহারে তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী পদত্যাগের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন। অন্যদিকে এই সম্পর্কে তৃণমূলের উত্তর 24 পরগনা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, মান-অভিমানের বিষয়টি সুব্রত বক্সীকে জানাতে হবে। অন্যদিকে, 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনে শীলভদ্র দত্ত যে এবার দাঁড়াচ্ছেন না সেকথা আগেই জানিয়েছেন। অন্যদিকে শীলভদ্র দত্ত কি এবার গেরুয়া শিবিরে যোগদান করতে চলেছেন, তা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে রাজনৈতিক মহলে।

অন্যদিকে গেরুয়া শিবির থেকে দাবি করা হয়েছে, বাংলার উন্নতি করতে গেলে প্রত্যেককে গেরুয়া শিবিরে আসতে হবে। সবমিলিয়ে তৃণমূল শিবিরের অন্দরে এই মুহূর্তে কিন্তু পরিস্থিতি খুব একটা স্বস্তিজনক নেই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, প্রশান্ত কিশোরের প্রতি ক্ষোভ যদি এভাবে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তৃণমূলের অন্দরে, তাহলে একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে কিন্তু তৃণমূল শিবিরে অলিখিত পাঁচিল উঠবে, আর তাতে ভাঙন অনিবার্য। এই অবস্থায় আপাতত পুরো পরিস্থিতি সামলাতে তৃণমূলের দলীয় সুপ্রিমো কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, সে দিকেই নজর সবার।