এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > ফের বাড়লো তৃণমূল শোভনের দূরত্ত্ব, কারণ ফের সেই বৈশাখী, জেনে নিন

ফের বাড়লো তৃণমূল শোভনের দূরত্ত্ব, কারণ ফের সেই বৈশাখী, জেনে নিন

 

শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দোপাধ্যায়কে নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে অনেকদিন থেকেই নানান রকমের ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। তাদের দুইজনের জুটিকে নিয়ে চর্চারও শেষ নেই। তবে  ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদানের পরে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে ভাইফোঁটা নিতে যান ।সম্প্রতি কিছুদিন আগে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকার করতে গিয়েছিলেন। সেই সময় রাজনৈতিক মহলের মধ্যে জোর জল্পনা চলেছিল যে, শোভন চট্টোপাধ্যায় পুনরায় শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ফিরতে পারে। পাশাপাশি রাজ্যের মন্ত্রী হিসেবে পুনরায় ঠাঁই পেতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায়।

কিন্তু হঠাৎ একটি ঘটনায় শোভনবাবুর তৃণমূলের ফেরত আসা অথবা আগামী দিনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ দুটোই প্রশ্নের মুখে পড়েছে বলে খবর। বস্তুত, শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করার আগেই মিল্লি আল-আমিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদ থেকে এবং নিজের চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন বৈশাখীদেবী।

তবে নিজের ইস্তফা দেওয়ার পিছনে কলেজের একাধিক সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছিলেন, পরিচালন সমিতি থেকে শুরু করে একাধিক সমস্যার কারণে তিনি ইস্তফা দিতে চান। কিন্তু সেই সময় রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় সেই ইস্তফাপত্র গ্রহণ করতে চাননি।

মূলত বৈশাখী দেবী যে বিষয়ে অভিযোগ করে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন, সেই ঘটনাগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তরফ থেকে। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতির কোনো রকম উন্নতি না দেখে এই মাসের 5 তারিখে পুনরায় ইস্তফাপত্র প্রেরণ করেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এর আগেই গঙ্গা দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়ে পুনরায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ভাইফোঁটা নিতে আসতে দেখা গিয়েছিল শোভন চট্টোপাধ্যায়কে।

শুধু তাই নয়, বৈশাখী দেবীও সম্প্রতি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কলেজের সম্পর্কে আলোচনা করে এসেছিলেন বলে খবর। আর সেই আলোচনা যথেষ্ট ইতিবাচক হয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন বৈশাখীদেবী। কিন্তু মাসের 5 তারিখে ইস্তফা জমা দেওয়ার 12 দিন পরে হঠাৎ করে জানতে পারা যায়, মিল্লি আল আমিন কলেজের দায়িত্ব সামলাবেন নতুন টিচার ইনচার্জ পারভিন কউর এবং বৈশাখীদেবীর ইস্তফা গ্রহণ করা হয়েছে।

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেওয়ার পরেও দলের অভ্যন্তরীণ কিছু নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে মতের মিল না হওয়ার কারণে বিজেপি রাজনীতিতে সেইভাবে হাত খুলে খেলতে দেখা যায়নি শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। বরঞ্চ বিজেপির সঙ্গে মনোমালিন্য এতটাই বেড়ে ওঠে যে, পরবর্তীতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে ভাইফোঁটা নিতে পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়।

তৃণমূল সূত্রের খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজেই শোভন চট্টোপাধ্যায়কে আর ঘরে না বসে থেকে মাঠে নেমে কাজ করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তারপরেও সেইভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি শোভনবাবুকে। এমনকি তিনি বিজেপিতে আছেন, না তৃণমূলে আছেন, তাও স্পষ্ট হয়নি জনমানসে। কিন্তু শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অসহযোগিতার শোধ তুলতে কি বৈশাখীদেবীর ইস্তফা গ্রহণ! এখন উঠতে শুরু করেছে এই প্রশ্নই।

এদিন নিজের ইস্তফাপত্র গৃহীত হওয়ার প্রসঙ্গে রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি বলেন, “রাজনীতি বা আমার শিক্ষকতা অসম্মান নিয়ে কোনটাই যে করা সম্ভব নয়, তা আমি একাধিকবার বলেছি। রাজনীতি থেকে আগেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম। কলেজের পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে সেখানেও যে আর থাকতে চাই না, তাও শিক্ষামন্ত্রীকে বারবার জানিয়েছিলাম। শিক্ষামন্ত্রী আমার ইস্তফা নিতে চাননি। বারবার ফিরিয়ে দিয়েছেন। বারবার আশ্বস্ত করেছেন, কলেজের সমস্যার সমাধান দ্রুত করা হবে। কিন্তু আজ আচমকা জানলাম, আমার ইস্তফা গৃহীত হয়েছে। সেটাও নতুন টিচার ইনচার্জের কাছ থেকে জানলাম।”

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

নিজের ইস্তফা গ্রহণ প্রসঙ্গে এদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে রীতিমত ভৎসনা করতে দেখা যায় বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি বলেন, “এত বার উনি আমাকে আটকালেন। বারবার বললেন কলেজের নতুন পরিচালন সমিতি বানিয়ে দেবেন। সব সমস্যা মিটিয়ে দেবেন। তারপরে হঠাৎ শুনলাম আমার চাকরি আর নেই। সেটা পার্থবাবুর কাছ থেকে শুনলাম না। তিনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তিনি যে আমার ইস্তফা গ্রহণ করেছেন, তা আমাকে জানানোর ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তাও তিনি অনুভব করলেন না।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে অসন্তোষের অভাব ছিল না। স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও একাধিকবার পরোক্ষে বৈশাখীদেবীকে কাঠগড়ায় তুলতে দেখা যায়। কিন্তু সম্প্রতি যখন বৈশাখীদেবী প্রায় সপ্তাহ খানেক আগেই শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। আর উভয়ের পক্ষেই ইতিবাচক আলোচনা হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল, তখন মনে হয়েছিল, হয়ত শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দোপাধ্যায়কে নিয়ে তৃণমূলের দৃষ্টিকোণ কিছুটা পাল্টেছে।

কিন্তু এদিনের এই ইস্তফা গ্রহণে শোভন-বৈশাখী রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনেকটাই জল্পনাময় হয়ে পড়ল। এদিন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফা গ্রহণের প্রসঙ্গে রীতিমত রুষ্ট ভাব প্রকাশ পায় শোভন চট্টোপাধ্যায়ের গলাতে। তিনি বলেন, “আমার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আমি নিজেই নিই। কারও কথায় চলি না। আমার কোনো সিদ্ধান্ত কারো পছন্দ হচ্ছে না বলে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে যদি তার ফল ভোগ করতে হয়, তাহলে খুব দুর্ভাগ্যজনক।” পাশাপাশি শিক্ষাদপ্তরের সিদ্ধান্ত নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন তুলতে দেখা যায় শোভন চট্টোপাধ্যায়কে।

এই বিষয়ে তার প্রশ্ন, “গত সপ্তাহেও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানানো হল যে ইস্তফা গ্রহণ করা হবে না। কলেজের সমস্যা সমাধান দ্রুত করা হবে। তাহলে এই কয়দিনে কি পরিস্থিতি তৈরি হল বা অবস্থা কি এমন পরিবর্তন হল, যে আচমকা এভাবে কিছু না জানিয়ে তার গৃহীত হয়ে গেল! বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন প্রতিহিংসার শিকার বানালেন! কলেজের চাকরিটা তো বৈশাখীকে তৃণমূল দেয়নি। ও তো তা নিজের অর্জনে পেয়েছে। রাজনীতির সঙ্গে কি সম্পর্ক ছিল! কেন দিনের পর দিন ওর কলেজের সমস্যাটাকে ঝুলিয়ে রাখা হল! কেন আচমকা এভাবে ইস্তফা গৃহীত হল, বুঝলাম না।”

আর শোভনবাবুর তরফ থেকে এভাবেই এদিন প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করতে দেখা যায় তৃণমূল নেতৃত্ব এবং সরকারকে। আর যার পরেই আগামী দিনে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পক্ষে তৃণমূলের ফিরে যাওয়া কতটা প্রাসঙ্গিক! তা নিয়েই উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। এদিকে এই ঘটনায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সাথে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য করতে চাননি শিক্ষামন্ত্রী। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, গোটা ঘটনা যেরকম আকস্মিক মোড় নিল, তাতে সত্যিই আগামী দিনে শোভন-বৈশাখীর পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে রীতিমত জল্পনা তৈরি হয়ে গেল।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!