এখন পড়ছেন
হোম > বিশেষ খবর > বিকেল ৪:৩০ টে নয়, তার অনেক আগেই পঞ্চায়েতের সমীকরণ সম্পূর্ণ বদলে যাবে?

বিকেল ৪:৩০ টে নয়, তার অনেক আগেই পঞ্চায়েতের সমীকরণ সম্পূর্ণ বদলে যাবে?

রাজ্য-রাজনীতিতে এখন ‘হট-টপিক’ হল পঞ্চায়েত নির্বাচন। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন উপলক্ষে ‘অনিয়মের’ অভিযোগে শাসক-বিরোধী-নির্বাচন কমিশন সবাই এখন কলকাতা হাইকোর্টের মুখাপেক্ষী। বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের এজলাসে আপাতত সব পক্ষের শুনানি শেষ, তিনি জানিয়েছেন আগামীকাল বিকেল ৪:৩০ টের সময় এই মামলার রায় দেবেন। আর তাই সমস্ত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তো বটেই আগামীকাল বিকেল ৪:৩০ টের দিকে তাকিয়ে আপামর জনসাধারণ। বিচারপতি তালুকদার কি রায় দেবেন, কোন পথে চালিত হবে বঙ্গ-রাজনীতি, এই রায়ের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হতে চলেছে – এই সব নিয়ে জল্পনা কল্পনার অন্ত নেই।

আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

কিন্তু সেই ‘মহা-রায়’ বেরোনোর আগেই কি আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের সমস্ত সমীকরণ ওলট-পালট হয়ে যাবে? প্রশ্নটা উঠছে, কারণ পঞ্চায়েত নিয়ে ‘গোকুলে’ বাড়তে থাকা আরেকটি মামলা। বিজেপি প্রভাবিত সরকারি কর্মচারী পরিষদের আহ্বায়ক দেবাশিস শীল কলকাতা হাইকোর্টে একটি রিট-পিটিশন দাখিল করেন। যার মূল প্রতিপাদ্য হল, বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচনে সাধারণ মানুষ ও ভোটকর্মীদের সুরক্ষার দায়িত্ত্ব থাকে কেন্দ্রিয়বাহিনীর হাতে। অথচ স্থানীয় নির্বাচনগুলিতে (পুরসভা ও পঞ্চায়েত) ভোট হয় রাজ্য পুলিশের হাত ধরে। কিন্তু বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনগুলির দিকে তাকালে দেখা যাবে ভোট করতে গিয়ে সাধারণ সরকারি কর্মচারীরা রাজনৈতিক হিংসার বলি হয়েছেন, রাজনৈতিক কর্মীরা উত্তেজনার বশে তাঁদের শারীরিক বা মানসিক বা উভয় প্রকারেরই হেনস্থা করেছেন। এই বছর শুধুমাত্র মনোনয়ন পর্বেই প্রাণ হারিয়েছেন তিন-তিনজন। এমনকি বিরোধী প্রার্থী মনে করে পূর্ব বর্ধমানে সরকারি কর্মী দেবাশীষ মুখার্জিকে (যিনি আদতে ফার্স্ট পোলিং অফিসার, ঘটনাস্থলে ছিলেন নির্বাচনের কাজেই) প্রহার করেছে রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। আর তাই নিজেদের চাকরির শর্ত অনুযায়ী ভোটকর্মী হিসাবে যাওয়া সাধারণ সরকারি কর্মচারীদের সুরক্ষার জন্য আদালত যেন আসন্ন নির্বাচন প্রক্রিয়া কেন্দ্রিয়বাহিনীর তত্ত্বাবধানে করার নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুন: বিকেল ৪:৩০ টে নয়, তার অনেক আগেই পঞ্চায়েতের সমীকরণ সম্পূর্ণ বদলে যাবে?

দেবাশিসবাবুর করা সেই রিট-পিটিশন ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্ট গ্রহণ করেছে এবং এর আগে একদিন প্রধান বিচারপতির এজলাসে এই মামলার শুনানিও হয়ে গেছে। আদালতে আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলায়, আইনের প্রথাগত ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও সাধারণ সরকারি কর্মীদের স্বার্থে নিজেই সওয়াল করেন দেবাশিসবাবু। তাঁর সওয়াল সেদিন প্রশংসিতও হয় আদালতে। তাঁর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আগামীকাল, সেখানে নির্বাচন কমিশন ও রাজ্যের মুখ্যসচিবকে উপস্থিত থাকার জন্যও নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এই প্রসঙ্গে দেবাশিসবাবু জানিয়েছেন, একদিক থেকে দেখতে গেলে এই মামলা ঐতিহাসিক, কেননা নির্বাচনে কেন্দ্রিয়বাহিনীর উপস্থিতি দাবি করে রাজনৈতিক দলগুলি। কিন্তু নিজেদের সুরক্ষার প্রশ্নে এই প্রথম একটি সরকারি কর্মচারী সংগঠন সেই দাবিতে এগিয়ে এল। পূর্ব-বর্ধমানে দেবাশীষবাবুর উপর আক্রমনের ঘটনার পর, যে দুদিন নির্বাচনী প্রশিক্ষণ হয়েছে, সেখানে সরকারি কর্মচারীদের তথা ভোটকর্মীদের কমিশনের কাছে একটাই প্রশ্ন ছিল, আমাদের নিরাপত্তার জন্য কি করছেন? কমিশন নির্বাক ছিল। শুধু তাই নয়, পরিস্থিতি এতটাই অগ্নিগর্ভ যে সরকারি কর্মীরা লাইন দিয়ে নির্বাচনী দায়িত্ত্ব থেকে অব্যাহতি চাইছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের আশা, সবদিক খতিয়ে দেখে মহামান্য আদালত আমাদের নিরাপত্তা দিতে ও আমাদের পরিবারকে স্বস্তি দিতে আমাদের দাবি মঞ্জুর করবেন।

আর কাল যদি প্রধান বিচারপতি সবদিক বিবেচনা করে দেবাশিসবাবুর দাবিকে মান্যতা দেন, তাহলে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের অনেক সমীকরণই বদলে যেতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কেননা, বিরোধীরা বারেবারেই শাসকদলের দিকে আঙ্গুল তুলে কেন্দ্রিয়বাহিনীর দাবি জানিয়ে এসেছে, অন্যদিকে রাজ্য সরকার বা প্রশাসনের তরফে কমিশনকে বারবার জানানো হয়েছে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক, তাই কেন্দ্রিয়বাহিনীর দরকার নেই। অর্থাৎ এই রাজনৈতিক টানাপোড়েনেই স্পষ্ট, কেন্দ্রিয়বাহিনী থাকা বা না থাকা হয়ত বা ‘ডিসাইডিং ফ্যাক্টর’ হতে পারে। আর তাই বিকেলে বিচারপতি তালুকদারের রায়দানের অনেক আগেই বদলে যেতে পারে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের সমীকরণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!