এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > জিতে এলাকার উন্নয়নে রঙ ভুলে সব দলের বন্ধুদের পরামর্শ নিয়ে তাক লাগাচ্ছেন বিজেপির জনপ্রতিনিধি

জিতে এলাকার উন্নয়নে রঙ ভুলে সব দলের বন্ধুদের পরামর্শ নিয়ে তাক লাগাচ্ছেন বিজেপির জনপ্রতিনিধি


 

রাজনীতির আঙিনায় এখন ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব বা সৌজন্যতা অত্যন্ত বিরল হয়ে পড়েছে। কিন্তু আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রামের রায়ডাক পঞ্চায়েত এলাকায় 18-19 নম্বর বুথে সেই বিরলতম সৌজন্যের কিছুটা দৃশ্য পরিলক্ষিত হল। যেখানে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে আলাদা আলাদা ভাবে লড়াই করেছিলেন বাল্যকালের তিন বন্ধু।

পৃথক পৃথক রাজনৈতিক দলের প্রতীকেই তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। অংক গণিতের হিসেবে যথারীতি তিনজনের প্রতিদ্বন্দিতায় একজন জিতেছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এই রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক যুগেও লক্ষ্য করা গেল ভোটের হার বা জিতের কোনো রকম প্রভাব পড়েনি তিনজন বাল্যবন্ধুর বন্ধুত্বে।

আবার এই তিনজনের মধ্যে আরও একটি টুইস্ট রয়েছে। ভারতবর্ষজুড়ে যখন ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি চলছে, নিজের নিজের মতো করে ধর্মের নামে ভোট ব্যাংক গড়ছে সবাই, ঠিক সেই সময় লক্ষ করা গেল কুমারগ্রামের এই তিন বন্ধুকে। যারা প্রত্যেকে আলাদা আলাদা ধর্ম অবলম্বী। তিন বন্ধু জাহের মিয়া, প্রশান্ত ধানোয়ার এবং শুভজিৎ বিশ্বাস। তিনজনেরই বাড়ি কুমারগ্রামের কার্তিকা চা বাগানে।

2018 সালের গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে 18/19 নম্বর বুথে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের চিহ্ন লড়াই করে তারা। যেখানে তাদের জাহের মিঁয়া কংগ্রেসের প্রতীক চিহ্নে লড়াই করেন। প্রশান্ত ধানোয়ার বিজেপির প্রতীক চিহ্নে লড়াই করেন এবং শুভজিৎ বিশ্বাস তৃণমূলের প্রতীক চিহ্নে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। ভোটের ফল প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায় জয়যুক্ত হয়েছে পদ্মফুল চিহ্নের প্রার্থী প্রশান্ত ধানওয়ার। কিন্তু জয়যুক্ত হওয়ার পরেও বাকি দুই বন্ধুর সঙ্গ ছাড়েননি বিজয়ী প্রার্থী।

নিজের মুখে তিনি বলেন, “মাঝে মাঝে খুব গর্ব হয়। আমাদের বন্ধুত্ব রাজনীতির বেড়া ভেঙ্গে দেওয়ায়। এদিন ওই পঞ্চায়েত সদস্য প্রশান্তবাবু আরও বলেন, “আমি ভোটে জিতলেও আমাদের বন্ধুত্ব সর্বদাই অটুট থাকবে। এলাকার উন্নয়নমূলক কাজে সবার আগে পরামর্শ নেই জাহের এবং শুভজিতের কাছে।”

আবার পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী শুভজিৎ বিশ্বাস বলেন, “এলাকায় যেকোনো উন্নয়নের কাজে আমি ও জাহের সব সময় প্রশান্তকে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করি। আগামী দিনেও করে যাব। বন্ধুত্ব অটুট থাকবে।” পাশাপাশি তিনি এও বলেন,
“ভোটে আমরা কেউ জিতি বা কেউ হারি। ভোটের হার জিত আমাদের তিনজনের বন্ধুত্বে ফাটল ধরাতে পারবে না। আমরা বন্ধুত্ব রক্ষা করে যাব।”

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

বস্তুত, এই তিনজনের বন্ধুত্বের কাহিনী এলাকার মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে। একসঙ্গে তিনজনেই বসে চায়ের দোকানে আড্ডা দেন। কোথাও কেউ বিপদে পড়লে এক সঙ্গেই তিনজন ঝাঁপিয়ে পড়েন। রাজনৈতিক ভিন্নতা এবং ধর্মের ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও এইরকম বন্ধুত্ব রীতিমতো অবাক করেছে সকলকে। বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এটা একটা বড় নজির বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও পরিবারের অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারণে তিনজনের কেউই খুব একটা বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেননি। সাময়িকভাবে পড়াশুনা করে প্রশান্ত ধানোয়ার চা বাগানের শ্রমিকের কাজে যোগ দেন। শুভজিৎ বিশ্বাস ওই বাগানের ক্যাজুয়াল কর্মী হিসেবে কাজ করেন।

আবার জাহের মিয়া কার্তিক বাজারে দোকান করে সংসার চালায়। বিবাহ করে জাহের মিয়া এবং প্রশান্ত ধানোয়ার দুজনেই সংসারী হলেও শুভজিৎ বিশ্বাস অবশ্য এখনও অকৃতদার। এলাকার মধ্যে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল দীর্ঘদিন ধরে বন্ধুত্বে কোনরকম ফাটল না ধরলেও, পঞ্চায়েতে পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করলে তাদের তিনজনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক আর টিকবে না।

কিন্তু দেখা যায়, সমস্ত জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এই তিন বন্ধু পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখে। ভোটে জিতে যেমন প্রশান্ত ধানোয়ারের মধ্যে কোনরকম অহংকার জন্ম নেয়নি, তেমনই ভোটে পরাজিত হয়ে শুভজিৎ বিশ্বাস এবং দেহের মিয়ার মধ্যেও কোনোরকম গ্লানি জন্ম নেয়নি।

বরঞ্চ উন্নয়নের কাজের ব্যাপারে প্রশান্ত, শুভজিৎ এবং জাহেরের পরামর্শ নিয়েই বিভিন্ন রকমের কাজ ত্বরান্বিত করে থাকে। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছেন, আজকের রাজনীতির হানাহানি, বৈষম্য, ধর্মীয় সম্প্রীতি তলানীতে থাকা দিনগুলোর মধ্যে সত্যিই অন্যতম নজির হয়ে দাঁড়িয়েছেন জাহের, প্রশান্ত শুভজিৎ এই তিন বন্ধু।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!