এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > তৃণমূলের অন্দরের বিদ্রোহের ‘আগুন’ নেভানোর দায়িত্ব এবার পড়ছে ফিরহাদের উপরে – জানুন বিস্তারে

তৃণমূলের অন্দরের বিদ্রোহের ‘আগুন’ নেভানোর দায়িত্ব এবার পড়ছে ফিরহাদের উপরে – জানুন বিস্তারে

বেশ কিছুদিন ধরেই মালদহ জেলা তৃনমূলের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে। সেখানকার দুই পুরসভায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দলীয় কাউন্সিলরদের অনাস্থাকে কেন্দ্র করে টালমাটাল হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। গত দুদিন আগেই মালদহ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব দফায় দফায় এই ব্যাপারে ইংলিশবাজার এবং পুরাতন মালদহ পুরসভার দলীয় কাউন্সিলারদের নিয়ে বৈঠক করেছে। এমনকি বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলারদের মতামত সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট রাজ্য নেতৃত্বের কাছে জমাও পড়েছে বলে জানা গেছে।

কিন্তু কোনোভাবেই অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় অবশেষে আজ সোমবার তড়িঘড়ি মালদহের দুই পুরসভার চেয়ারম্যান সহ সমস্ত কাউন্সিলারকে কলকাতায় একটি বৈঠকে ডাকা হয়েছে। সূত্রের খবর, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসবেন। আর সেদিক থেকে ইংলিশবাজার এবং পুরাতন মালদা পৌরসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দলের কাউন্সিলরদের অনাস্থা পরিপ্রেক্ষিতে যে জটিলতা মালদহে শুরু হয়েছিল, তা কাটাতে পুরমন্ত্রীর বক্তব্যে আদৌ কোনো সমস্যার সমাধান হয় কিনা এখন সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে সকলে।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, শহরাঞ্চলে শাসকদলের রাজনীতি আগামী দিনে কোন খাতে বইবে, তা কলকাতার এই বৈঠকেই কার্যত ঠিক হবে। পাশাপাশি দুই শহরের সংগঠনের দায়িত্ব এরপর থেকে কার হাতে থাকবে তাও এই বৈঠকের মধ্যে দিয়ে পরিস্কার হয়ে যেতে পারে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। এদিন এই প্রসঙ্গে ইংলিশবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন ঘোষ বলেন, “অনাস্থার বিষয়টি দল গুরুত্ব সহকারে দেখছে। আমি বিষয়টিকে আমল দিতে নারাজ। দল এব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে ভবিষ্যতে কাজ করব।”

এদিকে এই ব্যাপারে এই পুরসভারই ভাইস চেয়ারম্যান দুলাল সরকার (বাবলা) বলেন, “চেয়ারম্যানের কাজকর্মের বিরোধিতা করে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কাউন্সিলাররা অনাস্থা আনেন। সেই অনাস্থাপত্রে আমিও সই করি। চেয়ারম্যানের বিরোধিতা করলেও আমরা কেউই দল বিরোধী নই।” অন্যদিকে পুরাতন মালদহ পুরসভার চেয়ারম্যান কার্তিক ঘোষ বলেন, “সোমবারের বৈঠকে আমি ডাক পেয়েছি। জেলা নেতৃত্বের মাধ্যমে রাজ্য নেতাদের কাছে অনাস্থার যাবতীয় খবর পৌঁছেছে। রাজ্য কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছি।”

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে মালদহে তৃণমূল পরিচালিত দুই পৌরসভায় অনাস্থাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পুরাতন মালদহ এবং ইংলিশবাজার পুরসভার সিংহভাগ তৃণমূল কাউন্সিলারই সেখানকার দুই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলে সেই অনাস্থাপত্রে দুই পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানরা সই করায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়ে তৃণমূল। আর তৃণমূলের কাউন্সিলররা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনায় বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে তীব্র তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়।

এদিকে, পুরসভা নির্বাচনের আগে শহর তৃণমূলের অন্দরে এই ধরনের অন্তর্কলহের খবর দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পৌঁছলে ড্যামেজ কন্ট্রোলের লক্ষ্যে দলের জেলা পর্যবেক্ষক গোলাম রব্বানি এবং জেলা সভানেত্রী মৌসম নুর বিদ্রোহী কাউন্সিলারদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে সবার অভাব-অভিযোগ লিখিত ভাবে তাঁরা জমা নিলে, ওই রিপোর্ট দ্রুততার সঙ্গে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু দলের অন্দরেই চর্চা শুরু হয়েছে যে ওই বৈঠকেও বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলারদের ক্ষোভের আগুনে জল ঢালতে পারেননি কেউ।

আর তাই শেষ পর্যন্ত এই রাজ্য নেতৃত্বকে ময়দানে নামতে হল বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের। এদিন এই প্রসঙ্গে দুই পুরসভার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলার বলেন, “অনাস্থার পিছনে অনেক অঙ্ক কাজ করছে। দুই জায়গায় দুই প্রভাবশালী নেতা চেয়ারম্যান পদে বসার জন্য আমাদের ঘুঁটি হিসাবে ব্যবহার করছেন। বর্তমান চেয়ারম্যানদের সরানো তাঁদের লক্ষ্য। আসন্ন পুর নির্বাচনে দলের কাছে প্রাধান্য পাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তাঁরা ময়দানে নেমেছেন। ভবিষ্যতের পুর বোর্ডেও তাঁরা ক্ষমতার লাগাম নিজেদের হাতে রাখতে চাইছেন।”

তাঁদের আরও বক্তব্য, “আমরাও নিজেদের স্বার্থে তাঁদের সমর্থন করছি। কারণ এখন তাঁদের সমর্থন করলে ভবিষ্যতে আমরা ভালো জায়গায় থাকব। বর্তমান বোর্ডের আমলে আমরা সেভাবে গুরুত্ব পাচ্ছিলাম না।” একাংশের মতে, সুযোগ বুঝে গদি উল্টে দেওয়ার ছক কষা শুরু হয়েছে মালদহ জেলার এই দুই পৌরসভায়। কিন্তু এই কাজ করে তৃনমূল কাউন্সিলররা দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন না? এদিন এই প্রশ্নের উত্তরে ইংলিশবাজারের ওই কাউন্সিলার বলেন, “তৃণমূলের সঙ্গে আমাদের কোনও বৈরিতা নেই। তবে দলের নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে আমাদের ক্ষোভ রয়েছে।”

তাঁর আরও বক্তব্য, “কথায় আছে, ‘রাজার পাপে রাজ্য নষ্ট হয়’। সেই প্রবাদবাক্য এক্ষেত্রে মিলে গিয়েছে। ব্যক্তি মানুষের আচার-ব্যবহারের কারণে তৃণমূলকে আজ ফল ভোগ করতে হচ্ছে। এই সন্ধিক্ষণে নেতারা সঠিক পদক্ষেপ নিতে না পারলে দলকে আগামী দিনে আরও বড় খেসারত দিতে হবে।” ফলে পুরমন্ত্রীর সাথে দুই পৌরসভার সমস্ত কাউন্সিলরদের বৈঠকের আগে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মালদহ জেলার ইংলিশবাজার এবং পুরাতন মালদহ পৌরসভার কাউন্সিলরদের বিবৃতি অনেকেরই চোখ কপালে তুলে দিচ্ছে।

বিশেষ করে লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যজুড়েই বিজেপির প্রভাব তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছে। আর তারপরে গেরুয়া শিবির খোলাখুলিই জানিয়ে দিয়েছে রাজ্যে ক্ষমতা দখল তাদের একমাত্র পাখির চোখ। আর তারপরেই শাসকদলের বহু নেতা-কর্মী দল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। এই পরিস্থিতিতে, শেষ পর্যন্ত এই দুই পৌরসভার কাউন্সিলর এবং চেয়ারম্যানদের নিয়ে বৈঠক করে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ঠিক কতটা সমস্যার সমাধান করতে পারেন, এখন সেদিকেই নজর সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!