এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > নদীয়া-২৪ পরগনা > হাইকোর্টের নির্দেশে এবার অস্বস্তিতে রাজ্যের শাসকদল তথা তৃণমূল শিবির

হাইকোর্টের নির্দেশে এবার অস্বস্তিতে রাজ্যের শাসকদল তথা তৃণমূল শিবির


রাজ্যের যুযুধান দুই রাজনৈতিক শিবির হল তৃণমূল এবং বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনের পর এই দুই রাজনৈতিক দল ক্রমাগত রাজনৈতিক যুদ্ধে জড়াতে থাকে এবং তার সাথে পাল্লা দিয়ে পারে দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘর্ষ। লোকসভা ভোটের আগেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন অর্জুন সিং। যথারীতি ভাটপাড়াও অর্জুন সিং এর সাথে সবুজ রং ছেড়ে কমলা রঙে প্রবেশ করে। শুধু ভাটপাড়ায় নয়, নৈহাটি, গারুলিয়া ইত্যাদি পুরসভাগুলিও একে একে বিজেপির ছত্রছায়ায় যেতে থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে তৃণমূল আবার প্রতিটি পুরসভাকে উদ্ধার করতে সমর্থ হয় এবং ভাটপাড়া পুরসভার দখল পেতে তৃণমূলের পক্ষ থেকে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়।

কিন্তু এবার তৃণমূল কংগ্রেস ভাটপাড়া নিয়ে কিছুটা ধাক্কা খেলো কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে। যেখানে ভাটপাড়া পুরসভায় সকালে বিজেপির প্রতিকূল পরিবেশ ছিল, সেখানেই সন্ধ্যাবেলা সম্পূর্ণ প্রতিকূল পরিবেশ হয়ে গেল তৃণমূলের জন্য ও বিজেপির অনুকূল। আর এই নিয়েই বৃহস্পতিবার রাজনীতির অন্দরমহল সরগরম হয়ে রইলো। পুরসভায় তৃণমূলের আনা অনাস্থা প্রস্তাব কলকাতা হাইকোর্টে খারিজ করে দেয়। আদালতের এই নির্দেশকে ‘সত্যের জয়’ বলে বর্ণনা করেছেন বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। অন্যদিকে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শুক্রবার ডিভিশন বেঞ্চে যাবার কথা জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।

উল্লেখ্য, নতুন বছরের শুরুতেই ভাটপাড়ার দখল নিতে রীতিমতো চাপানউতোর শুরু হয় দুই রাজনৈতিক দল তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। তৃণমূল ভাটপাড়া পুরসভাটি পুনর্দখল করে সম্প্রতি। আর তারপরেই আস্থাভোটে 19 – 0 ব্যবধানে জিতে ভাটপাড়া পুরসভাকে আবার সবুজ রঙে রাঙিয়ে তোলে তৃণমূল। কিন্তু তাদের খুশি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। প্রসঙ্গত, বেআইনিভাবে আস্থা ভোট করানোর অভিযোগে ভোটাভুটিতে বিজেপি অংশ নেয়নি এবং তৃণমূলের আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে চ্যালেঞ্জ করে পদ্ম শিবির হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। বিজেপির আনা অভিযোগের পর্যালোচনা করে হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় এই অনাস্থা প্রস্তাব খারিজের।

হাইকোর্টের নির্দেশ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং এদিন বলেন, ”সত্যের জয় হল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতাকে মানুষের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করছেন। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মানেন না, দেশের আইন মানেন না। পুলিশকে দিয়ে জোর করে ভাটপাড়া পুরসভা দখল করার যে চক্রান্ত, আজ মহামান্য আদালত তাতে ধাক্কা দিল। আদালত স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, আইন না মেনে গোটা প্রক্রিয়া হয়েছে”।

প্রসঙ্গত, গত লোকসভা ভোটের আগেই বিজেপিতে যোগ দেন অর্জুন সিং, আর তারপরেই ভাটপাড়া পুরসভার পুরপ্রধান পদ থেকে তাঁকে সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করে তৃণমূল। গত বছরের 8 এপ্রিল পুরসভার আস্থাভোট থেকে ফলাফলের ভিত্তিতে অর্জুন সিংকে অপসারণ করা হয়। সেদিন 22-11 ভোটে হেরে যান অর্জুন সিং। কিন্তু গত বছর লোকসভা ভোটের পর জুন মাসে ভাটপাড়া পৌরসভা আবার গেরুয়া শিবিরের দখলে যায়। ভাটপাড়া চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয় অর্জুন সিং এর ভাইপো সৌরভ সিংকে।

অন্যদিকে, লোকসভা নির্বাচনের পরেই এ রাজ্যে বিজেপি রাজনৈতিক মঞ্চের একেবারে সামনের সারিতে চলে আসে। সেই সূত্র ধরেই মুকুল রায়ের হাত ধরে একের পর এক পুরসভা, পঞ্চায়েতের দখল নেয় বিজেপি। স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূল দল লোকসভা ভোটের পর বেশ কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ঠিক এই অবস্থায় তৃণমূল আবার দখলীকৃত পুরসভা পঞ্চায়েত গুলির পুনর্দখল করতে রাজনৈতিক মঞ্চে নামে। আর সেই চেষ্টারই একটি ফল ভাটপাড়া পুরসভা পুনর্দখল করা। সমস্ত ব্যাপারটাই যখন তৃণমূলের পক্ষে যাচ্ছে, ঠিক সেইসময় হাইকোর্টের নতুন সিদ্ধান্ত তৃণমূলকে যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের থেকে শুরু করে কাঁচরাপাড়া পর্যন্ত একের পর এক পুরসভা বেদখল হয়ে যাওয়াতে এমনিতেই বিজেপি শিবির যথেষ্ট চিন্তিত ছিল। রাজনৈতিক কাটাছেঁড়া চলছিলই এই নিয়ে। আর তারপরেই ভাটপাড়া পুরসভা পুনর্দখলের ঘোষণা করে তৃণমূল। এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, গেরুয়া শিবির ভাটপাড়া পুরসভাকে বাঁচাতে সরাসরি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। এবং হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের ফলে এবার তৃণমূল দল  বেশ কয়েক কদম পিছিয়ে গেল বলে মনে করা হচ্ছে। আপাতত পরিস্থিতির ওপর নজর রাখবে রাজ্যের ওয়াকিবহাল মহল।

 

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!