প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – গত শুক্রবার বিজেপির আইটি সেল এর প্রধান অমিত মালব্য হাতরাসের নির্যাতিতার বিষয়ে ৪৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়া টুইটারে টুইট করেছিলেন। এই টুইটে তিনি লিখেছিলেন, ” হাথরাসের নির্যাতিতা এএমইউ-এর সামনে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন তাঁর ঘাড়ের উপর উঠে শ্বাস রোধ করার চেষ্টা হয়েছিল। এতে অপরাধের গুরুত্ব কমেনি কিন্তু তাতে রং চড়ানোর চেষ্টা চলছে। একজনের বিরুদ্ধে অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা প্রয়োজন… “। প্রসঙ্গত, তাঁর টুইট করা এই ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল যে, গণধর্ষিতা তরুণী মাটিতে শুয়ে আছেন। তাঁর মুখ এই ভিডিওতে স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে। গতকাল শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত তাঁর এই ভিডিওটি তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে দেখা গিয়েছিল। তবে, এ বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি তার কোনো উত্তর দেননি।

আবার, গত শুক্রবারই গণধর্ষণ বিষয়ে আরো একটি টুইট করেছিলেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য। এই টুইটে তিনি লিখেছিলেন, ” যখন নির্যাতিতা এবং তার মা প্রাথমিক বয়ানে বিষয়টিকে একবারও ধর্ষণ বলেলনি, এমনকী একটি রিপোর্টেও তার উল্লেখ নেই। তখন হাথররাসের ঘটনাকে কেন অনেকে যৌন নিগ্রহের রং দিতে চাইছেন? শারীরিক নিগ্রহেই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে, গুরুত্বের বিচারে এটা কি কম কিছু?”

গত শুক্রবার অমিত মালব্য বিজেপির মহিলা মোর্চার সোশ্যাল মিডিয়ার প্রধান প্রীতি গান্ধীকে তাঁর এই টুইটটি শেয়ার করেছিলেন। যেখানে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন যে, নির্যাতিতার কোন ভিডিও পোস্ট করলে কোন আইনের লংঘন করা হয় কিনা? এ প্রসঙ্গে তিনি দাবি করেছিলেন যে, কোন রিপোর্টেই বলা হয়নি যে, তাঁর ওপর যৌন নির্যাতন করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, এই সমস্ত কিছু লুটিয়ান সংবাদ-মাধ্যমের কাজ। এ বিষয়ে তাঁর প্রশ্ন, ” আমরা কী আইনের শাসন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, নাকি কতিপয়ের ভাবনা দ্বারা চালিত?!! ”

বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যের টুইট করা ৪৮ সেকেন্ডের এই ভিডিও নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক ওঠে। একজন গণধর্ষিতার পরিচয়কে কিভাবে প্রকাশ্যে আনা হল? তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। এ প্রসঙ্গে জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা দ্য সানডে এক্সপ্রেসকে জানালেন, ” যদি কেই ধর্ষণের শিকার হন, তবে তাঁর ভিডিও টুইট করা দুর্ভাগ্যজনক এবং সম্পূর্ণ বেআইনি।’ উল্লেখ্য, ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুসারে, কেউ যৌন নিগ্রহের শিকার হলে বা সন্দেহভাজন হলে তাঁর পরিচয় প্রাকাশ্যে আনার বিষয়টি অপরাধ বলে বিবেচিত হয়। এ জন্য অপরাধীর দু’বছর পর্যন্ত শাস্তি হতে পারে।”

জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যান এ প্রসঙ্গে আরও জানালেন যে, ” আদালত একাধিকবার জানিয়েছে যে কেউ ধর্ষণের শিকার হলে তাঁর পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না। আমরাও এ বিযটিতে অত্যন্ত সজাগ। পুলিশ দাবি করেছে নির্য়াতিতা ধর্ষিতা নন। তবে এ নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। আমি এ বিষয়টি নিয়ে নিজে অমিত মালব্য ও উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সঙ্গে কথা বলব। যদি জানা যায় যে নির্যাতিতাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল তবে জাতীয় মহিলা কমিশন বিষয়টি নিয়ে এগোবে ও যুক্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করবে।”

তবে এ প্রসঙ্গে উত্তরপ্রদেশ মহিলা কমিশনের চেযারপার্সন ভিমলা বাথম দ্য সানডে এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন যে, অমিত মালব্যের পোস্ট করা এই ভিডিওটি তিনি দেখেননি। এ প্রসঙ্গে তাঁর মতামত, যদি এই ভিডিওতে নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ করা হয়ে থাকে তবে তবে তা ‘অবশ্যই আপত্তিজনক’। এই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবে মহিলা কমিশন। প্রয়োজনে নোটিশ পাঠানো হবে অমিত মালব্যকে।

অন্যদিকে অমিত মালব্যের টুইট করা এই ভিডিও সম্পর্কে উত্তরপ্রদেশের ডিজিপি হৃতেশ চন্দ্র আওস্থি জানিয়েছেন যে, এই ভিডিওটি তিনি দেখেননি, তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে তিনি নারাজ। এ প্রসঙ্গে উত্তরপ্রদেশের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব অশ্বীনি কুমারও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। প্রসঙ্গত, অমিত মালব্যের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ইতিপূর্বে হাতরাস থানায় জমা পড়েনি।

আবার, উত্তর প্রদেশ পুলিশের ফরেনসিক রিপোর্টে নির্যাতিতাকে ধর্ষণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর জ্ঞান ফেরার পরে গত ২২ সে সেপ্টেম্বর ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তাঁর বয়ান রেকর্ড কালে, গত ১৪ ই সেপ্টেম্বর তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে তিনি জানিয়েছিলেন।