প্রায় অনেক দিনই হল তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তিনি। আর পদ্ম শিবিরে নাম লেখানোর পর থেকেই তৃণমূলের রাজনৈতিকভাবে বিনাশ ঘটানোই তার একমাত্র লক্ষ্য বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন বঙ্গ বিজেপির চাণক্য মুকুল রায়। সেইমতো তৃণমূলের অনেক হেভিওয়েট নেতা, সাংসদদের লোকসভা নির্বাচনের আগেই বিজেপিতে যোগদান করাতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি।

টার্গেট ছিল, লোকসভায় বাংলায় দলকে অভূতপূর্ব ফলাফলের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আর নিজের সেই লক্ষ্যকে পূরণ করে গত 2014 সালে 2 টি আসন পাওয়া বিজেপিকে 18 টি আসনে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন মুকুল রায়। আর এরপরই তার হাত ধরে তৃণমূলের অনেক জনপ্রতিনিধি, সে পঞ্চায়েত সমিতি হোক বা জেলা পরিষদ, গ্রামসভা হোক কিংবা বিধায়ক, প্রায় প্রত্যেকেই প্রতিনিয়ত দিল্লিতে গিয়ে নিজেদের গলায় গেরুয়া শিবিরের উত্তরীয় করে নিয়েছেন। যার জেরে তৃণমূলের প্রবল অস্বস্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে মুকুল রায় দিল্লিতে গিয়ে তৃণমূলের অনেক জনপ্রতিনিধিদের গেরুয়া শিবিরে যোগদান করালে দলে অনেক বেনোজাল ঢুকে যাচ্ছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ উঠতে শুরু করেছিল। যার ফলে দলবদলের ক্ষেত্রে কিছুটা নিয়ম পরিবর্তন করেছিল গেরুয়া শিবির। নির্দিষ্ট জেলা এবং রাজ্যকে না জানিয়ে দিল্লিতে গিয়ে কোনরূপ দলবদল প্রক্রিয়া করানো যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল বিজেপি নেতৃত্ব।

আর এতেই কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে পড়েছিলেন মুকুল রায়। যদিও রাজ্য বিজেপির এই দাবিকে খন্দন করে পরে আবার দিল্লি থেকে বিজেপিতে যোগদান করেছেন টলিউডের শিল্পীরা।

আর কিন্তু এবার এই সব কিছু থেকে বেরিয়ে তৃণমূলকে ২০২১ সে ক্ষমতা চ্যুত করতে ভারত দর্শনে বেরোলেন বঙ্গ বিজেপির এই নেতা! সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই অমরনাথে ভগবান শিবের দর্শন পেতে রওনা দিয়েছেন মুকুল রায়। বৃহস্পতিবার সকালে সেখানে পুজো দেবেন তিনি। কিন্তু কেন হঠাৎ তার এই অমরনাথ যাত্রা!

এদিন এই প্রসঙ্গে মুকুল রায় বলেন, “লোকসভা ভোটে দল ভালো ফল করেছে। সেই কারণে ধন্যবাদ জানাতে যাচ্ছি। পাশাপাশি আগামী 2021 সালে বিধানসভা নির্বাচনে সাফল্যের জন্য ভগবানের কাছে আশিসও চাইব।” রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মুকুল রায়ের কাছে বর্তমানে বড় চ্যালেঞ্জ আগামী 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচন। লোকসভায় দলকে সাফল্যের মুখ দেখাতে পারলেও দলবদল নিয়ে এবং দলে বেনোজল ঢোকানো নিয়ে তার ওপর কিছুটা হলেও চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

আর এই পরিস্থিতিতে ভগবানের আশিস পেতেই তার এই অমরনাথ যাত্রা বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞদের একাংশ।প্রসঙ্গত, সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফার আগের দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেদারনাথে মহাদেবের পুজো দিতে গিয়ে সেখানে ধ্যানে বসে ছিলেন। সোমনাথের মন্দিরে পুজো দিতে দেখা গিয়েছিল বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও।

অনেকেই বলেন, বিজেপি আসলে ধর্ম নিয়ে একটু বেশি সচেতন। আর তাইতো তাদের নেতারা সুযোগ পেলেই ধর্মকর্ম করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর এবার বাংলায় তৃণমূলকে উৎখাত করার জন্য প্রাক্তন তৃণমূল নেতা তথা বর্তমান বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের অমরনাথ যাত্রা সেই ইঙ্গিতকেই স্পষ্ট করল বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তবে দেবাদিদেব মহাদেবের কাছে প্রার্থনা করে বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের কপাল খোলে কি না, এখন সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।