প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-  তিনি যে বিজেপির শক্তির কাছে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেন এবং নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে অমিত শাহরা বহু চেষ্টা করেও যে তাকে দমন করতে পারবেন না, তা 2021 সালে বাংলা দখল করার মধ্যে দিয়ে প্রমান করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্যাপক বিজেপির হাওয়া থাকা সত্ত্বেও, নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের প্রচার থাকা সত্বেও, কেন্দ্রের শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টি পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা দখল করতে পারেনি। আর তৃতীয় বার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর এই আরও বেশি তেজদীপ্ত হতে দেখা যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। একুশে জুলাইয়ের ভার্চুয়ালি শহীদ সমাবেশের মধ্য দিয়ে তৃণমূল নেত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, এবার তার টার্গেট দিল্লি দখল।

ইতিমধ্যেই বাংলা দখল করার পর বাংলার উন্নয়নের মডেলকে হাতিয়ার করে আগামী দিনে তৃণমূল কংগ্রেস যে ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজ্যগুলোতে বিস্তার লাভ করার চেষ্টা করবে, তা ইতিমধ্যেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। শহীদ সমাবেশের ভার্চুয়াল মঞ্চ থেকে সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয়বার তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের ক্ষমতা দখল করার পর দেশের সিংহভাগ বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই প্রধান বিরোধী নেত্রী বলে আখ্যায়িত করতে শুরু করেছেন। সেদিক থেকে যদি বিরোধী জোট গঠন হয়, তাহলে কি সম্মুখ সমরে লড়াই করতে দেখা যাবে বিজেপির নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ইতিমধ্যেই এই বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন ক্রমশ মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে।

বস্তুত, নরেন্দ্র মোদীর নিজের লোকসভা কেন্দ্রের নাম বারানসি। বিজেপিকে টেক্কা দেওয়ার পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিটি সভা থেকেই তার প্রধান আক্রমণের মুখে পড়তে দেখা যায় এই নরেন্দ্র মোদীকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজেপি বিরোধী মহাজোট গঠনের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাই সেদিক থেকে তার মতো লড়াকু নেত্রীকেই নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে 2024 এর লোকসভা নির্বাচনে লড়তে হতে পারে বলে ইতিমধ্যেই গুঞ্জন তৈরি হয়েছে।

তৃণমূলের একাংশ বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 2021 এর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীকে দেখিয়ে দিয়েছেন, তার কাছে কোনো শক্তি মাথাচাড়া দিতে পারবে না। ইডি থেকে শুরু করে সিবিআই, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এমনকি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের একঝাঁক মন্ত্রীরা বাংলার ক্ষমতা দখলের জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন। কিন্তু এত সমবেত শক্তির কাছে মাথাচাড়া দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের ক্যারিশমা অটুট রেখেছেন। তাই আগামী দিনে বিরোধী মহাজোট যদি তৈরি হয় এবং 2024 এর লোকসভা নির্বাচনে যদি দিল্লি দখলের জন্য তৎপর হয় সমস্ত বিজেপি বিরোধী দলগুলো, সেদিক থেকে প্রধান নেতৃত্বদানের ভূমিকায় উঠে আসতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তবে নিজের নেতৃত্ব সুনিশ্চিত করতে হলে বিরোধী মহাজোটের পক্ষ থেকে তার কাছে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লড়াই করার ব্যাপারে অন্যান্য দলগুলোর পক্ষ থেকে আবেদন করা হতে পারে। আর যদি তা হয়, তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি করবেন? বাংলা ছেড়ে তিনি কি তাহলে সর্বভারতীয় রাজনীতির দিকে মনোযোগী হয়ে উঠবেন? সরাসরি লড়বেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে? ইতিমধ্যেই এই বিষয় নিয়ে গুঞ্জন ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে। অনেকে বলছেন, এর পেছনে একগুচ্ছ বিষয় রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছেন, তিনি বাংলা থেকে লড়াই করতে চান। এক্ষেত্রে বাংলা গোটা ভারতবর্ষকে পথ দেখাবে বলেও নিজের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরেছেন তৃণমূল নেত্রী।

এমনকি একুশে জুলাইয়ের শহীদ দিবসের মঞ্চ থেকে বিরোধী মহাজোট গঠনের কথা বললেও, সকলের নেতৃত্ব তিনি মেনে নেবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ তিনি যে নেতৃত্বদানের জায়গায় থাকতে চান না এবং তার প্রধান লক্ষ্য যে, বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করা, সেই কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তবে বিরোধী জোট গঠন হলে যেভাবে বিজেপির সঙ্গে লড়াই করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা দখল করেছেন, তাতে তার উপরেই সিংহভাগ বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ভরসা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে প্রবল শক্তিশালী ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধান মুখ নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বাংলার মেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লড়াই করার জন্য এগিয়ে দিতে পারে অন্যান্য বিজেপি বিরোধী দলগুলো।

সেদিক থেকে যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লড়াই করেন, তাহলে তাকে অত্যন্ত রিস্ক নিয়েই এগোতে হবে। বিজেপির পক্ষ থেকে কটাক্ষ করে বলা হচ্ছে, বাংলায় তৃণমূলের এত শক্তি, তাও শুভেন্দু অধিকারীর কাছে হেরে যেতে হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাই ভুলেও তিনি যেন বারাণসীতে হাত দিতে না যান। তাহলে একেবারে লাস্ট বেঞ্চের ছাত্রী হিসেবে আবার বাংলায় ফিরে আসতে হবে তাকে। তবে কি হবে, বিরোধী মহাজোট তৈরি হলেও, সেখানে কি ভূমিকা পালন করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? সম্মুখ সমরে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে লড়াইয়ে তিনি অবতীর্ণ হবেন কিনা, সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।