এখন পড়ছেন
হোম > রাজনীতি > তৃণমূল > নন্দীগ্রাম নিয়ে সম্মুখ সমরে মমতা-শুভেন্দু, আজই শুনানি হাইকোর্টে!

নন্দীগ্রাম নিয়ে সম্মুখ সমরে মমতা-শুভেন্দু, আজই শুনানি হাইকোর্টে!


প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট –  2021 এর বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা ভারতবর্ষের কাছে নজরকাড়া বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সতীর্থ শুভেন্দু অধিকারী এই নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে তার অনেক আগেই শুভেন্দু অধিকারীকে জব্দ করতে ভবানীপুর ছেড়ে তিনি এবার নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হবেন বলে জানিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়‌। পরবর্তীতে একসময়কার সতীর্থ তথা প্রাক্তন নেত্রীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শুভেন্দু অধিকারীকে বেছে নেয় ভারতীয় জনতা পার্টি। জমে ওঠে লড়াই।

তবে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের দিন সারা রাজ্যের পাশাপাশি বাড়তি নজর ছিল নন্দীগ্রামের দিকে। প্রথমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জয়লাভ করেছেন বলে খবর আসলেও পরবর্তীতে সন্ধের সময় জানানো হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়‌ নয়, নন্দীগ্রামে জয়লাভ করেছেন বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী। আর এরপর থেকেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে গোটা ঘটনায় কারচুপি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। সারা রাজ্যে 213 টি আসন পেয়ে দল ক্ষমতা দখল করলেও, নন্দীগ্রামের পরাজয় কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না তৃনমূলের কর্মী-সমর্থকরা।

এমনকি নন্দীগ্রামে পরাজিত হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হলে, তাকে ক্রমাগত কটাক্ষ করতে শুরু করেছিলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই প্রথম কেউ পরাজিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, এমন মন্তব্য করতেও দেখা গিয়েছিল তাকে‌। আর বর্তমানে বিভিন্ন ইস্যুতে যখন সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী, তখন তার বিধানসভা কেন্দ্র নন্দীগ্রামের রায় নিয়ে রীতিমত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বস্তুত গত 2 মে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। তারপর কেটে গিয়েছে বেশ কিছুদিন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সেই নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের গণনায় কারচুপি সহ একাধিক অভিযোগ তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামলা দায়ের যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সূত্রের খবর, আজ শুক্রবার বেলা দুটোর সময় কলকাতা হাইকোর্টে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দায়ের করা এই মামলার শুনানি হবে। স্বাভাবিক ভাবেই টানটান উত্তেজনা তৈরি হয়েছে বাংলার রাজনৈতিক মহলে। অনেকে বলছেন, নন্দীগ্রামের ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ধীরে ধীরে এই নিয়ে প্রতিবাদ আর দেখা যাচ্ছিল না। যার ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামের রায় মেনে নিয়েছেন বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এদিন নন্দীগ্রামের ঘটনা সহ একাধিক বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে তার এই ইলেকশন পিটিশন দাখিল করার ঘটনাতেই স্পষ্ট যে, তিনি নন্দীগ্রাম নিয়ে শেষ দেখে ছাড়বেন।

এদিন এই প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, “নির্বাচন নিয়ে নিয়ে যদি কারো অভিযোগ থাকে, তাহলে একমাত্র উপায় হচ্ছে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক আইন অনুসারে ইলেকশন পিটিশন করা। নিয়ম অনুযায়ী, ভোট প্রক্রিয়া শেষে দেড় মাসের মধ্যে পিটিশন জমা দিতে হয় মুখ্যমন্ত্রী আগেই বলেছিলেন, এই নিয়ে তার অভিযোগ আছে। নিয়ম মেনেই মুখ্যমন্ত্রী দেড় মাসের মধ্যে সেই পিটিশন জমা দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী যে ঘোষণা করেছিলেন, সেই প্রতিশ্রুতি মত তিনি কাজ করেছেন।”

এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রাম নিয়ে মামলা দায়ের করার সাথে সাথেই রীতিমত উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে শুভেন্দু অধিকারী বিরোধী দলনেতা হিসেবে প্রতি মুহূর্তে নানা বিষয়ে সরব হচ্ছেন সরকারের বিরুদ্ধে। তবে ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর শুভেন্দু অধিকারীর জয়লাভ মেনে নিতে পারেনি তৃণমূলের একাংশ।

প্রথমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জয়ী  দেখানো হলেও পরবর্তীতে 1900 ভোটে জয়লাভ করিয়ে দেওয়া হল শুভেন্দু অধিকারীকে। আর তা নিয়ে তৃণমূলের পক্ষ থেকে কারচুপি করার অভিযোগ তোলা হয়। এমনকি স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ব্যাপারে চক্রান্তের অভিযোগ করেন। তবে এতদিন এই বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি শাসক দলকে। কিন্তু এবার অবশেষে সেই নন্দীগ্রাম নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে রীতিমত মামলা দায়ের করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে এই ব্যাপারে মামলা দায়ের করায় ভারতীয় জনতা পার্টি যথেষ্ট চাপে পড়ে গেল বলেই মনে করছেন একাংশ। যদিও বা এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ গেরুয়া শিবির। এদিন এই প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনের গোপন ব্যথা প্রকাশ হয়েছে আদালতে যাওয়ার ফলে। ভারতীয় গণতন্ত্রের নিয়ম মেনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেরেও মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারী বিরোধী দলনেতা হয়েছেন। এটাই গণতন্ত্রের নিয়ম। এটা মেনে নেওয়া উচিত।”

একইভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনগণের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে গিয়েছেন বলে তাকে কটাক্ষ করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় প্রধান অমিত মালব্য। তবে গোটা বিষয়টি কে নিয়ে পরিস্থিতি যে জায়গায় গিয়ে দাঁড়াক না কেন, নন্দীগ্রাম নিয়ে বিস্তর খেলা যে এখনও বাকি রয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেকের মনেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, হঠাৎ করে কেন নন্দীগ্রাম নিয়ে এইরকম সক্রিয় হয়ে উঠলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?

তবে একাংশ বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই নন্দীগ্রাম নিয়ে সক্রিয় হতেন এবং এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন, এটা জানাই ছিল। অবশেষে সেই ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা গেল তাকে। যার ফলে শুভেন্দু অধিকারী এবং ভারতীয় জনতা পার্টি কিছুটা হলেও চাপের মুখে পড়ে গেল বলেই মনে করছেন একাংশের। যদিও বা সমস্ত কিছুই এখন আদালতের শুনানির ওপর নির্ভর করছে। তাই আজ কলকাতা হাইকোর্টে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দায়ের করা নন্দীগ্রাম নিয়ে মামলার শুনানিতে কি উঠে আসে, সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!